দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মানুষের প্রতি মাঝে মধ্যেই ভালোবাসা দেখিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষকে রক্ষার করার ঘটনা আমরা প্রায়ই দেখে থাকি। এবার কুকুরের প্রতি মানুষের বিরল ভালোবাসার এক কাহিনী উঠে এসেছে সংবাদ মাধ্যমগুলোতে!
কিছুদিন আগে ট্রেনের নীচে পড়ে পিছনের দু’টি পা চলে গিয়েছিল ছোট্ট এই কুকুরছানাটির। চিকিৎসকরা কিছুই করতে পারেননি। তবে হাল ছাড়েননি এক ব্যক্তি। গত তিন মাস ধরে চিকিৎসা করে পথকুকুরটিকে শুধু প্রাণে বাঁচিয়েছেন তা নয়, তার জন্য বানিয়েছেন আস্ত একটি ‘ওয়াকিং ট্রলি’! দু’চাকাওয়ালা সেই ট্রলি নিয়েই এখন মহানন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে ৫/৬ মাস বয়সী কুকুর ‘তৈমুর’।
সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়, গত ৭ জানুয়ারি ভারতের ইছাপুর রেল স্টেশনের কাছে ট্রেনের নীচে পড়ে গিয়েছিল তৈমুর। তখন তার বয়স মাত্র দেড় মাস। পিছনের দু’টি পা-ই কাটা পড়ে যায় তার। ব্যারাকপুর পশু হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে পায়ে অস্ত্রোপচার করা হলেও সে বাঁচবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দেয়।
তারপর উদ্ধারকারীরা খবর দেন শ্যামনগরের বাসিন্দা প্রসেনজিৎ গোস্বামীকে। গত ৩৫ বছর ধরে ওই এলাকায় রাস্তায় পড়ে থাকা পশু-পাখিদের চিকিৎসা করে সুস্থ করে তোলাই হলো প্রসেনজিতের এক নেশা। গুরুতর জখম তৈমুরকে বাঁচানোটাই তখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় পেশায় পিয়ানো শিক্ষক প্রসেনজিৎ বাবুর।
প্রসেনজিতের দাবি, ‘‘প্রথমে ওর অবস্থা দেখে আমার তো চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যায়। ব্যারাকপুর হাসপাতাল ওর পায়ে চট সেলাই করার মতো করে সেলাই করেই ছেড়ে দেয়। পায়ের কিছু হাড়ের অংশ বাইরে বেরিয়েও ছিল।’’ ওই অংশ থেকে গ্যাংগ্রিন হওয়ার ভয়ও ছিল।
প্রসেনজিৎনিজেই ওর নিবীড় পরিচর্যা করেন। তিনি দাবি করে বলেন, ‘‘৩৫ বছরের অভিজ্ঞতা হতে এই কাজটি করেছি। ঝুঁকি ছিল, তবে তা না হলে ওকে বাঁচানো যেতো না।’’
তৈমুরকে সুস্থ করতে চিকিৎসায় খামতি রাখেননি তিনি। তবে শুধু চিকিৎসা করেই থেমে থাকেননি বছর একান্ন বয়সের প্রসেনজিৎ। ‘‘আড়াই মাস পর যখন ও অনেকটাই সুস্থ, মনে হয় আর ৫টা বাচ্চার মতো ওকে আমি হাঁটাবো।
কেনোই বা ও একটা ছোট্ট ঘরে বন্দি হয়ে থাকবে?’’— বললেন তিনি। সেই মতো ইন্টারনেট ঘেঁটে কুকুরদের জন্য ওয়াকিং ট্রলির নকশা তৈরি করে ফেলেন তিনি।
তৈমুরের শরীরের দৈর্ঘ্য এবং ওজন সব কিছু দেখে কাঠ, অ্যালুমিনিয়াম শিট, বেল্ট, প্লাইউড দিয়ে নিজেই বানিয়ে ফেললেন আস্ত একটা ওয়াকিং ট্রলি! পিছনের পা দু’টি যাতে মাটিতে ঘষা না খায়, সে জন্য পা রাখার ব্যাগও রাখলেন তাতে। দুর্ঘটনার ঠিক তিন মাস ২২ দিনের মাথায়, ওই ওয়াকিং ট্রলি উপহার দেওয়া হয় তৈমুরকে।
নতুন ট্রলি পেয়ে এখন কেমন রয়েছে তৈমুর? শ্যামনগরের রথীন ভৌমিক বলেছেন, ‘‘ও খুবই উত্তেজিত। তবে চাকা দিয়ে হড়হড় করে এগিয়ে যাচ্ছে বলে একটু ভয়ও পাচ্ছে সে। সে তো এখন ছোট!’’ দুর্ঘটনার পরে রথীনবাবুই তৈমুরকে হাসপাতালে নিয়ে যান।
তারপর থেকে তার আবাসনের একতলাতেই আশ্রয় যায় তৈমুর। ওই আবাসনের কেয়ারটেকার ওর দেখভালও করেন। প্রসেনজিৎ বাবু বলেছেন, ‘‘এক জায়গায় কুঁইকুঁই করে কাঁদতো। সেই জায়গা হতে খুশিমতো হেঁটেচলে বেড়াচ্ছে, এটা যে কী তৃপ্তি তা বলে বোঝানো যাবে না।’’
ছোট্ট তৈমুর বড় হয়ে যাওয়ার পরে কী ঘটবে? প্রসেনজিৎ বাবু জানিয়েছেন, প্রতি ৬’মাস অন্তর তৈমুরের আকারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই ট্রলির মাপ বদলও করে দেওয়া হবে। ভারতের প্রভাবশালী বাংলা দৈনিক আনন্দাবজার পত্রিকায় তৈমুরের এই কাহিনীটি উঠে আসে। আর বিশ্বের লক্ষ কোটি মানুষ জানতে পারে পশুর প্রতি মানুষের এই বিরল ভালোবাসার কথা। যা সকলকেই যেনো অবাক করেছে।