দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বহুল আলোচিত এবং দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে জঙ্গি হামলা মামলায় ৭ আসামিকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
এদিকে এই মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান। আজ (বুধবার) ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান এই আদেশ দিয়েছেন।
মামলার ৭ আসামি হলেন- জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, রাকিবুল হাসান রিগান, রাশেদুল ইসলাম ওরফে র্যাশ, হাদিসুর রহমান সাগর, সোহেল মাহফুজ, শহীদুল ইসলাম খালেদ এবং মামুনুর রশিদ রিপন। এরা সবাই আটক রয়েছে।
সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে প্রিজন ভ্যানে কারাগার হতে আসামীদের ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়।
গত ১৭ নভেম্বর এই মামলার রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হয়। তারপর ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন।
চার্জ (অভিযোগ) গঠনের পর হতে মোট ৫২ কার্যদিবসে সাক্ষ্যগ্রহণ এবং যুক্তিতর্কসহ সব কার্যক্রম শেষে মামলাটি রায়ের পর্যায়ে পৌঁছায়। জঙ্গি হামলার ৩ বছর ৪ মাস ২৬ দিন পর চাঞ্চল্যকর এই মামলার রায় ঘোষণা করা হলো।
এই বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মো. গোলাম ছারোয়ার খান (জাকির) বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ প্রমাণে সক্ষম হয়েছেন। সে কারণে সব আসামির শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন।
২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালিয়ে দুই পুলিশসহ দেশি-বিদেশি ২২ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দু’জনের মৃত্যু ঘটে।
এই হামলায় অন্তত ৩০ জন পুলিশ সদস্য আহত হন। ওই সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযান ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ডে’ ৫ জঙ্গি নিহত হয়। অভিযানে এক জাপানি এবং দুই শ্রীলংকানসহ ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।
জঙ্গি হামলার ঘটনায় ওই বছরের ৪ জুলাই পুলিশ গুলশান থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করে। তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ২৩ জুলাই হামলায় জড়িত ২১ জনকে চিহ্নিত করে জীবিত ৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করা হয়।
পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) পরিদর্শক হুমায়ুন কবীর এই চার্জশিট দাখিল করেন। ঘটনায় জড়িত ‘চিহ্নিত’ বাকি ১৩ জন ইতিমধ্যে বিভিন্ন অভিযানে নিহত হওয়ায় তাদের নাম চার্জশিট হতে বাদ দেওয়া হয়।
গত বছরের ২৬ নভেম্বর এই মামলায় ৮ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ (অভিযোগ) গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। গত বছরের ৩ ডিসেম্বর এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়ে এ বছরের ২৭ অক্টোবর শেষ হয়।
৩০ অক্টোবর আত্মপক্ষ সমর্থনে আদালতের কাছে ৮ আসামি নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। এরপর চলতি মাসের ৬ নভেম্বর এ মামলায় যুক্তিতর্ক শুরু করা হয়।
৭ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে সব আসামির মৃত্যুদণ্ড চান। ১৭ নভেম্বর এই মামলায় উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হয়। মামলায় চার্জশিটভুক্ত ২১১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১১৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করে আদালত।