ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ পৃথিবীতে প্রতিদিন কতনা আজব আজব ঘটনাই না ঘটছে। কিন্তু এসব ঘটনার কয়টি আমাদের চোখে পড়ে? আজ আপনাদের সামনে কয়েকটি আজব ঘটনা তুলে ধরবো।
উড়ন্ত কাঠবেড়ালি!
আমরা গাছের ডালে কত কাঠবেড়ালি দেখে থাকি। এই কাঠবেড়ালি বিড়াল প্রজাতির প্রাণী। তবে এদের দৈহিক গঠন একেবারেই আলাদা। তাছাড়া এরা বাস করে গাছে। গাছের ডালে ডালে সারাদিন ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ করে ঘুরে বেড়ায়। কাঠবেড়ালির লেজ তার শরীরের চেয়ে বড় এবং লোমশ। আবার এমন কিছু কাঠবেড়ালি আছে যারা বাতাসে ভাসতে পারে। আর এ ক্ষমতা তারা এ গাছ থেকে ও গাছে যাবার জন্য ব্যবহার করে। এ জন্য কাঠবেড়ালিরা কোনও গাছের উঁচু ডাল থেকে লাফিয়ে পড়ে তারপর শূন্যে ভাসতে থাকে। পানিতে নৌকার যেমন দিক ঠিক করা হয় হালের সাহায্যে, তেমনি কাঠবেড়ালিরা তাদের মোটা লোমশ লেজটাকে হালের মতোই ব্যবহার করে। বাতাসে ভেসে থাকার সময় দিক ঠিক করার কাজে লাগায় লেজকে। এভাবে কিছুদূর গিয়ে কাঠবেড়ালি কাছের যে কোনও স্থানে নেমে আসে। আর এ সময় কাঠবেড়ালির পায়ের নিচের নরম মাংসপিণ্ড তাকে সাহায্য করে নির্বিঘ্নে নেমে আসতে।
লেমুরের ওড়াউড়ি
আমরা চিড়িয়াখানায় যেসব প্রাণী দেখতে পায় তার অনেক প্রাণীর নামই আমাদের মুখস্থ থাকে না। যেসব প্রাণী ভেসে ভেসে পথ পাড়ি দিতে পারে তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে লেমুর। লেমুর আসলে বানর প্রজাতির প্রাণী। দৈহিক গঠনের কারণেই তাকে বানর থেকে পুরোপুরিই আলাদা দেখায়। লেমুরের পা চারটা আর লেজ একটা। তবে ব্যতিক্রমটা হচ্ছে এদের কানের নিচ থেকে ছড়িয়ে দু’হাতের কবজি আর দুই পায়ের গোড়ালি হয়ে লেজের আগা পর্যন্ত একটু বড় চামড়া জোড়া দেয়া আছে। আর এ কারণেই এরা অনেকটা পাখির মতোই বাতাসে ভেসে থাকতে পারে। লেমুররা থাকে গাছে গাছে। উঁচু উঁচু গাছ থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে সে চার পা আর লেজ সব ছড়িয়ে দেয়। আর তখন যে চামড়াটা দিয়ে এসব যুক্ত থাকে সেই চামড়াটা যায় ছড়িয়ে । লেমুর তখন হয়ে যায় একটা লোমঅলা ঘুড়ির মতো। বাতাসের গতিকে কাজে লাগিয়ে ঘুড়ির মতোই সে শরীরটা শূন্যে ভাসিয়ে উড়ে বেড়াতে পারে বেশ কিছুটা পথ। তারপর আবার নিজের ইচ্ছেমতো যেখানে খুশি সেখানে নেমে পড়ে।
সবচেয়ে ছোট বাদুড়
