দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ এবার এমন এক দেশের খবর পাওয়া গেছে যে দেশে মেয়ে জন্ম নিলেই লাগানো হয় ১১১টি গাছ! তবে এই দেশটি দূরের কোনো দেশ নয় আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত।
ভারতের রাজস্থানের পিপলান্ত্রি গ্রামের যে কোনো ঘরেই কন্যা জন্ম নিলে তার আগমন উদযাপন করা হয় ১১১টি গাছ রোপন করার মাধ্যমে। যদিও এখনও গ্রামে-শহরে মেয়েকে বিয়ে দিতে যৌতুকের আতঙ্ক কিংবা অলক্ষ্মী মনে করা হয়ে থাকে। তবে এই গ্রামে মেয়েদেরকে পরিবারের লক্ষ্মী মেনে নিয়ে ১৮ বছর পার না হলে বিয়ে দেওয়া হয় না। এমনকি মেয়েদের পর্যাপ্ত শিক্ষাও দেওয়া হয়।
পিপলান্ত্রি গ্রামের সাবেক গ্রামপ্রধান শায়াম সুন্দর পালিওয়াল এই নিয়ম চালু করেছিলেন। তিনি মেয়ে সন্তানের বাবা হওয়া উপলক্ষে নিজেই ১১১টি গাছ লাগিয়ে এর উদ্বোধন করেছিলেন। তিনি যখন মারা যান তখন মেয়েটার বয়সও বেশি হয়নি।
পালিওয়াল পরবর্তিতে গ্রামপ্রধানের দায়িত্ব পালন না করলেও তার পথে হাঁটা শুরু করে গ্রামের অন্যসব পরিবারও। এক সময় তা গ্রামটির রীতিতে পরিণত হয়।
শুধু তাই নয়, গ্রামে কোনো পরিবারে মেয়ের জন্ম হলেই সব পরিবার মিলে তার ভবিষ্যতের জন্য ছোট একটা ‘ট্রাস্ট’ও গঠন করেন। এই ট্রাস্টে জমা থাকে ৩১ হাজার রুপি। এর এক-তৃতীয়াংশই প্রদান করেন মেয়েটার বাবা-মা। বাকিটা গ্রামের মানুষ সবাই মিলে।
মেয়েটার বয়স ২০ বছর হওয়া পর্যন্ত এই অর্থ তার পাশে ‘ফান্ড’ হিসেবে কাজ করে থাকে। কেবলমাত্র এই ‘ট্রাস্ট’ এর জন্যেই মেয়েটিকে কখনই নিজেকে তার বাবা-মায়ের ঘাড়ে বোঝা বলে মনে হয় না।
এই ‘ট্রাস্ট’-এর বিপরীতে মেয়েটির বাবা-মাকে একটি চুক্তিতে আসতে হয় সমাজের সঙ্গে। সেখানে তারা প্রতিজ্ঞা করেন, তাদের মেয়ের বয়স ১৮ না হওয়া পর্যন্ত তারা মেয়েকে বিয়ে দেবেন না। পাশাপাশি মেয়েটিকে পর্যাপ্ত শিক্ষাগ্রহণের ব্যবস্থাও করবেন। সেই সঙ্গে আরও প্রতিজ্ঞা করেন যে, মেয়ের জন্ম উপলক্ষে লাগানো ১১১টি গাছের যত্ন নেবেন তারা।
গাছ লাগানোর কি উপকারিতা রয়েছে তা নিয়ে নতুন করে বোঝানোর কিছুই নেই। একে তো এই গাছগুলো পরিবারের ও মেয়েটির সম্পদ হিসেবে থাকছে, তার ওপর গ্রামের পরিবেশও স্বাস্থ্যকর হয়ে উঠছে। গ্রামের এই সংস্কৃতি যেমন মেয়েদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করে, ঠিক তেমনি প্রকৃতির প্রতি তাদের ভালোবাসার অনন্য নজির স্থাপন করে।
উল্লেখ্য, বিগত ৬ বছরে প্রায় আড়াই লাখ গাছ লাগানো হয়েছে এই গ্রামটিতে। এই সংস্কৃতি গ্রামের সামাজিক জীবনটাকেও অনেক শান্তিময় করে তুলেছে। সমাজের অপরাধপ্রবণতাও নাটকীয়ভাবে কমে এসেছে। কন্যা শিশুর প্রতি ভালোবাসাও যেনো অনেকগুণ বেড়ে গেছে ওই গ্রামটিতে।