দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ পশুদের প্রতি অনেকের দুর্বলতা রয়েছে। অনেকেই কুকুর পালন করেন। এর কারণ হলো কুকুর খুব প্রভুভক্ত হয়ে থাকে। আজ রয়েছে এমনই কুকুরের প্রেমে পড়া এক ব্রিটিশ দম্পতির গল্প!
কুকুরের প্রেমে পড়ে শেষ পর্যন্ত ভারতে থেকে গেলেন এক ব্রিটিশ দম্পতি! জানা যায়, এক ব্রিটিশ দম্পতি মাত্র ১০ দিনের জন্যে বেড়াতে এসেছিলেন ভারতের কেরালায়, তবে তারা আর ফিরে যাননি নিজ দেশে। ভারতের কেরালার একদল কুকুরের পেছনে তারা খরচ করেছেন নিজেদের জমানো ৩ লাখ পাউন্ড!
নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই চাকরি হতে অবসরে যান এই দম্পতি। কথা ছিল তারা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াবেন।
জানা যায়, গ্র্যান ক্যানারিয়ার পর তারা বেড়ানোর জন্য ভারতে দু’সপ্তাহের একটি হলিডে বুক করেন। ম্যারি ও স্টিভ মাসক্রফ্ট ঠিক করলেন যে, তারা যাবেন দক্ষিণ ভারতের কেরালা রাজ্যের কোভালাম শহরটিতে।
তারা সেখানে গেলেনও, তবে সেখান থেকে ফিরে এলেন না। তাদের চোখে পড়লো দুটি কুকুর। প্রাণীটির প্রতি তাদের মায়া এতোই তীব্র হয়ে উঠলো যে এই দম্পতি কুকুর দুটোকে দেখাশোনা করা শুরু করলো।
আশ্চর্যের বিষয় হলো এরপর কেটে গেছে ১০টি বছর! এখন তাদের রয়েছে একশোটির মতো কুকুর। প্রাণীদের জন্যে তারা একটি ক্লিনিকও পরিচালনা করছেন। বেওয়ারিশ কুকুর দেখভালের জন্য তারা একটি সংস্থাও গড়ে তুলেছেন। যে সংস্থার কাজ হলো রাস্তা হতে বেওয়ারিশ অসুস্থ কুকুর তুলে এনে তাদেরকে খাওয়ানো, টিকা দেওয়া ইত্যাদি সেবাযত্ন করা।
সংবাদ মাধ্যমকে এক প্রতিক্রিয়ায় ম্যারি বলেছেন, “আমি কোনোদিন ভাবিনি আমার জীবনে এরকম কিছু হবে। আমরা তো শুধু বসে বসে, বই পড়ে ও খেয়ে জীবন কাটিয়ে দিতে পারি না। আমি মনে করি কেওই এরকম করে জীবন সাজাতে চায় না।”
স্টিভ জানান, তিনি অবসর নেওয়ার আগে ব্র্যাডফোর্ড শহরে একটি ব্যবসাও চালাতেন। তিনি বলেন, “আমাদের খুব বেশি আর্থিক সচ্ছলতাও ছিল না। আবার খুব একটা অসুবিধাও ছিল না আমাদের। তাই অল্প বয়সেই আমরা অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। ইউরোপে ঘুরে বেড়ানো ছাড়া আমাদের তেমন কোনো পরিকল্পনাই ছিল না।”
এই দম্পতির প্রথম লক্ষ্য ছিল চাকরি বাকরি ছাড়াই জীবনটা কেমন চলে সেটা পরখ করে দেখার। স্টিভ বলেন, “আমরা তো মাত্র দু’সপ্তাহের জন্যে ভারতে বেড়াতে এসেছিলাম। তবে এসেই দুটো কুকুরের বাচ্চার প্রেমে পড়ে গেলাম!”
