দি ঢাকা টাইমস্ রিপোর্ট ॥ সমপ্রতি সরকারি জায়গা জমি বেহাত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নামজারির নাম করে নানা অপকৌশলে সরকারি খাস জমি ব্যক্তি মালিকানায় করে ফেলা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
দেশের রেলওয়ের প্রচুর জায়গা সাধারণ পাবলিক ভোগ দখল করছে। সেসব জায়গা উদ্ধারের রেলের কোনও উদ্যোগ নেই। সমপ্রতি রেল মন্ত্রী বলেছেন, রেলের বেদখল জায়গা উদ্ধার করা হবে। কিন্তু শুধু রেল নয় সরকারি অন্যান্য খাস জমিও বেদখল হয়ে যাচ্ছে। জানা যায়, নামজারির ফাঁক-ফোকরে হাজার হাজার কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি চলে যাচ্ছে ক্ষমতাধর ব্যক্তিমালিকের হাতে। সরকারের খাস, ওয়াকফ এস্টেট এমনকি পরিত্যক্ত সম্পত্তিও ব্যক্তির নামে নামজারি করে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) দফতরের একশ্রেণীর কর্মচারীর সঙ্গে স্থানীয় প্রভাবশালীরা যোগসাজশ করে এ সম্পত্তি গ্রাস করছে। বিশেষ করে রাজধানীর বাইরের এসি (ল্যান্ড) অফিসগুলোতে নামজারির ক্ষেত্রে ভূমির মালিকানাস্বত্ব যথাযথভাবে যাচাই না করা এবং সরেজমিন তদন্ত করে স্কেচ ম্যাপ সংযুক্ত না করায় ঘটছে জালিয়াতির ঘটনা।
জানা যায়, অফিসে বসে সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে নামজারি, জমাখারিজ ও জমা একত্রীকরণ কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ায় সরকারি সম্পত্তি হাতছাড়া হচ্ছে। সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে এ ধরনের একটি অভিযোগ এলে দুদক অভিযোগটি খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে। সেই সঙ্গে কোন কোন প্রভাবশালী ব্যক্তি নামজারির ফাঁক-ফোকর বের করে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ লুটে নিচ্ছেন, তাদেরও একটি তালিকা তৈরির কাজ চলছে। সূত্র জানায়, ১৯৮৪ সালের ১৮ জুলাই জারিকৃত পরিপত্রে নামজারি প্রক্রিয়াকে বিচার বিভাগীয় কার্যক্রম হিসেবে গণ্য করা হয়। ভূমি সম্পত্তির নামজারি, জমাখারিজ ও জমা একত্রীকরণ কার্যক্রম রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ১৪৩ ধারা অনুসারে রাজস্ব কর্মকর্তা এ আইনের ১১৬ ও ১১৭ ধারায় গ্রহণ এবং পঞ্চদশ অধ্যায়ের বিভিন্ন ধারায় নিষ্পত্তি করেন। ভূমির মালিকানাস্বত্ব প্রতিষ্ঠা, হস্তান্তর তথা ভূমি ব্যবস্থাপনায় নাম জারি বা জমি পৃথকীকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জেলা প্রশাসকের পক্ষে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাঠপর্যায়ে নামজারির কাজটি সম্পন্ন করেন। নামজারি প্রক্রিয়ায় তহসিলদাররা ভূমি পৃথকীকরণ বিষয়ে প্রাথমিকভাবে সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর নামজারি ও জমাভাগের প্রস্তাব প্রেরণ করেন। প্রস্তাবে জমির দাগ নম্বর, খতিয়ান নম্বর, আবেদিত জমির পরিমাণ উল্লেখ করেন। উল্লেখিত জমির অবস্থান, মালিকানাস্বত্ব, জমিতে সরকারি কোন স্বার্থ রয়েছে কিনা ইত্যাদি বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এসি (ল্যান্ড) অফিসের সার্ভেয়ার প্রস্তাবটি একই অফিসের কানুনগোর কাছে উপস্থাপন করেন। কানুনগো আবেদিত ভূমির মালিকানাস্বত্ব যাচাই করে নথিটি নামজারি সহকারীর মাধ্যমে সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে উপস্থাপন করেন। পরে সহকারী কমিশনার (ভূমি) নথির সারমর্ম বুঝে প্রস্তাবটি মঞ্জুর কিংবা নামঞ্জুর করেন।
অভিযোগ থেকে জানা যায়, ঢাকা জেলায় অবস্থিত ১০টি সার্কেল ছাড়া আর কোথাও সরকারি এ নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ হচ্ছে না। সার্ভেয়ার এবং কানুনগোকে পাশ কাটিয়ে স্কেচ ম্যাপ সংযুক্তি ছাড়াই মাত্র তিনজন কর্মকর্তার সিল-স্বাক্ষরেই সম্পন্ন করা হচ্ছে নামজারি, জমাখারিজ ও জমা একত্রীকরণ প্রক্রিয়া। এর ফলে আবেদিত জমিতে সরকারি স্বার্থ জড়িত রয়েছে কিনা, জমিটি আবেদনকারীর দখলে রয়েছে কিনা ইত্যাদি প্রশ্নের কোন মীমাংসা না দিয়েই খাস জমি, ওয়াকফ এস্টেট, গোরস্থান, ঈদগাহ এবং পরিত্যক্ত সম্পত্তিরও নামজারি হয়ে যাচ্ছে। এতে করে সরকারের সম্পত্তি চলে যাচ্ছে প্রভাবশালীদের পকেটে। এমনও শোনা যায়, তহসিল অফিসে শুধুমাত্র টাকা দিলেই তারা সেখানে বসেই নামজারি সম্পন্ন করেন। এক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী জমির দখল বা জমির কাগজ পত্র বা মূল রেজিস্ট্রি কাগজ পর্যন্তও দেখা হয় না বলে একটি সূত্রে জানা যায়। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলে সরকারি কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি যেমন বেহাত হবে না, তেমনি দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে।