দি ঢাকা টাইমস ডেস্ক।। চাঁদপুর নামটির সাথে নদীর এক অন্যরকম সম্পর্ক মিশে আছে। বাংলার একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র হচ্ছে চাঁদপুর। এই জেলার নামকরণ নিয়ে দুটি ভিন্ন মতভেদ রয়েছে। ঐতিহাসিক জে.এম. সেনগুপ্তের মতে, চাঁদরায়ের নাম অনুসারে এ অঞ্চলের নাম হয়েছে চাঁদপুর। অন্য মতে, চাঁদপুর শহরের (কোড়ালিয়া) পুরিন্দপুর মহল্লার সকলের পরিচিত চাঁদ ফকিরের নাম অনুসারে এ অঞ্চলের নাম রাখা হয় চাঁদপুর। যদিও চাঁদপুর নামটি অনেক পুরনো, কিন্তু ১৯৮৪ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারি চাঁদপুর জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
আজ আমরা আলোচনা করব কিভাবে মাত্র এক দিনেই চাঁদপুরের কিছু দর্শনীয় স্থান ঘুরে আসতে পারবেন। প্রথমেই আপনাকে সিলেক্ট করে নিতে হবে চাঁদপুরের কোথায় কোথায় ঘুরবেন। এখানে নাম করা জায়গা হচ্ছে তিন নদীর মোহনা (পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া) যেখানে আপনি পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর একটি অপরূপ দৃশ্য দেখতে পাবেন, এছাড়া রয়েছে রূপসা জমিদার বাড়ি, শাল্লা চৌধুরী বাড়ি, লোহাগড়া মঠ, বড়কূল জমিদার বাড়ি, বলাখাল জমিদার বাড়ি ও হাজীগঞ্জ বড় জামে মসজিদ।
ভ্রমণের জন্য একটি পুর্নিমার রাত ঠিক করুন। কারণ পূর্ণিমার রাতে নদী ভ্রমণ অনেক আনন্দদায়ক। ভ্রমণ শুরু করবেন রাত ১২ টার দিকে, তাহলে মাত্র ৩ ঘন্টা লঞ্চ ভ্রমণে ভোরেই চাঁদপুর পৌছে যেতে পারবেন। আবার রাতেই সেখান থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হবেন। তাহলে রাতে থাকার জন্য বাড়তি হোটেল খরচও লাগবে না। সেই সাথে পুর্ণিমার রাতে নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।
যাত্রা শুরু করবেন ঢাকা সদর ঘাট লঞ্চ ঘাট থেকে। যেহেতু পূর্ণিমার রাতে নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান, সেহেতু রাত ১২ টায় চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চে উঠতে পারেন। এতে ভোরে সেখানে পৌছে যাবেন। লঞ্চ থেকে নেমে রিক্সা বা অটোতে করে চলে যাবেন বড় স্টেশনে। সেখানে নাস্তা সেড়ে একটু হেঁটেই আপনি পৌছে যেতে পারবেন তিন নদীর মহনাতে। এখানে ইচ্ছে মত লাফালাফি করতে পারেন। চাইলে নদীর পানিতে গোসলটা সেড়ে নিতে পাড়েন। নৌকায় করে কিছুক্ষণ তিন নদী ভিন্ন ভিন্ন রুপ দেখতে পারতেন। এখানে নদীর পাশেই একটি পার্ক রয়েছে। বাচ্চাদের সাথে নিয়ে গেলে সেখানেও একটু ঘুরে দেখতে পারেন। এবার অন্য পর্যটন এলাকাগুলো ঘুরতে চলে যান।
সেখান থেকে চলে আসুন বাস স্ট্যান্ডে। সেখান থেকে ফরিদগঞ্জের বাসে উঠে পড়ুন। ফরিদগঞ্জ থেকে লোকাল সিএনজিতে করে রূপসা জমিদার বাড়ি চলে যান। প্রায় আড়াইশ’ বছর পূর্বে রূপসার খাজুরিয়া এলাকা সিংগেরগাঁও নামে পরিচিতি ছিলো। সেখানে বাইশ সিংহ পরিবার নামে এক হিন্দু পরিবার আধিপত্য বিস্তার করেছিল। তাদের জমিদারির পরিসমাপ্তি ঘটলে আহম্মদ রাজা চৌধুরী নামের এক প্রভাবশালী ব্যক্তি রূপসার জমিদারি শুরু করেন। এখানে পরবর্তীতে মোহাম্মদ গাজী চৌধুরী, আহমেদ গাজী চৌধুরী নামের ব্যক্তিরা জমিদারিত্ব করেন। প্রতিদিন অনেক পর্যটক এই জমিদার বাড়ি দেখতে আসেন। পাশেই রয়েছে অপরুপ সুন্দর এক প্রাচীন মসজিদ। একটু দুরেই রয়েছে নামকরা শাল্লা রাজবাড়ি। তাই আবার সিএনজিতে করে চলে যান শাল্লা রাজবাড়িতে। এখানে কিছুক্ষণ ঘুরে চলে আসুন ফরিদ্গঞ্জ বাজারে।
এবার সেখান থেকে লোহাগড়া মঠ দেখতে রওনা হয়ে যান। ফরিদগঞ্জ উপজেলার লোহাগড় গ্রামে ডাকাতিয়া নদীর পাশে, প্রায় চারশত বছর পূর্বে এখানে ৫টি মঠ তৈরী করা হয়েছিল। বর্তমানে আর ৩ টি রয়েছে। বাকি দুইটি অনেক আগেই ভেঙ্গে গেছে।
এবার ফিরে আসুন হাজীগঞ্জ বাজারে। এখানে রয়েছে হাজীগঞ্জ জামে মসজিদ যা দেশের অন্যতম বৃহত্তম জামে মসজিদ। প্রায় নয়শত বছর পূর্বে আরব থেকে মকিম উদ্দিন (রঃ) নামের একজন বুজুর্গ ব্যক্তি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে এসে বসতি স্থাপন করেন। তার সুবাদেই পরবর্তীতে এখানে প্রতিষ্ঠিত হয় হাজীগঞ্জ জামে মসজিদ। প্রাচীন আমলে তৈরি এই মসজিদটি দেখতে অনেক সুন্দর। এখন আবার বড় স্টেশনের কাছে সেই নদীর মোহনায় ফিরে আসুন। এখানে চাঁদপুরের বিখ্যাত ইলিশ কিনে পাশের কোন দোকানে দিলেই সুন্দর করে ভেজে দিবে। তাই দুপুরের খাওয়াটা চাঁদপুরের ইলিশ দিয়েই হোক। বিকেল পর্যন্ত নদীর চরে ঘোরাফেরা করে সন্ধার দিকে রওনা দিন লঞ্চ ঘাটের দিকে। সেখানে হালকা কিছু খেয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা লঞ্চে উঠে পড়ুন। এখান বাসায় গিয়ে সারাদিনের ক্লান্ত দূর করার জন্য একটি শান্তির ঘুম দিন।