দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ধেয়ে আসা অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ফনী’। ভারতের পুরিতে ২০০ কিলোমিটার বেগে আঘাত হেনেছে এই ঘূর্ণিঝড়টি। বাংলাদেশে আজ (শুক্রবার) সন্ধ্যা ৬টা হতে রাতের যে কোনো সময় ঘূর্ণিঝড় ‘ফনী’ আঘাত হানবে।
এর গতিপ্রকৃতি বিশ্লেষণ করে আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে যে, আজ (শুক্রবার) সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ খুলনা উপকূল হয়ে বাংলাদেশে আঘাত হানবে। তখন পুরো দেশই ঘূর্ণিঝড়ের আওতায় থাকবে। আঘাত হানার সময় সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসসহ ১০০-১২০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়ার সম্মুখীন হতে পারে বাংলাদেশ।
মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখানোর পর সচিবালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটির সভায় এ কথা জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপতরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ।
আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, আজ সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ পুরো বাংলাদেশ ঘূর্ণিঝড়ের আওতার মধ্যে থাকবে, এই সময়টা অত্যন্ত ক্রিটিক্যাল।
তিনি বলেন, এ সময় যারা উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাস করেন তারা সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসসহ উচ্চগতির বাতাস, দমকা ঝড়ো হাওয়ার সম্মুখীন হবেন। এই সময়ে সবাইকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে হবে, ঘূর্ণিঝড় শেল্টারে থাকতে হবে।
আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুব বিক্ষুব্ধ রয়েছে। যে কারণে মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৪ (চার) নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৭ (সাত) নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা ও তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতার মধ্যে থাকবে।
চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৪ (চার) নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৬ (ছয়) নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর ও তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৬ (ছয় ) নম্বর বিপদ সংকেতের আওতার মধ্যে থাকবে।
অপরদিকে কক্সবাজার সমূদ্র বন্দরকে ৪ (চার) নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় এবং অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, বরগুনা, চাঁদপুর, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা ও তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪ হতে ৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে বলে আশংকা করা হয়েছে।
এই ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা জেলা সমূহ ও তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ এবং চরসমূহে ভারি হতে অতি ভারি বর্ষণসহ ঘন্টায় ৯০ হতে ১১০ কি. মি.বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
এদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণপ্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেছেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সব রকম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে, আমরা মোকাবিলা করতে পারবো, প্রাণিসম্পদও রক্ষা করতে পারবো। আজ (শুক্রবার) সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দোয়া করার আহ্বান জানিয়েছেন ত্রাণপ্রতিমন্ত্রী।
ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে, ১৯ উপকূলীয় জেলায় ৫৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে ইতিমধ্যেই প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নির্দেশনার সঙ্গে সঙ্গেই তারা মানুষদের ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসবে। উপকূলীয় অঞ্চলে ১৯ জেলায় তিন হাজার ৮৬৮টি আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে। বেশিরভাগ আশ্রয়কেন্দ্রই প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়।