দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শূন্য, শূন্য শুধু চারিদিক। হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া রুবা আল খালির সুনশান নীরবতার মাঝে চলেছি সাইকেল নিয়ে। সাইকেল ঠেলে ঠুলে চলতে হয়েছে অনেকটা পথ। মনের কোণে ভেসে উঠা গান একদিকে সমুদ্র আর অন্যদিকে মরুভূমি – যেন মিলে যায় দেশটির সাথে। আর দেশটি হলো সালতানাত অব ওমান।
এখানে রয়েছে পাহাড় , প্রাসাদ, মরুভূমি আর সাগরের মিতালি। যেন দেশটির একই অঙ্গে অনেক রূপ। জাজিরাতুল আরবের মাঝে এমন রূপবৈচিত্র্য আর কোথাও আছে বলে মনে হয় না। সবুজের হাতছানিতে দক্ষিণ পশ্চিমের পাহাড় যখন সেঁজে ওঠে নতুন সাঁজে, নবরূপে প্রকাশ পায় তার আপন রূপ। রুক্ষ পাহাড় ঢেকে যায় সবুজে সবুজে। সময়টা জুন- জুলাইতে। সেসময়েই আবার লু হাওয়া বইতে থাকে দেশের পূর্ব উত্তরাঞ্চলে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় একসময়ের মৎস্যজীবী এবং মরুচারী মানুষের লাইফস্টাইল পাল্টে গেলেও তারা ভুলেনি তাদের পোশাক কেন্দুরা কিংবা ডিসডাসাকে।ওমান গালফ আর আরব সাগর বিধৌত চমকে দেবার মতো এক আরব্য উপদ্বীপ এই সালতানাত অব ওমান। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বিশিষ্ট সাহাবি মাজেন বিন গাদুবা (রা.)-এর স্মৃতিধন্য এই ওমান।
আরব্য রজনীর দিগ্বজয়ী নাবিক সিন্দাবাদের স্মৃতিধন্য এই ওমান। আর এই ওমান সাইকেলে ঘুরে বেড়াব, দেখব ওমানের বিভিন্ন অঞ্চল আর মিশব ওমানীদের সাথে। ভাবতেই শিহরিত হলো মন। আরব সাগরের ভেজা বাতাস রাজধানী মাস্কাটের গা জুড়িয়ে দেয় প্রতিদিন। আর মাস্কাটের আরব সাগরতীরে প্রতিবিকেলে জড়ো হয় ভ্রমণপিপাসু মানুষ। ধাবমান গাড়িগুলো চলে এখানে শাঁ শাঁ করে দুরন্ত গতিতে আর এরই মাঝে রাস্তার পাশ ঘেষে সাইকেল চালাই সতর্কতার সাথে। মনে প্রায়ই শংকা জাগে। রাস্তার ডানপাশ ঘেসে সাইকেল চালানো বেশ বিরক্তিকর।আমাদের দেশে সাইকেল চালাই বামদিকে আর এখানে উল্টোপাশে অর্থাৎ ডানদিক দিয়ে। মরুভূমি এবং পাথুরে পাহাড়ের সংমিশ্রণ আরবের এক চিরায়ত চেহারা। এই পাথুরে পাহাড়ের পাশ ঘেষে চলে গেছে পিচঢালা মসৃণ রাস্তা । উঁচু-নিচু পথ পেরিয়ে যাই পর্যটনের নান্দনিক শহর নাখালের দিকে। সেখানে রয়েছে নাখাল দুর্গ। এবং নাখাল ঝরনা। ঝরনার পানিতে পা কিছুক্ষণ ঢুবিয়ে রাখলে, পা ম্যাসাজ হয়ে যায়। ঝরনার পানিতে ছুটে বেড়ানো ছোট ছোট মাছগুলো পায়ে ঠোকরাতে থাকে যা একধরনের ম্যাসাজের মতো হয়ে যায়। পা ঢুবিয়ে রাখলাম ঝরনার শীতল পানিতে কিছুক্ষণ। পা ম্যাসাজ হয়ে গেল। এবার ছুটলাম রুস্তাকের দিকে। সেখানে রয়েছে হট স্প্রিং বা গরম পানির ঝরনা। রুস্তাকের গরম পানিতে গোসল করার মজাই আলাদা। সারাটা রাস্তা সাইকেল চালানোর ক্লান্তি মুছে গেল মুহূর্তেই। ভূগর্ভের নিচ থেকে অনবরত গরম পানি বের হচ্ছে হট স্প্রিংটিতে।