দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ হঠাৎ করেই এক ভুতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি হলো। পানাম নগরী ঘিরে শত শত মানুষের কোলাহল। একদিকে ভুতুড়ে পরিবেশ, অপরদিকে ঐতিহ্যকে নিয়ে আগ্রহ। চলছে নানা আনন্দ আয়োজন।
বাংলাদেশের ঐতিহ্য দেখতে এসেছেন সকলেই। দি আর্কিটেক্টস্ রিজিওনাল কাউন্সিল এশিয়া (আর্কএশিয়া)’র ২১টি দেশের প্রায় কয়েকশ আর্কিটেক্ট ঐতিহ্যকে দেখতে আসেন। তারা মুগ্ধ হয়ে বাঙালি সংস্কৃতি উপভোগের পাশাপাশি পানাম নগরী সম্পর্কে জ্ঞান আহরণও করেন।
চারিদিকে যেনো এক নিস্তব্ধ পরিবেশ। মৃত নগরীর পথে দু’একটা মানুষ। মৃত কোলাহল ও অব্যক্ত ইতিহাস যেনো জড়িয়ে রয়েছে এ নগরীর প্রতিটি ইটে। পথের দু’ধারে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবন ও কাঠামোগুলো যেনো হারানো জৌলুসের কথা জানান দেয় সব সময়। তবে আলোয় আলোকিত হয়ে উঠে এদিন।
প্রায় ৪৫০ বছর পূর্বে এই নগরী কতোটা সমৃদ্ধ ছিল, তা বারবার ভাবতে বাধ্য করে রাস্তার দু’পাশের দু’তল-ত্রিতল ভবনগুলো। পানাম নগরের পথে হাঁটতে হাঁটতে যেনো মনে হতেই পারে, সেই ঈশা খাঁর আমলে চলে এসেছি। কেমন যেনো একটা রহস্য জড়িয়ে রয়েছে এই জায়গাটিতে। প্রতিটি ধ্বংসস্তূপে যেনো জড়িয়ে রয়েছে একেকটা কাহিনী। ধ্বংসস্তূপ হলেও এর আকর্ষণের নেই কোনো কমতি। ভবনগুলোর নির্মাণশৈলী দেখে মুগ্ধ না হয়ে যেনো পারা যায় না।
বর্তমানে দর্শনার্থীরা যে পানাম নগর দেখতে যান, সেখানে একটি মাত্রই পাকা রাস্তা রয়েছে। ৬০০ মিটার দীর্ঘ ও ৫ মিটার প্রস্থ এই রাস্তার দু’পাশে রয়েছে সব মিলিয়ে ৫২টি ভবন। ভবনগুলোতে স্থানীয় নির্মাণ শিল্পের ছোঁয়া থাকলেও মূলত নির্মিত হয়েছে ইউরোপীয় এবং মোঘল স্থাপত্য রীতির মিশ্রণে। একতলা হতে তিনতলা পর্যন্ত ভবন রয়েছে এখানে। ভবনের দেওয়ালগুলো বেশ প্রশস্তও। দেওয়ালগুলো বিভিন্ন আকৃতির ইট ও সুরকি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।
বেশ কিছু ভবনের দেওয়ালের অলংকরণ দেখার মতো দেখা যায়। আঁকা রয়েছে নানা ধরনের নকশা, রঙিন কাচ, পাথর, কড়ি, চিনামাটি, টেরাকোটা ব্যবহার করা হয়েছে এইসব অলংকরণের জন্য। অধিকাংশ ভবনের মেঝে ধ্বংস হয়ে গেলেও কয়েকটি টিকে রয়েছে, বিশেষ করে যে ভবনগুলোতে রয়েছে আনসারদের অবস্থান। মেঝেগুলোর বেশিরভাগই লাল-সাদা-কালো মোজাইক করা ও বেশ কয়েকটিতে দেখা যায় সাদা-কালো মার্বেল দেওয়া।
ইতিহাসবিদ জেমস টেলরের ধারণা মতে, আড়ংয়ের তাঁতখানা সোনারগাঁর পানাম নামক স্থানে ছিল। এটিই হলো মসলিন শিল্প কেনাবেচার এক প্রসিদ্ধ বাজার পানাম নগর।
উল্লেখ্য যে, দি আর্কিটেক্টস্ রিজিওনাল কাউন্সিল এশিয়া (আর্কএশিয়া) সদস্য দেশগুলোর স্থপতিদের জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সভাপতিদের সমন্বয়ে গঠিত হয়। সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোর আঞ্চলিক কার্যক্রম এবং সম্পর্ক প্রসারে কাজ করে থাকে। এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৭ সালে ভারতের নয়াদিল্লিতে। বর্তমান এর প্রেসিডেন্ট রিটা সোহ। বর্তমানে ২১টি সদস্য দেশগুলো হলো ভুটান, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, মিয়ানমার, লাওস, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, মালয়শিয়া, ব্রুনেই, সিঙ্গাপুর, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, চীন, হংকং, ম্যাকাউ, জাপান, কোরিয়া এবং মঙ্গোলিয়া।