স্টিভ বলেন, “তারপর তো সবকিছুই বদলে গেলো। দুটো কুকুর হতে এক সময় ৬টি কুকুর হলো। তারপর ১২টি। এভাবে বাড়তেই লাগলো কুকুরের সংখ্যা।”
কিছুদিন পর এমন অবস্থা হলো যে, এই দম্পতি কোভালাম শহরের বেওয়ারিশ কুকুর খুঁজে বের করা শুরু করলেন। আরম্ভ করলেন ঘুরে ঘুরে কুকুরদের খাওয়ানোর কাজও। একটা সময় কুকুরের সংখ্যা এতো বেড়ে গেলো যে তাদের জন্যে খাবার দাবার নিয়ে যেতে বড় একটি রিকশা ভাড়া করতে হলো তাদেরকে।
সেজন্যে একজন রিকশাচালককেও অনেকটা স্থায়ীভাবেই ভাড়া করলেন তারা। যার নাম কুক্বু। বর্তমানে তিনি কুকুর ক্লিনিকের ম্যানেজার।
আস্তে আস্তে শহরের সবাই তখন জেনে গেলো এই দম্পতির কথা। রাস্তা হতে তারা তো কুকুর কুড়িয়ে আনতেনই, লোকজনও এই দম্পতির বাড়ির দরজার সামনে কুকুর নিয়ে এসে রেখে যেতে শুরু করলেন। স্টিভ জানান যে, একবার তারা একটি প্লাস্টিকের ব্যাগের ভেতরে ৬টি কুকুরের বাচ্চা পান।
ক্রমেই এভাবে বদলে যেতে থাকলো এই দম্পতির জীবন। দিন রাত তাদের কাজ হয়ে গেলো রাস্তা হতে অসুস্থ কুকুর বাড়িতে নিয়ে আসা, খাওয়ানো ও তার চিকিৎসা করা।
এই দম্পতি খুব সকালে ঘুম হতে উঠে পড়তেন। তারপর তারা কুকুরগুলোকে গোসল করাতেন, খাবার দিতেন, স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেখেন ইত্যাদি।
প্রতিদিন সকাল ১১টা হতে দুপুর ৩টা পর্যন্ত এতো গরম পড়ে, বেশিরভাগ দিনই গড় তাপমাত্রা পৌঁছায় ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও উপরে, সেসময় কুকুরগুলোও একটু ঘুমায়। ৪টার পর আবার শুরু হয় খাওয়া-দাওয়ার পর্ব।
কুকুর পাগল এই দম্পতি বলেছেন, কুকুরের অসুখ-বিসুখ কোভালামে কোনো রকম সমস্যা নয়। শুরুতেই তাদেরকে টিকা দেওয়া হয়।
কুকুর পাগল এই দম্পতি আরও বলেছেন, কেরালার এসব কুকুরের পেছনে তারা নিজেদের জমানো ৩ লাখ পাউন্ড ইতিমধ্যেই খরচ করে ফেলেছেন। বর্তমানে অর্থ সংগ্রহের জন্যে তারা মাঝে-মধ্যেই অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করেন। বহু পরিবার, বন্ধু ও পর্যটক তাদেরকে অর্থ দিয়ে সাহায্য করছেন।
এই দম্পতি যখন কুকুরদের নিয়ে কাজ করতে শুরু করেন তখন কোভালামের সমুদ্র সৈকত এলাকাটিতে ৬৩৩টি কুকুর ছিল। ২০১৭ সালে তাদের সংখ্যা কমে দাঁড়ায় মাত্র ৮৯।
তাদের কাজ হলো যেসব কুকুর সুস্থ হয়ে যায় তাদেরকে জীবাণুমুক্ত করে আবার রাস্তায় ছেড়ে দেওয়া। শুধুমাত্র অসুস্থ কুকুরকেই নিয়ে আসা হয় তাদের আশ্রয় কেন্দ্রে।
স্টিভ বলেছেন, “আমি আমার আত্মীয় স্বজনকে সব সময় মিস করি, মিস করি বন্ধুদেরও, ইংলিশ ব্রেকফাস্ট, খাবার দাবারও আমি মিস করি। আরও মিস করি পাব ও ফুটবল নিয়ে টিভি অনুষ্ঠান ম্যাচ অব দ্যা ডে!”
স্টিভ বলেছেন, “তবে এর ভালো কিছু দিকও রয়েছে। যেমন- এখানে আমাকে কখনও গাড়ির কাঁচে জমা বরফ পরিষ্কার করতে হয় না। ঠাণ্ডায় ঘর গরম করার জন্যে বাড়তি বিলও আমাকে গুণতে হয় না।”
“৬০ বছর বয়সে যেমন থাকা যায়, ঠিক সেই হিসেবে আমি সত্যিই খুশি ” স্টিভের অভিব্যক্তি।
সত্যিই পশুদের বিশেষ করে রাস্তার কুকুরকে এই দম্পতি যেভাবে যত্ন করে রোগমুক্ত করছেন তার প্রতিদান তারা দুনিয়া ও পরলোকেও পাবেন তাতে সন্দেহ নেই। পশুর প্রতি এই মমত্ববোধ কয়জনের থাকে?