১৯৯২ সালের আইসিসি বিশ্বকাপের পড়ে বড় কোনো টুর্ণামেন্টে ইংল্যাণ্ডের মুখোমুখি হয়নি দক্ষিণ আফ্রিকা। সেই ১৯৯২ সালেও ইংল্যাণ্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনালে হেরে গিয়েছিলো দক্ষিণ আফ্রিকা। হেরেছিলো ১৯৯৯ বিশ্বকাপের সময় দূর্দান্ত ফর্মে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকাও। বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে আরও দুবার উঠেছিলো দক্ষিণ আফ্রিকা ২০০৩ এবং ২০১১ বিশ্বকাপে এবং যথারীতি হার। বড় মঞ্চে প্রোটিয়ারা সবসময়ই ভেঙে পড়ে এমনই দেখে আসছে ক্রিকেট বিশ্ব, ফলস্বরুপ তাদের দেয়া হয়েছে “চোকার” উপাধি। যদিও তারা এটা অস্বীকার করে থাকে, কিন্তু গতকাল ইংল্যাণ্ডের বিপক্ষে ৭ উইকেটে হারের পর দলের কোচ গ্যারী কারস্টেন নিজেও বলেছেন, “দলের ভেতর কিছু একটা আছে, যেটা প্রয়োজনের সময় তাদের জ্বলে উঠতে বাধা দেয়!”
ক্রিকইনফোকে কোচ বলেছেন, “আমার ধারণা আমরা খেলাটায় চোক করেছি। আমি জানি এটা খুবই ভীতিকর একটা শব্দ কিন্তু আপনারা এতেই অভ্যস্ত। কিন্তু আমরা এটা নিয়ে দলের ভেতর কথা বলেছি, নিজেদের মতামত প্রকাশ করেছি, কিন্তু মাঠে গিয়ে আমরা আমাদের আত্মবিশ্বাস ধরে রাখতে পারিনি। ইংল্যাণ্ডের বোলিং অবশ্যই ভালো হয়েছে কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমরা ৮০ রানেই ৮ হারিয়ে বসার মতো কোনো দল!”
“আমাদের উচিত ছিলো নিজেদের সর্বস্ব উজাড় করে খেলা, অতীতে কি হয়েছে সেসবের দিকে একদমই নজর না দেয়া, কিন্তু উলটো আমরা অতীতের পথেই হেঁটেছি। আমি ঠিক জানিনা, দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে কিছু অজানা রহস্য আছে যেটা তাদের নকআউট পর্ব থেকে একদমই বেরোতে দিচ্ছে না, এটাকে কি বলবো? Dark mist বা অন্ধকার অধ্যায়?”
টসে জিতে প্রথম ওভারেই শুণ্য রানে কলিন ইনগ্রামকে ফিরিয়ে দিয়ে দিনের শুভ সূচনা করেন জেমস এন্ডারসন। পরের ওভারেই ফিনের বলে ফিরে যান হাশিম আমলাও! অধিনায়ক ডি ভিলিয়ার্সও ৯ বল খেলে শুণ্য রানে আউট হয়ে যান ব্রডের বলে। ৪১ বলে ৩০ রান করা রবিন পিটারসেনকে ফিরিয়ে দিয়ে আবারও ইংলিশ শিবিরে উল্লাস এনে দেন জেমস এন্ডারসন। একটা পর্যায়ে ৮০ রানে ৮ উইকেটে পরিণত হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। সেখান থেকে ডেভিড মিলার এবং ক্লেইনভেল্ডট এর নবম উইকেটে ৯৫ রানের জুটি দক্ষিণ আফ্রিকাকে এনে দেয় ১৭৫ রানের স্বল্প সংগ্রহ। ক্লেইনভেল্ডটকে কট বিহাইন্ড আউট করেন ব্রড। পরের বলেই টটসোবেকে আউট করলে ৩৮.৪ ওভারে ১৭৫ রানে অলআউট হয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
দক্ষিণ আফ্রিকা দলে ত্রাস ছড়িয়েছেন স্টুয়ার্ট ব্রড এবং জেমস ট্রেডওয়েল ৩টি করে উইকেট নিয়ে। অন্যদিকে শীর্ষ দুই ব্যাটসম্যানকে জলদি ফিরিয়ে দিয়ে বোলিংয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন জেমস এন্ডারসন। এছাড়াও ফিন নিয়েছেন হাশিম আমলা’র প্রয়োজনীয় একটি উইকেট।
রান তাড়া করতে নেমে ৪১ রানের ভেতর কুক এবং বেলকে দক্ষিণ আফ্রিকা ফিরিয়ে দিতে পারলেও এরপর তৃতীয় উইকেট জুটিতে জোনাথন ট্রট এবং জো রুট প্রোটিয়া বোলারদের শাসন করেন ব্যাট হাতে। এ দুজনের ১০৫ রানের জুটি ইংলিশদের ফাইনাল নিশ্চিত করে। রুট ৪৮ রানে ডুমিনি’র বলে বোল্ড হলেও ট্রট ৮৪ বলে ৮২ রানে অপরাজিত থাকেন। ৩৭.৩ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ১৭৯ রান তুলে ৭ উইকেটের জয়ে ফাইনালে উঠে যায় ইংল্যাণ্ড।
৭ ওভারে মাত্র ১৯ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেবার কারণে জেমস ট্রেডওয়েল পান ম্যান অব দ্য ম্যাচের স্বীকৃতি।
অবশ্য দক্ষিণ আফ্রিকা’র এই পরাজয়ের পেছনে অনেকে উপযুক্ত যুক্তি হিসেবে দাঁড় করাচ্ছেন পূর্ণ শক্তি’র আফ্রিকাকে না পাওয়াকে! তাঁদের মতে এই দলের বোলিংয়ে নেই ইঞ্জুরি আক্রান্ত ডেল স্টেইন অথবা মরনে মরকেল যেটা তাদের সাহস যোগাবে। ব্যাটিংয়ে নেই গ্রায়েম স্মিথ যিনি টুর্ণামেন্ট শুরুর আগেই ইঞ্জুরিতে পরেছেন। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে খেলছেন না জ্যাক ক্যালিসও! কারস্টেনের মতে, “এটা অতিরিক্ত চাপের ম্যাচ। আমি আমার সিনিয়র খেলোয়াড়দের মিস করেছি, তাদের অভিজ্ঞতায় হয়তো ফলাফল অন্যরকম হতে পারতো!”