দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সকলেই চাই কারাগারের ধারের কাছেও না যেতে। অথচ দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষজন সেই কারাবাসকেই স্বেচ্ছায় গ্রহণ করছে। বিষয়টি অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটাই সত্য। দক্ষিণ কোরিয়ার মানষজন তাদের দৈনন্দিন জীবনের গ্লানি থেকে মুক্তি পেতে কারাগারকেই সবচেয়ে শান্তির স্থান হিসেবে বেছে নিচ্ছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে একজন ২৮ বছর বয়সী পার্ক হাই-রির দেওয়া এক সাক্ষাৎকার অনুযায়ী পাওয়া যায়, তিনি প্রতিদিন এত পরিমাণে কাজ করেন যা তার জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। তাই তিনি ৯০ ডলার ব্যয় করে এই জেলে ২৪ ঘন্টার জন্য কারাবাস গ্রহণ করেছেন। দক্ষিণ কোরিয়ার উত্তরপূর্বের হংচিওন এলাকায় অবস্থিত ‘প্রিজন ইনসাইড মি’ নামের এই কারাগারে বিভিন্ন বয়সী মানুষ স্বেচ্ছায় কারাবাস গ্রহণ করছে। এই কারাবাস গ্রহণের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে কিছু সময়ের জন্য ক্লান্তি এবং গ্লানি থেকে নিজেকে বিরত রাখা।
এখানে স্কুল-কলেজের ছাত্র ছাত্রী থেকে শুরু করে প্রায় সকল বয়সী নারী- পুরুষ বন্দি জীবন বরণ করে নিচ্ছেন। এখানে কেউ কোন আদেশ করছে না, নেই কোন কাজের চাপ। যদিও এখানে স্বেচ্ছায় নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে বন্দি জীবন গ্রহণ করা হয়, তবুও এই কারাজীবন অনেক কঠিন। এখানে অন্য বন্দিদের সাথে দেখা করা এবং কথা বলার কোন সুযোগ নেই। খাবার হিসেবে সকালে দেওয়া হয় জাউভাত, দুপুরে সিদ্ধ মিষ্টি আলু এবং ব্যানানা শেক। কোন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করা সম্পুর্ণ নিষিদ্ধ। ঘুমানোর জন্য নেই কোন আরামদায়ক বিছানাও, তাই মেঝেতেই ঘুমাতে হয়। রুমের মধ্যেই রয়েছে ছোট একটি টয়লেট, তবে সেই টয়লেটে কোন আয়না নেই।
এই কারাগারের সহপ্রতিষ্ঠাতা নোহ জি-হিয়াং বলেন, নকল এই কারাগারের পরিকল্পনা তিনি তার স্বামীর কাছ থেকে পেয়েছেন। তিনি একজন প্রসিকিউটর হিসেবে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ১০০ ঘণ্টা কাজ করতেন। তিনি প্রায়ই বলতেন এক সপ্তাহের জন্য নির্জন কারাবাসে গিয়ে বিশ্রাম নিতে পারলে তার জন্য খুব ভালো হতো। দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রযুক্তি নির্ভরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় দিন দিন সকলের মধ্যে ব্যাপক প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হচ্ছে। এর ফলে তারা মানসিকভাবে ব্যাপক চাপের মধ্যে থাকে। এই অধিক প্রতিযোগিতা এবং মানসিক চাপের কারণে মাঝে মাঝেই কিছু মানুষ আত্মহত্যা করছে।
অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কোঅপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এর এক জরিপ অনুযায়ী দক্ষিণ কোরিয়ার বাসিন্দারা প্রতি বছর গড়ে ২,০২৪ ঘণ্টা কাজ করেন। মেক্সিকো ও কোস্টারিকার মানুষদের পর তারাই সবচেয়ে বেশি পরিশ্রম করে। কয়েক দিন এই কারাগার জীবন শেষ করে যখন তারা আবার তাদের কর্ম ক্ষেত্রে ফিরে যায়, তখন তাদের ভাষ্যমতে এই কারাগার প্রকৃতপক্ষে কোন কারাগারই নয়, আসল কারাগার হচ্ছে তাদের সেই কর্ম ব্যস্ততাময় জীবন।