দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ খবরটি ছোট্ট। তবে বিষয়টি এতো ছোট্ট বিষয় নয়। সত্যিই সমাজে কতো কিই না ঘটে যাচ্ছে। আমরা সব সময় হয়তো সেইসব ঘটনার খোঁজও রাখতে পারি না। আজ এমনই একটি ঘটনার কথা উঠে এসেছে এই প্রতিবেদনটিতে।
ঘুম ক্ষুধা ব্যথা কোনও কিছুরই অনুভূতি নেই সেই নারীর নাম অলিভিয়া। শিশু কাল থেকেই তার এমন অবস্থা। অলিভিয়ার বয়স যখন মাত্র ৯ মাস, মা নিকির মনে হতে থাকে তার মেয়ে যেনো ইস্পাত দিয়ে তৈরি কোনো কিছু! তিনি মাঝে মধ্যেই বেশ চিন্তাও করতেন। আসলে কি ঘটনা তার কোনো কিছুই তখন তার জানা ছিলো না।
ক্ষুধা তৃষ্ণা ঘুম কিংবা ক্লান্তি কোনও কিছুই বোধই তার একেবারেই নেই। এখন ১০ বছরের অলিভিয়া ফ্রান্সওয়ার্থ বিস্ময়বালিকা হিসেবে বিশ্বের মানুষের কাছে উঠে এসেছে। জন্মের পর থেকেই একের পর এক চমক নিয়ে যেনো অপেক্ষা করে আছে ইংল্যান্ডের ইয়র্কশায়ারের হাডার্সফিল্ডের এই ছোট্ট বাসিন্দা। যুক্তরাজ্যের ট্যাবলয়েড পত্রিকা ‘এক্সপ্রেস’এর এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই বিস্ময়বালিকার নানা কথা।
‘এক্সপ্রেস’এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অলিভিয়ার বয়স যখন মাত্র ৯ মাস, তখন মেয়ের এমন অস্বাভাবিকতা বুঝতে পারে তার মা নিকি ট্রেপাক। তখন তার মনে হতে থাকে, অলিভিয়া যেনো এক ইস্পাত দিয়ে তৈরি। তার কোনো খিদেও পায় না। ঘুমের জন্য বায়নাও নেই তার। এমনকি সে ব্যথা পেয়েও কাঁদে না। তার চলছিল ঠিক এ ভাবেই। কারণ হলো আর যাই হোক না কেনো, মেয়ের কোনও শারীরিক অসুস্থতাও ছিল না।
মেয়েটির মা নিকি আরও বলেছেন, নার্সারিতে পড়ার সময় একদিন পড়ে যান অলিভিয়া। তবে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে শিশু অলিভিয়া ভয় না পেয়ে উল্টো ঠোঁট ধরে টানতে শুরু করে দেয়! সেই সময় তার শিশুর মধ্যে নানা অস্বাভাবিকতার কথা জানান চিকিৎসক।
তবে এরপরেও যে চমক অপেক্ষো করছিল, তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না নিকি। একদিন তার চোখের সামনে দুর্ঘটনার শিকার হলো ছোট্ট অলিভিয়া। প্রথমে গাড়ির ধাক্কা, তারপর ওই গাড়ি তাকে টেনে নিয়ে যায় বেশ খানিকটা দূরে। আতঙ্কে দিশেহারা নিকি ও তার বাকি সন্তানরা যখন চিৎকার করে কাঁদছে থাকেন তখন তাদের হতভম্ব করে নির্বিকারভাবে ফিরে আসে অলিভিয়া! দেহে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তবে কোনো ভয় পায়নি সে। সেই সময় চিকিৎসকরা তাকে দেখে বুঝতে পারেন জিনগঠিত একধরনের বিরল রোগে আক্রান্ত হয়েছেন অলিভিয়া। চিকিৎসকদের ভাষায় যার নাম হলো ‘ক্রোমোজোম সিক্স ডিলেশন’। এই বিরল অসুখের শিকার শিশুদের বলা হয়ে থাকে ‘বায়োনিক চাইল্ড’।
প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয় যে, বিশ্বে প্রতি দুশো জন শিশুর মধ্যে একজন এমন বিরল রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। তবে তার মধ্যেও রকমফের রয়েছে। কারও কারও মধ্যে বিরলতার মাত্রা অতিরিক্ত হয়ে থাকে। অলিভিয়াও সে রকম একজন। সে কার্যত একজন অতিমানবীয় শিশুতে পরিণত হয়েছেন।
মা নিকি বলেছেন যে, টানা ৩দিন পর্যন্ত না ঘুমিয়েও থাকতে পারে অলিভিয়া। স্কুলে যাওয়ার আগপর্যন্ত কোনোদিন হাই তুলতেও দেখেননি তাকে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন যে, মানবদেহের ২৩ জোড়া ক্রোমোজোমের প্রত্যেকটির থাকে দু’টি অংশ। ‘পি’ আর্ম এবং ‘কিউ’ আর্ম। এর মধ্যে একটিতে কোনও বিচ্যুতি হলেই দেখা দেয় এমন জিনগত জটিলতা। এখনও বিশ্বে ১৫ হাজারের বেশি জিনগত জটিলতার নিদর্শন পাওয়া গেছে। তারমধ্যে মাত্র একশো জন ‘সিক্স পি ডিলেশন’-এর শিকার হয়েছেন। তবে তাদের মধ্যে একমাত্র ব্যতিক্রম হলো অলিভিয়া। খিদে তৃষ্ণা ঘুম কিংবা ব্যথার অনুভূতি একেবারেই নেই তার।