দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সত্যিই এক বিরল ঘটনা বটে। একজন শিক্ষক ১৯ বছর ধরে সাঁতরে স্কুলে যান! প্রতিদিন সকাল ৯ টায় কোমরে টিউব জড়িয়ে সাঁতরে নদী পার হন তিনি, আর এভাবেই স্কুলে পৌঁছান তিনি!
সংবাদ মাধ্যমের প্রকাশিত এমন একটি খবর ভাইরাল হয়ে গেছে। কারণ একদিন দুদিন নয় দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে তিনি একই পদ্ধতিতে অর্থাৎ পানির মধ্যে সাঁতরে স্কুলে পৌঁছান! প্রতিদিন সকাল ৯ টায় কোমরে টিউব জড়িয়ে সাঁতরে নদী পার হন একজন শিক্ষক, হাতে উঁচু করে ধরা একটি ব্যাগে তার কাপড়চোপড় ও জুতা থাকে। ভারতের কেরালা রাজ্যের মালাপুরাম গ্রামের কাদালুন্দিপুঝা নদীতে এই ঘটনা যেনো এক পরিচিত দৃশ্য। দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে ওই ব্যক্তি একইভাবে একই সময় সাঁতরে পার হন নদী। এই শিক্ষকের নাম আব্দুল মালিক। কেরালার মুসলিম লোয়ার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অংকের শিক্ষক তিনি।
সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত এক খবরে জানা গেছে, চাকরির শুরু হতে আজ পর্যন্ত একদিনও শিক্ষক আব্দুল মালিক স্কুল বাদ দেননি। দরিদ্র পরিবারের ছেলে মালিক শিক্ষক হিসাবে তার কাজ শুরু করেছিলেন সেই ১৯৯৩ সালে। তার বাড়ি থেহতে স্কুলের দুরত্ব ১২ কিলোমিটার দূরে। বাড়ি হতে তার স্কুলে যাওয়ার জন্য রয়েছে দু’টি রাস্তা। একটি বাড়ি হতে বেরিয়ে দু’বার বাস বদল করা। তারপর আবার হাঁটা পথ। আর আরেকটি পথে বাড়ি হতে ১০ মিনিটের হাঁটা পথে স্থানীয় কাদালুন্দিপুঝা নদীর পাড়ে গিয়ে পৌঁছানো। তারপর সেই নদী সাঁতরে ওপারে উঠে হাঁটতে হয় খুব অল্প কিছুটা পথ। তারপর পৌঁছানো যায় কর্মস্থলে। প্রথমদিকে শিক্ষক মালিক বাসে করে স্কুলে যেতেন। একদিন তার স্কুলের অন্য এক শিক্ষকের পরামর্শে নদী পথেই কর্মস্থলে যাওয়ার সহজ পথটা বেছে নেন শিক্ষক মালিক। আব্দুল মালিক সংবাদ মাধ্যমকে জানান, গাড়িতে যেতে হলে বেশির ভাগ দিনই নির্দিষ্ট সময়ে স্কুলে পৌঁছানো সম্ভব হয় না।এতে তার প্রচুর সময়ও ব্যয় হয়ে যায়।
তাই তিনি নদী সাঁতরে স্কুলে যাওয়ার পদ্ধতিই কাজে লাগান। স্কুলে পৌঁছাতে নদীর পাড়ে এসে প্রথমেই তিনি তার পড়নের কাপড় বদল করে তোয়ালে পড়েন। কাপড়গুলো ভরেন প্লাস্টিকের একটি ব্যাগে। এরপর কোমরে টিউব জড়িয়ে এক হাতে ধরা থাকে তার জুতা, অপরদিকে কাপড় চোপড়ের প্লাস্টিক ব্যাগ ও অন্য হাত দিয়ে সাঁতার কাটেন তিনি।
দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে এই নিয়মেই তিনি স্কুলে হাজির হন। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে অন্য কোনও পেশা বা অন্য কোনও স্কুলে যাওয়ার চেষ্টা কখনও করেননি আব্দুল মালিক। তিনি জানিয়েছেন যে, শিক্ষকতা করে তিনি যে বেতন পান তা নিয়েই তিনি খুব খুশী। এতো বছর পর অনেকেই মালিককে বলেন, আপনি এখনতো যুবক নন। তাহলে কেনো এতো কষ্ট করে এভাবে প্রতিদিন সাঁতার কেটে নদী পার হন? এই বিষয়ে মালিকের উত্তর হলো, ‘প্রতিদিন সাঁতার কাটলে নিজেকে অনেক ঝরঝরে ও শক্তিশালী বলে মনে হয়। আমি ঠিক করেছি যে, অবসর নেওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত এভাবেই আমি প্রতিদিন সাঁতার কাটবো’। তিনি মনে করেন, তাতে করে তার শরীর মন দুই-ই ভালো থাকবে।