ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ রমজানের মধ্যে সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনী হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন ও খুনিরা গ্রেফতার না হলে ঈদের পর দেশব্যাপী বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা।
একই সঙ্গে সাংবাদিক নেতারা এটিএন বাংলার ও এটিএন নিউজের টকশোসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যেসব সাংবাদিক যোগ দিচ্ছেন তাদের ‘বিশ্বাসঘাতক’ মন্তব্য করে বলেছেন, আমাদের আহ্বান অমান্য করে ওই দুটি টিভি টকশোতে যারা অংশ নিচ্ছেন, তাদের বয়কট, অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হবে। তারা বলেছেন, মাহফুজুর রহমান লন্ডনে দেয়া বক্তব্যে সাগর-রুনীর চরিত্র হননের চেষ্টা করার পরই কেবল সাংবাদিক সমাজ মাহফুজুর রহমানের বিচার দাবি করেছেন। তার আগে এ ব্যাপারে কোন বক্তব্য দেয়া হয়নি।
সাগর-রুনীসহ সব সাংবাদিক হত্যার বিচার, পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধ ও মুক্ত স্বাধীন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠার দাবিতে সমপ্রতি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে সাংবাদিক নেতারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি ও বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালিত হয়। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাধারণ সম্পাদক ও যুগান্তরের বিশেষ প্রতিনিধি সাজ্জাদ আলম খান তপু এ প্রতিবাদ সমাবেশের উপস্থাপনা করেন।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, আমাদের আন্দোলন কোন সরকারের বিরুদ্ধে নয়, এ আন্দোলন সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন বন্ধ ও তাদের নিরাপত্তার জন্য। যেসব সাংবাদিক এই গণআন্দোলনের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা ও আমাদের ঐক্যে ফাটল ধরাবার চেষ্টা করবেন, তারা সাংবাদিক সমাজে নিন্দিত হয়ে ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষেপিত হবেন। সাগর-রুনীর খুনিদের গ্রেফতার দাবি আদায়ে আমরা রমজান মাসে বিভিন্ন স্তরে মতবিনিময় সভা করব। ঈদের পর ঘোষণা করা হবে কঠোর আন্দোলন। তিনি বলেন, মাহফুজুর রহমানের কথার সঙ্গে কাজের মিল দেখতে চাই। তার মালিকানাধীন দুটি চ্যানেলে এর প্রতিফলন দেখা হবে।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, নিহত সাগর-রুনীর বাসার দারোয়ানের মোবাইল সেট ডিবি কর্মকর্তার ভাইয়ের কাছে পাওয়া গেছে। বিষয়টি তদন্ত করে ওই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে আইজিপির প্রতি তিনি আহ্বান জানান। যে দু’জন সম্পাদক সাংবাদিকদের আহ্বান উপেক্ষা করে এটিএন বাংলার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়েছেন, তাদের ভূমিকার সমালোচনা করে তিনি বলেন, আমরা প্রয়োজনে তাদের বয়কট করব।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমানের ব্যাপারে সাংবাদিক সমাজ আগে কোন কথা বলেনি। তিনি লন্ডনে রুনীর চরিত্র নিয়ে প্রথমে আপত্তিকর মন্তব্য ও হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে তার কাছে প্রমাণ আছে দাবি করার পরই সাংবাদিকরা তার গ্রেফতার ও বিচার দাবি করেছে। তিনি বলেন, মাহফুজুর রহমানের হয়ে যারা দালালি করার চেষ্টা করছেন তিনি তাদের সতর্ক করে দেন।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা বলেন, সাংবাদিক সমাজের চেয়ে কি খুনিরা বেশি শক্তিশালী? রমজানের পর আন্দোলনে ভিন্নমাত্রা যোগ হবে। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শাবান মাহমুদ বলেন, আমরা রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি। কিন্তু হত্যাকারীরা এত ক্ষমতাধর যে তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না। এটিএন বাংলার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে যোগদানকারী দুটি পত্রিকার বর্তমান ও সাবেক সম্পাদককে একঘরে করে রাখার হুমকিও দেন তিনি।
উল্লেখ্য, ১১ ফেব্রুয়ারি রাজাবাজারের নিজ বাসায় খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনী। প্রথমদিকে এ মামলা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করলেও এখন তদন্ত করছে র্যাব।
কিন্তু দীর্ঘ ৬ মাস অতিক্রান্ত হলেও এখনও কেও গ্রেফতার হয়নি। এমনকি পুলিশ খুনের রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি। দুজন ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিক হত্যার বিচার যদি না হয়, তাহলে দেশের সাধারণ মানুষের বিচার কিভাবে হবে এ ধরনের প্রশ্ন এখন সকলের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে।
আইন তার নিজ গতিতেই চলবে এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। কিন্তু সেই চলার পথ যদি এতোটা শ্লো হয় তাহলে দেশের মানুষ কোথায় যাবে? সাংবাদিকরা সব সময় লিখে থাকেন ‘বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে’, এই বাক্যটিও যেনো আজ অকেজো অথর্ব হয়ে পড়েছে।