ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সারাদেশে জমি-জমা নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। এক জমি দুবার বা তারও অধিক ব্যক্তির নিকট বিক্রি করা হয় এমন নজিরও কম নেই। সেই দীর্ঘকালের সমস্যার এবার সমাধান হতে যাচ্ছে। দলিল নিবন্ধন পদ্ধতি আধুনিকায়ন ও ডিজিটাল করার কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বর্তমান সরকার।
জানা গেছে, এ কর্মসূচির আওতায় চলতি বছর তিনটি জেলার ৫টি সাবরেজিস্ট্রি অফিস ডিজিটাল করা হচ্ছে। এ কর্মসূচি সফল হলে আগামী বছরের মে মাসে সারাদেশের সাবরেজিস্ট্রি অফিসগুলোকে এর আওতায় আনা হবে। এজন্য প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যয় ধরা হয়েছে ২০ কোটি টাকা। আইজিআর ফান্ড (নিবন্ধন অফিসের নিজস্ব ফান্ড) থেকে এ অর্থ ব্যয় করা হবে।
আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি ডিজিটালাইজেশন করা হচ্ছে। এর ফলে জমি রেজিস্ট্রি যেদিন হবে সেদিনই রেজিস্ট্রি দলিলের কপি পাওয়া যাবে এবং একটা কপি ডাটাবেজ হবে। এ ব্যাপারে বর্তমানে একটি পাইলট কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। মন্ত্রী আরও বলেন, প্রথম পর্যায়ের এ কর্মসূচি সফল হলে পুরো দেশের রেজিস্ট্রি অফিসে ডিজিটাল পদ্ধতি চালু করা হবে। তিনি বলেন, এ কর্মসূচির জন্য ২১টি প্রতিষ্ঠান তাদের আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন। এর মধ্যে ৭টি প্রতিষ্ঠানকে যাচাই-বাছাই করে টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে।
জানা যায়, দলিল নিবন্ধন পদ্ধতি আধুনিকায়ন ও ডিজিটাল করার জন্য প্রাথমিকভাবে ৫টি সাবরেজিস্ট্রি অফিস এবং তিনটি রেকর্ড রুমকে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে নেয়া হয়েছে। এগুলো হল- ঢাকার উত্তরা, তেজগাঁও, কুমিল্লা সদর, যশোর সদর ও ঢাকা সদর সাবরেজিস্ট্রি অফিস। এ কর্মসূচির জন্য আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের নেতৃত্বে ন্যাশনাল স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে আইন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব অরূপ কুমার গোস্বামীকে। এই স্টিয়ারিং কমিটির অধীনে কর্মসূচি বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১১ সদস্যবিশিষ্ট এ কমিটির প্রধান করা হয়েছে আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবকে (মতামত)।
এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে আগ্রহ ব্যক্তকরণের আবেদন চাওয়া হয়। ২১টি প্রতিষ্ঠান এ ব্যাপারে আগ্রহ ব্যক্ত করে। যাচাই-বাছাই শেষে স্টিয়ারিং কমিটি ৭টি প্রতিষ্ঠানকে চূড়ান্ত করে তাদের কাছ থেকে প্রস্তাব আহ্বান করা হয়েছে। অর্থাৎ এ প্রতিষ্ঠানগুলো টেন্ডার দাখিল করতে পারবে। তারা আর্থিক প্রস্তাবসহ কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাব পাঠাতে পারবে। এই সাতটি প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রস্তাব চেয়ে অনুরোধপত্র পাঠানোর প্রক্রিয়া চলমান আছে। আশা করা যাচ্ছে, আগামী আগস্ট মাসে ৫টি সাবরেজিস্ট্রি অফিস এবং ৩টি রেকর্ড রুমের দলিল নিবন্ধনকরণ ও আধুনিকায়নের আওতায় আসবে।
স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য সচিব অরূপ কুমার গোস্বামী বলেন, এ প্রকল্পের জন্য কত টাকা লাগবে, তা ৭টি প্রতিষ্ঠানের দরপত্র পাওয়ার পরই বোঝা যাবে। তবে আশা করছি, নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা যাবে। জানা গেছে, এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এ টাকা আইজিআর ফান্ডের। আইজিআর অফিস ইতিমধ্যে এই ২০ কোটি টাকা ছাড় করেছে। ৫টি সাবরেজিস্ট্রি অফিস ও তিনটি রেকর্ড রুম আধুনিকায়ন করতে এ টাকা ব্যয় করা হবে। এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করলে আগামী বছরের মে মাসে সারাদেশের সাবরেজিস্ট্রি অফিসগুলো এর আওতায় আসবে। এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন হলে রেজিস্ট্রি দলিলের কপি সেদিনই পাওয়া যাবে এবং এক কপি চালান বইয়ে থেকে যাবে।
উল্লেখ্য, রেজিষ্ট্রি অফিস আগের আমলের সেই সিস্টেম চালু থাকায় ব্যাপক আকারে দুর্নীতি হয়ে থাকে। তাছাড়া এক জমি ২/৩ বার বিক্রির নজিরও রয়েছে। এই ডিজিটাল পদ্ধতি চালু হলে সেসব সমস্যা আর থাকবে না বলে ভুক্তভোগীরা মনে করছেন।