দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ হিমাচল প্রদেশ হলো উত্তর ভারতের একটি ক্ষুদ্রাকায় রাজ্য। দেশটির এই রাজ্যে বছরের নির্দিষ্ট একটি সময় ৪২ দিন কথা বলেন না এই গ্রামের মানুষ!
১৯৭১ সালে হিমাচল প্রদেশ রাজ্য আইন অনুযায়ী ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের অষ্টাদশ রাজ্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এই হিমাচল প্রদেশের মানালির কুলু জেলার গোশাল গ্রাম। এই গ্রামের বাসিন্দারা জানুয়ারি মাসের ১৪ তারিখ হতে ফেব্রুয়ারির ২৫ তারিখ পর্যন্ত এই ৪২ দিন কোনও কথা বলেন না। গোশাল ছাড়াও বুরুয়া, শানাগ এবং কুলাং গ্রামেও এই প্রথা রয়েছে বিদ্যমান।
হিমাচল প্রদেশের মাঝাচ, পালচান, কোঠি, রুয়ার গ্রামের বাসিন্দারাও বিশ্বাস করেন যে, এই ৪২ দিন নীরবতা পালনের বিষয়।সোলাং ও রুয়ার মতো গ্রামে আবার চুপ থাকার সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ থাকে গ্রামদুটির কৃষিকাজও!
মাঘ মাসে মকর সংক্রান্তির সময় হতে এই রীতিটি চালু হয়। তবে কেনো এই ৪২ দিন একটানা চুপ করে থাকেন এই গ্রামগুলোর বাসিন্দারা? সেই প্রশ্ন আসতেই পারে।
ওই গ্রামগুলোর কারও কারও মতে, এই সময় গভীর ধ্যান করে ঈশ্বর নাকি স্বর্গের পথে ফিরে যান। আর স্বর্গে যাওয়ার পথে যাতে অসুবিধার মুখে না পড়েন, তাই নাকি এই চল বা রীতি চালু রয়েছে। তবে এই বিষয়টি নিয়ে পৌরাণিক মতও রয়েছে।
বলা হয়েছে, বিপাশা নদীর পাশে ঋষি গৌতম নাকি তপস্যা করছিলেন। তার তপস্যা যাতে ভঙ্গ না হয়, তাই নাকি এই ব্যবস্থা করা হয়। এখানে বহু প্রাচীন একটি মন্দিরও রয়েছে। মকর সংক্রান্তির দিন লোহ্রিতে পূজার্চনার পর বন্ধ করে দেওয়া হয় ওই মন্দির।
গৌতম ঋষি ছাড়াও বেদব্যাস এবং কাঞ্চন নাগের মূর্তিও রয়েছে এই মন্দিরটিতে। মানালির গোশাল গ্রামের এই মন্দিরটি এই সময় পর্যটকদের জন্যও বন্ধ থাকে। মন্দিরে কোনও রকম পূজা করা হয় না বলে জানিয়েছেন এখানকার পুরোহিত।
ফেব্রুয়ারির ২৫ তারিখ পার হলে আবার মন্দির খোলে। এই বিষয়টি নিয়েও রয়েছে একটি মিথ। সেই সময় যদি একটা ফুল পড়ে থাকে মন্দিরের মেঝেতে, তা হলে সেটি গ্রামগুলোর জন্য শুভ বলেই ধরে নেওয়া হয়।
সেখানে যদি কয়লার টুকরো পড়ে থাকে, তাহলে ধরে নেওয়া হয় যে গ্রামে অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে ৫ দিনের মধ্যেই।
অবশ্য বিজ্ঞানীরা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলেছেন, বরফ ঢাকা এই জায়গাগুলিতে রোদের আভাস মিললে তবেই খোলে মন্দির। এতোটাই বেশি বরফ পড়ে এই জায়গাগুলোতে যে, শীতকালে কর্মক্ষমতাই থাকে না স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে। বেশিরভাগ সময়টাই প্রচণ্ড ক্লান্ত লাগে। তাই কথা বলার বা বাড়ি হতে বেরোনোর সুযোগ প্রায় থাকে না।
তবে চুপ করে বসে থাকলেও গ্রামের মানুষ এই সময় হেডফোনে গান শোনেন, বেড়াতে যান, বাড়ির কাজ-কর্ম করেন। কোনও পর্যটককেই কথা বলার কোনো সুযোগই দেন গ্রামের বাসিন্দারা।