দি ঢাকা টাইমস্ রিপোর্ট ॥ ভেজাল খেতে খেতে মানব দেহে বাসা বাঁধছে নানা ধরণের কঠিন কঠিন রোগ। যত দিন যাচ্ছে ততই পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। এই অবস্থায় আর কত দিন চলবে?
পূর্ব কালের কথা যদি ধরা যায়, তাহলে দেখা যাবে তখন মানুষের মধ্যে রোগ-বালাই ছিল খুবই কম। তখন এতো কঠিন কঠিন রোগের কথা কখনও আমরা শুনিনি। কিন্তু যত দিন গড়াচ্ছে ততই পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটছে। কারণ এখন আমাদের চারপাশে যা কিছু রয়েছে সবই ভেজাল। এখন আপনি সোয়াবিন তেল কিনবেন তাতে ভেজাল। পাম অয়েল দিয়ে সোয়াবিন হিসেবে চালানো হবে। আপনি সরিষার তেল কিনবেন, তাতে পাবেন না সরিষার কোন ঝাজ। এভাবে যা কিছু কিনতে যাবেন তাতেই দেখা যাবে ভেজাল। আপনি যদি তরি-তরকারি কিনতে যান, তাতেও দেখবেন ভেজাল। কারণ সব বিষাক্ত সার দিয়ে ওই সব তরি-তরকারি উৎপাদন করার কারণে সেগুলোও মানব দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হয়ে দেখা দিয়েছে।
আটা ও ময়দার ওজন বৃদ্ধি এবং অধিক লাভের জন্য ভেজালের আশ্রয়
সামপ্রতিক সময়ে জানা গেছে, ধান ভেঙে চাল করার সময় মেশানো হচ্ছে সাদা নুড়ি পাথর। গম ভেঙে আটা করার সময় গমের সঙ্গে মেশানো হচ্ছে নিম্নমানের খেসারি আর ময়দার সঙ্গে মেশানো হচ্ছে ভুট্টার ভুসি। চাল, আটা ও ময়দার ওজন বৃদ্ধি এবং অধিক লাভের জন্যই একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী, মিল মালিক, চাতাল মালিক ও পাইকারি বিক্রেতা এ ভেজাল ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ভেজাল মেশানোর এই অশুভ তৎপরতা থেকে সরকারি উদ্যোগে খোলাবাজারে বিক্রি করা চাল-আটাও মুক্ত নয়। ব্যবসায়ীদের চেয়ে সরকারি উদ্যোগে বিক্রীত চাল ও আটায় আরও বেশি পরিমাণ ভেজাল রয়েছে বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এসব ভেজাল চাল, আটা, ময়দা খেয়ে নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। চাল, আটাসহ সব ধরনের খাদ্যসামগ্রীতে ভেজাল মেশানো একটি নিত্তনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। কারণ এতে শুধু ভেজাল খাদ্যপণ্যের ওজনই বৃদ্ধি পায় না, ক্ষেত্রবিশেষে স্বল্পসময়ে অধিক মুনাফা অর্জনের বড় হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।
এ ব্যাপারে আলাপকালে চাল-আটা, ময়দায় সাদা রঙের নুড়ি পাথর, গমের ভুসি, নিম্নমানের খেসারি, ছোলার খোসা মেশানোর তথ্য স্বীকার করে রাজধানীর কয়েকটি পাইকারি বাজারের একাধিক দোকানদার এবং আড়ৎদার জানান, একজন বিক্রেতা হিসেবে এ ধরনের আত্মঘাতী কাজকে কখনও সমর্থন করা যায় না। কিন্তু ভেজালমুক্ত চাল, আটা, ময়দা বাজারে পাওয়া না যাওয়ায় মানুষকে বাধ্য হয়েই ভেজাল মেশানো চাল, আটা ও ময়দা কিনে খেতে হচ্ছে। বিএসটিআই, সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগ ভেজাল মেশানোর এসব তথ্য অবহিত হলেও তারা জোরালো কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। দেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হলেও দায়ী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে নাম মাত্র জরিমানা করে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। সম্প্রতি চট্টগ্রাম, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, পাবনা ও সিরাজগঞ্জে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়েছেন। এসব অভিযানে চাল, আটা, ময়দায় ভেজাল মেশানোর তথ্য প্রমাণ পেলেও অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
সূত্র জানায়, দেশের উত্তরাঞ্চলের পঞ্চগড়, দিনাজপুর, রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলায় স্থাপিত চাতাল কল মালিক, ফড়িয়া, ফটকা ব্যবসায়ী চক্র, চট্টগ্রামের চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, আমির মার্কেট, বাংলাবাজার, নোয়াখালীর চৌমুহনী চাতাল কল ও গম ভাঙানোর মিলে চাল, আটা, ময়দা প্রক্রিয়াকরণের সময় সাদা নুড়ি পাথর, গম, খেসারি, মসুর ডাল, মুগ ডাল, মটরশুঁটির খোসা মেশানো হয়। বিশেষ করে ধান, গম ভাঙানোর পর চাল, আটা, ময়দার বস্তা সেলাই করার সময় এই ভেজাল মেশানো হয়।
আলাপকালে খুচরা বিক্রেতারা জানান, চাল, আটা ও ময়দায় সঙ্গে মিশিয়ে নুড়ি পাথর, ভুসি অথবা সাদা বালি মিশিয়ে দিলে খুচরা বিক্রেতার পক্ষে কিছুই করার থাকে না। এ ধরনের ভেজাল চাল, আটা ও ময়দা বিক্রি করতে গেলে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের নানারকম হয়রানিতে পড়তে হয়। তাছাড়া এ ধরনের পাথর, বালি মিশ্রিত চাল, আটা, ময়দা খেলে ধীরে ধীরে মানুষকে আলসার, বুক জ্বালাপোড়া, চোখের সমস্যা, গ্যাস্ট্রিক, কোষ্ঠকাঠিন্য ও কিডনিরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা রয়েছে বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগ সূত্র জানিয়েছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের চিকিৎসক ডা. সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, এ ধরনের ভেজাল চাল, আটা-ময়দা খেয়ে মানুষ ধীরে ধীরে কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়। এসব ভেজাল খাবার খেলে মানুষের স্মরণশক্তিও হ্রাস পায়।
চাল, আটা, ময়দার মতো অতি প্রয়োজনীয় দ্রব্যে যদি ভেজাল মেশানো হয় তাহলে তা জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ভেজাল প্রতিরোধ এবং বিষয়টি তদারকির জন্য বিএসটিআই রয়েছে। বিএসটিআই কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে যথাযথ ভূমিকা রাখবে বলে আমরা মনে করি।