নবগঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আসলে কে হারলো সে প্রশ্ন এখন জনমনে। আজমত না আওয়ামীলীগ?
কারণ আজমত উল্লা এলাকার বেশ জনপ্রিয় নেতা। আর তাই তাকে এভাবে এতো বিপুল ভোটের ব্যবধানে হারতে হবে সেটি যেনো কেওই ভাবতে পারছেন না। আওয়ামীলীগের সামপ্রতিক সময়ের কিছু কর্মকাণ্ড এতোটাই জনমনে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে যে যার জবাব জনগণ দিলো ভোটের মাধ্যমে। দেশের ৫টি সিটি করপোরেশন নির্বাচনেই একই পরিণতি ভোগ করলো ক্ষমতাসীন দল।
জাতীয় নির্বাচনের আর বেশি দেরি নেই। যদি নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় তাহলে ভবিষ্যতে দেশের জনগণ কাদের রায় দেবেন তা প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেছে জনগণের কাছে। তাছাড়া আমাদের দেশের রাজনীতি এমনিতেই একপেশে ধারায় চলে। একবার আওয়ামীলীগ আরেকবার বিএনপি এই ধারা বিদ্যমান দেশ স্বাধীনের পর থেকেই। অন্তত একানব্বই এর পর থেকেতো এই ধারা অব্যাহত রয়েছে। কারণ ক্ষমতায় থাকলে তখন অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। যেগুলো জনগণের বিপক্ষে চলে যায়। আর সে কারণে ৫ বছর ক্ষমতায় থাকলে জনগণের কাছে এমনিতেই পঁচে যায় ক্ষমতাসীনরা। এটাই আমাদের দেশের বাস্তবতা। তাছাড়া ক্ষমতায় যারা থাকেন তারা সব সময়ই ধরাকে সরা জ্ঞান করেন। জনগণের কথা তারা ঘুণাক্ষরেও ভাবতে চান না। এটি শুধু আওয়ামীলীগ নয়, বিএনপির জন্যও সমানভাবে প্রযোজ্য। অতিতে আমরা তাই দেখেছি।
তাই শুধু গাজীপুর আর অন্য সিটি করপোরেশন নয়, জাতীয় নির্বাচনেও একই অবস্থা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। শেয়ার কেলেঙ্কারী, পদ্মা সেতুসহ বেশ কয়েকটি ইস্যু আওয়ামীলীগের জন্য বুমেরাং হবে। তবে বিএনপি এবার বড় সমস্যা হচ্ছে যুদ্ধাপরাধী বিষয়ে। জামায়াতের সঙ্গে থাকা নিয়ে জনমনে বেশ ক্ষোভ রয়েছে। তবে শেষমেষ কি হয় তা দেখতে হলে আরও সময় অপেক্ষা করতে হবে।
আশা যাক গাজীপুর প্রসঙ্গে। আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান এ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নাকি কথা দিয়েছিলেন যে করেই হোক গাজীপুর তাকে এনে দেবেনই। দিতে তো পারলেন না। এমন পরাজয়ের গ্লানি তাকে বইতে হবে অনেকদিন। তিনি হয়তো বলবেন, ভোটের দূরত্ব তো কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন। গাজীপুর দখলে তোফায়েল আহমেদের কৌশলগুলো ব্যর্থ হওয়ায় দলের ভেতরেই এখন কোণঠাসা তিনি। নির্বাচনের আগে তিনি গাজীপুরকে দ্বিতীয় গোপালগঞ্জ হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন। আর এখন বিপুল ভোটে হেরে যাওয়ার কারণে সেই ‘গোপালগঞ্জ’কে তিনি বিতর্কিত করে ফেললেন। ওয়ান ইলেভেনে তার কপাল পুড়েছিল। সংস্কারবাদী হওয়ার অভিযোগে তাকে দলের শীর্ষ ফোরাম থেকেও বাদ দেন শেখ হাসিনা। এ নিয়ে কত সমালোচনা হয় দেশী-বিদেশী নানা মহল থেকে। কিন্তু শেখ হাসিনা তার সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন। মাঝখানে মন্ত্রীর অফার দেয়ার পর তোফায়েল আহমেদ নিজেই তা প্রত্যাখ্যান করেন। এতে দলনেত্রী আরও ক্ষুব্ধ হন। এই যখন অবস্থা তখন চার সিটি নির্বাচনে দায়িত্ব পান তোফায়েল আহমেদ। ঘুরে বেড়ান সর্বত্র। নানা কৌশলও গ্রহণ করেন তিনি। ফল অনুকূলে না আসায় গণভবন বৈঠকে গাজীপুরকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেন। একাধিক বৈঠকে তিনি বলেন, কিছু পদক্ষেপ নিলেই আজমত উল্লাহ জয় পাবেন। গোয়েন্দা রিপোর্টকে হাস্যকরও বলেন। তিনি যুক্তি দেখান গাজীপুর আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। মান্নান থেকে আজমত উল্লাহ ভাল প্রার্থী। সর্বশক্তি নিয়োগ করলে জয় পেতে অসুবিধা হবে না। তোফায়েল আহমেদ জানেন না সরকারের জনপ্রিয়তা একদম তলানিতে। কোন কূটকৌশলেই কাজ হবে না। টাকা আর মাসলম্যান দিয়ে যে নির্বাচন হয় না আরেকবার প্রমাণিত হয়েছে গাজীপুরে।
যা হোক অবস্থা এখন যেদিকেই যাক না কেনো। দেশের ৫টি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সূত্র ধরে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগকে নতুন করে ভাবতে হবে। জনগণের কাছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার যে অঙ্গীকার করেছিল নির্বাচনের সময় সেটিও আদোতে বাস্তবায়ন হয় কিনা সেটিই এখন দেখার বিষয়।