দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আমাদের পৃথিবীর চার ভাগের প্রায় তিন ভাগই জলজ অঞ্চল। এই বিশাল সমুদ্র অঞ্চলে রয়েছে হাজারও লাখ প্রজাতির প্রাণীকুল। আমাদের এই বিশাল সম্পদ দূষণের ফলে ক্রমান্বয়ে হারাচ্ছে তার সৌন্দর্য এবং ঝুঁকিতে পড়ছে বিশাল প্রাণীকুল ও হাজার প্রজাতির প্রাণীর জীবন।
দূষণের আচরণ থেকে যদি আমরা সরে আসতে না পারি তাহলে কোন ভাবেই সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চল এবং সমুদ্রকে বাঁচানো সম্ভব হবে না, যেখানে বসবাসরত রয়েছে অগণিত প্রাণ। এ সমুদ্র থেকে আসে আমাদের পৃথিবী বসবাসরত মানুষের খাদ্যের যোগান আসছে অগণিত সম্পদ। সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী সচেতনতা তৈরীর সময় হয়েছে এখন। সমুদ্র হচ্ছে পৃথিবীর শরীরের রক্ত প্রবাহের মত যেমন রক্ত দূষিত হলে মানুষ বাঁচে না তেমনি সমুদ্র দূষিত হলেও পৃথিবীর কেও বাঁচানো সম্ভব হবে না।
সমুদ্রের নানা ধরনের বর্জ্য পদার্থ, প্লাস্টিক, মানুষের সৃষ্ট বর্জ্য, কলকারখানার বর্জ্য থেকে শুরু করে নানাবিধ উপদ্রব ফেলার কারণে সমুদ্রে বৃদ্ধি পাচ্ছে এসিডের পরিমাণ। মহাসাগরে এসিডিফিকেশন এর ফলে সামুদ্রিক জীবনের ব্যাপক বিলুপ্তি ঘটছে। এটি সমুদ্রে বসবাসরত সকল প্রাণীর জন্য একটি বিশাল হুমকিস্বরূপ। এমতাবস্থা চলতে থাকলে সমুদ্রের এসিডের পরিমাণ এমন পর্যায়ে পৌঁছাবে যে কোন প্রাণী সেখানে টিকে থাকা সম্ভব হবে না। সমুদ্রের এসিডিফিকিসনের কারণে ঘটবে সামুদ্রিক জীবাশ্মের বিলুপ্তি। সম্প্রতি সমুদ্র প্রাণীকুল ধ্বংসের পথে যা জলবায়ু সংকটের একটি প্রধান ইশারা।
সমুদ্র আবারো অ্যাসিডিক হয়ে উঠেছে যার ফলে সমুদ্রের পানি ভারী হয়ে উঠেছে যেহেতু তারা কয়লা তেল এবং গ্যাসের জলন থেকে কার্বন নিঃসরণ শোষণ করে থাকে সে কারণে উক্ত শোষণ এর ফলে সমুদ্রে এসিডের ও কার্বনের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিজ্ঞানীদের গবেষণা ও তাদের মতে আমাদের সমগ্র প্রিথিবীর মহাসাগর গুলিতে পরিবেশগত এমন সমস্যা দেখা দিচ্ছে যার ফলে ঝুঁকিতে পড়ে যাচ্ছে ওই সকল অঞ্চল যেখান থেকে আমাদের অক্সিজেনের অর্ধেক উৎপাদন হয়। যার ফলে এটি পরিবেশগত একটি মহা ঝুঁকিতে পরিণত হচ্ছে দিনে দিনে। সমুদ্রের মধ্যে এসিডিফিকেশনের ফলে বাস্তুসংস্থান ধসের প্রবণতা ঘটতে পারে যার ফলে ঝুঁকিতে পড়বে সমগ্র সমুদ্র ও তার উপর নির্ভরশীল প্রাণীকুল। সম্প্রতি এক বিবৃতিতে গবেষক হেনহান বলেছেন সমুদ্রের এসিডিফিকেশন আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের সম্পর্কে হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াবে যদি এভাবেই সমুদ্রে অল্মতা বৃদ্ধি পেতে থাকে তাহলে একসময় আমাদের প্রজাতির জীববদশা পড়বে ঝুঁকিতে। সেক্ষেত্রে খুব দ্রুতই এর সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরে আনতে হবে।
সমুদ্রে বর্জ্য পদার্থ ফেলা ও নানা আবর্জনা ডাম্পিং এর ফলে আমাদের সমুদ্র দূষণ নিয়ন্ত্রণে আনার লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে ৮৭ টি দেশ অংশগ্রহণ করেছিল। এটি একটি লন্ডনের সংক্ষিপ্ত কনভেনশন যেখানে সকল দেশের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। সমুদ্র দূষণের উৎস গুলি চিহ্নিত করা ও দূষণ প্রতিরোধে বর্জ্য পদার্থ দূরীকরণের ক্ষেত্রে কার্যকর বাস্তবায়নের পাশাপাশি এটি নিয়ন্ত্রণ করাই ছিল কনভেনশনের মূল লক্ষ্য। শুধু মাত্র সমুদ্র নয় নদীমাতৃক আমাদের দেশ ও দেশের পরিবেশ রক্ষা করতে হলে স্থলজ এলাকার পাশাপাশি জলজ অঞ্চলগুলোতেও রাখতে হবে বিশেষ নজরদারি। সমুদ্রর এসিডিফিকেশন এর ক্ষেত্রে সকলকে হতে হবে সোচ্চার যাতে করে পরবর্তী প্রজন্ম সহজেই তাদের বিকাশ সাধন করতে পারে।