বাদুড় আমরা অনেক দেখেছি কিন্তু এতো ছোট বাদুড় আমরা মনে হয় দেখিনি। পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুদ্র বাদুড় যার দৈর্ঘ্য মাত্র ১.১ ইঞ্চি থেকে ১.৩ ইঞ্চি। আমাদের হাতের আঙুলের একটি কড়াতেই এ বাদুড় এঁটে যাবে। একটির ওজন ১.৭৫ গ্রাম থেকে ২ গ্রাম মাত্র। এর নাম দেয়া হয়েছে কিটিস্ হগ-নউজ ব্যাট। অর্থাৎ কিটির শূকর-নাকওয়ালা বাদুড়। বাদুড়টি দেখতে বাদামি কিংবা ধূসর বর্ণের। পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুদ্র এ বাদুড় পাওয়া যায় থাইল্যান্ডের টেনাসেরিম পার্বত্য অঞ্চলে (Tenasserim Hills), সাই ইয়ক জেলায় (Sai Yok District) এবং কাঞ্চনবুরি (Kanchanaburi) প্রদেশে।
সবচেয়ে বড় বাদুড়
আমরা এতো বড় বাদুড়ও বোধহয় কখনও দেখিনি। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জাতের বাদুড় যার পাখার দৈর্ঘ্য ১.৬৫ সে.মি. বা ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি পর্যন্ত। এর নাম দেয়া হয়েছে বিসমার্ক ফ্লাইং ফক্স। অর্থাৎ বিসমার্ক উড়ন্ত শিয়াল। আকারে কুকুর বা শিয়ালের কাছাকাছি বলেই এর এমন নামকরণ। বাদুড়টি দেখতে শিয়ালের মতো বাদামি বর্ণের এবং এর গলায় কমলা রঙয়ের কেশর রয়েছে। পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ এ বাদুড় এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। তাই বিসমার্ক ফ্লাইং ফক্স বাদুড়ের নমুনা যুক্তরাষ্ট্রের প্রাকৃতিক ইতিহাস জাদুঘরে (Museam of Natural History) সংরক্ষিত আছে। আপনি কখনও গেলে দেখে আসতে পারেন।
যে লেকে গোসল নিষিদ্ধ
এই আজব লেকটির অবস্থান তুরস্কে। দেশটার অবস্থানও অবশ্য আজব। কারণ এর এক অংশ এশিয়া মহাদেশে, আর বাকি অংশ ইউরোপ মহাদেশে। আজব দেশেরই এক আজব জায়গা এ পামুক্কালে। এখানকার লেকগুলো দেখলে সত্যি আশ্চর্য হয়ে যেতে হয়। সাদা লবণের বিশাল বিশাল স্তরে ছোট্ট ছোট্ট জলাধার। সেগুলোতে আবার মানুষ আগে ঘটা করে গোসলও করতে যেত। তারা বিশ্বাস করত ওখানে গোসল করলে শরীর ভালো থাকে। এখনও বিষয়টি অনেকেই বিশ্বাস করে। তবে এখন আর ওখানে কেউ গোসল করতে পারে না। কারণ পরিবেশ দূষণ রুখতে তুরস্ক সরকার লেকগুলোতে দর্শনার্থীদের গোসল নিষিদ্ধ করেছে। ছোট লেকগুলোর যেন কোন ক্ষতি না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক নজর রাখা হয়। এই লেকগুলো প্রায় ২০ লাখ বছরের পুরনো। তুরস্ক ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ। বহু বছর আগে এখানে একটা বড় রকমের ভূমিকম্পে মাটিতে অনেক ফাটল সৃষ্টি হয়েছিল। আর তখন সেখান দিয়ে মাটির নিচের ক্যালসিয়াম কার্বনেটে ভর্তি গরম পানি বেরিয়ে এসে উপরে জমা হতে লাগল। কিন্তু পানি গরম হলে তো বাষ্প হয়ে যায়। সেই পানিও বাষ্প হয়ে গেল। থেকে গেল শুধু ক্যালসিয়াম কার্বনেট। ক্যালসিয়াম কার্বনেট হল একধরনের লবণ। সেই লবণগুলো জমে জমে তৈরি হল লেকগুলোর কাঠামো। আর তারপর সেগুলো যখন শক্ত হয়ে গেল তখন সেখানে বৃষ্টির পানি জমে সৃষ্টি হল এই আজব লেকগুলো। আপনি তুরস্কে গেলে এই লেকগুলো দেখতে ভুলবেন না।