দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বলিভিয়ার বর্তমান অবস্থা এতোটায় শোচনীয় যে জনগণ ভাত পায় না। অথচ দেশটির প্রেসিডেন্ট ঘুমান ২৯ তলা ভবনে! দেশটির ১ কোটি ১২ লাখ মানুষের মধ্যে ৪০ শতাংশই চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করেন।
লাতিন আমেরিকার সবচেয়ে দরিদ্রতম দেশ হলো এই বলিভিয়া। দেশটির ১ কোটি ১২ লাখ মানুষের মধ্যে ৪০ শতাংশই চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করেন। ৩ শতাংশ মানুষের আয় দৈনিক ৩ ডলারেরও কম! তিন বেলা ঠিকমতো খাবার জোটে না অনেকের। বেশিরভাগ মানুষেরই মাথা গোঁজার ঠাঁইও অতি সাধারণ কক্ষে।
অথচ সেই দেশের প্রেসিডেন্ট ঘুমান ২৯ তলা ভবনে অট্টালিকায়! রাজধানী লাপাজের বেশিরভাগ ভবনই নিচু। শহরের কেন্দ্রে সম্প্রতি নির্মাণ করা হয়েছে ২৯ তলাবিশিষ্ট গগনচুম্বী এক বিশাল অট্টালিকা। শহরের যেকোনো প্রান্ত হতেই দেখা যায় এই অট্টালিকা।
এটিই দেশটির প্রেসিডেন্টের নতুন বাসভবন। বিলাসবহুল এই ভবনেই বসবাস করছেন ল্যাটিন আমেরিকার অন্যতম দরিদ্র দেশটির প্রেসিডেন্ট ৫৮ বছর বয়সী ইভো মোরালেস। প্রেসিডেন্টের এমন বিলাসিতার বিরুদ্ধে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ ক্রমেই দানা বাঁধছে।
সম্প্রতি গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিক্ষোভের মধ্যেই গত সপ্তাহে ভবনটি উদ্বোধন করেন প্রেসিডেন্ট মোরালেস। ১২০ মিটার উঁচু এই ভবনটি। এই ভবনটির নাম দেওয়া হয়েছে পিপলস’গ্রেট হাউস। যার স্থানীয় নাম কাসা গ্রান্ডে ডেল পুয়েলবো।
১৬ শতকের পুরনো ঔপনিবেশিক আমলের সরকারি ভবনগুলোর কাছে নির্মাণ করা হয়েছে ৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার খরচ করে লাপাজের কেন্দ্রে এই ভবনটি। ‘পোড়া প্রাসাদ’ বলে খ্যাত ভবনগুলোকে বর্তমানে জাদুঘর করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
এদিকে মোরালেস ও তার সমর্থকরা বলেছেন, বেদনাদায়ক ঔপনিবেশিক অতীত থেকে বের হয়ে আসতেই এটি নির্মাণ করা হয়েছে। এই ভবন নতুন এক বলিভিয়ার প্রতিনিধিত্ব করবে। অর্থাৎ এই ভবনটিই নাকি প্রেরণা যোগাবে! এটি উন্নয়নের স্বপ্ন বাধবে বলিভিয়ার মানুষের মনে। তবে দেশের আপামর জনগণ মনে করছেন, জনগণের অর্থে এটা প্রেসিডেন্টের এক বিলাসবহুল ও অহংকারী প্রকল্প ছাড়া আর কিছুই নয়।
দেশটির স্থানীয় পত্রিকা পেগিনা সিয়েতে সম্প্রতি ফাঁস করে দিয়েছেন যে, নতুন বাসভবনের ১ হাজার ৬৮ বর্গমিটার মাপের একটি সোয়িট একাই উপভোগ করবেন দেশটির প্রেসিডেন্ট মোরালেস। ব্যক্তিগত লিফট হতে শুরু করে জিম, ম্যাসেজ কক্ষ আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে এই সোয়িটে। এই খবর প্রকাশের পর ক্ষোভে ফেটে পড়েছে দেশটির জনগণ।
সরকারের যোগাযোগমন্ত্রী গিসেলা লোপেজ এই খবর অস্বীকার করেননি তবে নিশ্চিতও করেননি। তিনি বলেছেন যে, এই ভবনটি ‘দেশের জনগণের স্বার্থে’ই নির্মাণ করা হয়েছে। ২০১৪ সালে তৃতীয়বারের মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে নিজের জন্য এই বাসভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। ১২ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকার পরও ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে চতুর্থবারের জন্য লড়াই করতে চান প্রেসিডেন্ট মোরালেস। যে কারণে তার এই নতুন বাসভবন জনগণের ক্ষোভের প্রধান কারণে পরিণত হয়েছে।
দেশটির বিরোধী নেতা স্যামুয়েল দোরিয়া বলেছেন, ভবনটি ক্যান্সার হাসপাতাল করা উচিত ছিলো।