দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ এক বাঙালি বিজ্ঞানী এবার ক্যানসার নিরাময়ে নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন! যা ফুসফুসের ক্যানসারের চিকিৎসায় অত্যন্ত কার্যকর এক রাসায়নিক।
ক্যানসার নিরাময়ে বাঙালি বিজ্ঞানী নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন বলে দাবি করেছেন আমেরিকার ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক। যা ফুসফুসের ক্যানসারের চিকিৎসায় অত্যন্ত কার্যকর এক রাসায়নিক।
ক্যানসার শব্দটির সঙ্গে আমরা কম বেশি সকলেই পরিচিত। ক্যানসারের কথা শুনলে আমরা সবাই আঁতকে উঠি। অনেকেরই ধারণা, একবার ক্যানসার হওয়া মানেই নিশ্চিত মৃত্যু। এই ধারণা একেবারেই অমূলকও নয়। তবে আধুনিক বিজ্ঞানের কল্যাণে এখন ক্যানসার মানেই অবধারিত মৃত্যু নয়। ফুসফুসের ক্যানসারের চিকিৎসায় অত্যন্ত কার্যকর এক রাসায়নিক আবিষ্কার করেছে বলে দাবি করেছেন আমেরিকার ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক। ওই প্রতিষ্ঠানের দাবি হলো, তাদের তৈরি রাসায়নিকটি প্রচলিত কেমোথেরাপির দ্রবণের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করলে কার্যকর ফলাফল পাওয়া যেতে পারে। ক্যানসার কোষগুলি অতি দ্রুত বৃদ্ধি রোধ করতে পারে ওই আবিষ্কৃত রাসায়নিকটি।
এই গবেষণায় সংযুক্ত রয়েছেন একজন বাঙালি গবেষক। শর্মিষ্ঠা দে নামে ওই গবেষক দাবি করেছেন, ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকে দুই বছর গবেষণা করে ফুসফুস ক্যানসারের চিকিৎসার কার্যকর পদ্ধতি খুঁজে পাওয়া গেছে। যারা ফুসফুসের স্মল সেল ক্যানসারে ভুগছেন (ফুসফুস ক্যানসার), নতুন এই চিকিৎসা পদ্ধতি তাদের ক্ষেত্রেই কার্যকর। তাদের গবেষণাপত্র সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যানসার রিসার্চের জার্নালে।
ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (হু) কিংবা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী মারণ ব্যাধি হিসেবে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ক্যানসার। বিভিন্ন ক্যানসারের মধ্যে ফুসফুসের ক্যানসারে মৃত্যুহার বিশ্বে সবচেয়ে বেশি।
বাঙালি গবেষক শর্মিষ্ঠা জানিয়েছেন, ফুসফুস ও অন্য ছোট ক্যানসার আক্রান্ত কোষ অতি দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং এই ধরনের ক্যানসার শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়েও পড়ে খুব দ্রুত। যে কারণে রোগীকে বাঁচানো বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। বিগত প্রায় ৩ শতক ধরেই একমাত্র কেমোথেরাপিই ছিল এই ক্যানসারের প্রধানতম ওষুধ। যদিও কেমোথেরাপি ক্যানসারকে পুরোপুরিভাবে নির্মূল করতে পারে না। শর্মিষ্ঠার দাবি করেছেন, কেমোথেরাপির এমন একটি পদ্ধতি তাদের গবেষাগারে উদ্ভাবন করা হয়েছে, যা অতিশয় কার্যকর একটি পদ্ধতি।
শর্মিষ্ঠাদের গবেষণাপত্রে জানানো হয় যে, যে-সব কেমোথেরাপি বর্তমানে চালু রয়েছে, তারা মূলত টিউমার ইনিশিয়েটিং কোষগুলিকে মারতে পারে না। ওই টিউমার ইনিশিয়েটিং কোষগুলিই পরবর্তীতে কেমোথেরাপির প্রতিরোধক হয়ে দাঁড়ায়। গবেষকরা এমন একটি রাসায়নিক খুঁজে পেয়েছেন, যা এই স্মল সেল ক্যানসারে টিউমার ইনিশিয়েটিং কোষগুলিকে খুব সহজেই মারতে সক্ষম। গবেষকরা দেখেছেন, সাধারণত প্ল্যাটিনাম-নির্ভর যে-কেমোথেরাপি সিসপ্ল্যাটিন ব্যবহার হয়ে থাকে, তারসঙ্গে তাঁদের আবিষ্কৃত সিবিএল০১৩৭ রাসায়নিক প্রয়োগ করলে সেটি অনেক বেশি কার্যকর হবে। গবেষণাপত্রে দাবি করা হয়েছে যে, সিবিএল০১৩৭ ও সিসপ্ল্যাটিন একসঙ্গে নির্দিষ্ট ইঁদুরের দেহে প্রয়োগ করায় তাদের দেহে টিউমারের বৃদ্ধি কমেছে। তারা অনেক বেশি দিন বেঁচেছে।
শর্মিষ্ঠা বলেছেন, আমাদের উদ্ভাবিত চিকিৎসা পদ্ধতি সাদা ইঁদুরের উপর কার্যকর হয়েছে। এই থেরাপি মানবদেহে প্রয়োগ করা যায় কি না, তা নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চালানো হচ্ছে। এটি সফল হলে এই থেরাপি কার্যকর ওষুধ হিসেবে গণ্য হবে এবং বহু রোগীর প্রাণ বাঁচাতে সাহায্য করবে।
ক্যানসার চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, চিকিৎসা করেও এই স্মল সেল ক্যানসারের রোগীকে গড়ে এক বছরের বেশি কখনও বাঁচানো যায় না। এই ক্যানসার দ্রুত মস্তিষ্ক ও অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে। এই স্মল সেল ক্যানসার নিয়ন্ত্রণ করা গেলে তা হবে সত্যিই আমাদের কাছে এক গুরুত্বপূর্ণ খবর। এই স্মল সেল ক্যানসারকে বাগে আনা গেলে দারুণ একটি বিষয় হবে। আয়ু বাড়বে এই রোগে আক্রান্তদের। টাটা ক্যানসার হাসপাতালের ডিরেক্টর মামন চ্যান্ডি জানিয়েছেন, আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা দরকার। এই চিকিৎসা পদ্ধতি মানবদেহে কতোটা সফল হবে, এখন শুধু সেটিই দেখার বিষয়।