দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রতি বছর বড় করে একটি সংবাদ সম্মেলন করে থাকেন। সেখানে তার বক্তব্য শোনার পর তাকে নানা বিষয়ে প্রশ্ন করার জন্যে সাংবাদিকরা উপস্থিত হন। এবার সেখানে পুতিনকে প্রশ্ন করে চাকরি হারালেন এক নারী সাংবাদিক!
সংবাদ সম্মেলন অর্থই হলো সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকরা প্রশ্ন করবেন এবং যারা সেটি আয়োজন করেছেন তারা সেই সব প্রশ্নের উত্তর দেবেন, সাধারণত সেরকমই হয়ে থাকে এই আয়োজনে। কিন্তু ওই সাংবাদিক সম্মেলনে প্রশ্ন করার জন্য চাকরি হারিয়েছেন একজন টেলিভিশনের নারী সাংবাদিক!
তাহলে কী ছিল সেই প্রশ্নটি?
রাশিয়ার ইয়ামাল এলাকার রাষ্ট্রীয় টিভি সাংবাদিক অ্যালিসা ইয়ারাভস্কিয়া প্রেসিডেন্ট পুতিনের বাৎসরিক সংবাদ সম্মেলনে গিয়েছিলেন যথা নিয়মে।
ওই সাংবাদিক সম্মেলনে কোন সাংবাদিকরা প্রশ্ন করতে পারবেন সেটি প্রেসিডেন্ট পুতিনের মুখপাত্র ডিমিত্রি পেসকভ বাছাই করে দিয়ে থাকেন। ওই সময় প্রায় ৩ ঘণ্টা ধরে টানা চলে বক্তৃতা ও প্রশ্ন-উত্তর পর্ব। এরকম এক সময় এসে মাইক হাতে পেলেন অ্যালিসা ইয়ারাভস্কিয়া কিছু প্রশ্ন করার জন্য।
জানা গেছে, যদিও ওই সময় মাইক্রোফোনটি যাওয়ার কথা ছিল ডিমিত্রি পেসকভের বাছাই করা একই চ্যানেলের অন্য একজন সাংবাদিকের কাছে। হাতে মাইক পেয়ে অন্য সব সাংবাদিকের মতোই প্রশ্ন শুরু করলেন মিজ ইয়ারাভস্কিয়া।
মিজ ইয়ারাভস্কিয়া এই সময় প্রশ্ন রাখতে গিয়ে বৈশ্বিক উষ্ণতা ইয়ামাল এলাকার জন্য কতোটা ভালো সৌভাগ্য বয়ে আনছে সে প্রসঙ্গ দিয়ে শুরু করেন।
তিনি বলেন, যে কারণে আর্কটিক সাগরের বরফ গলে যাচ্ছে এবং তাতে স্থানীয় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হচ্ছে। তবে একটি সেতু নির্মাণে অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন সাংবাদিক অ্যালিসা ইয়ারাভস্কিয়া।
তিনি বলেন যে, ‘শহরের গভর্নর এই ব্রিজকে বাস্তবে রূপান্তরিত করার ক্ষেত্রে কোন চেষ্টার ত্রুটি করছেন না। তবে আমরা শুনতে পাচ্ছি সরকারের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে বিষয়টি কম গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আমার প্রশ্ন হলো কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে কী বড়সড় উদ্যোগ নেওয়া যায়?’
সেখানে পুতিনের উত্তর ছিল, শুধু একটি প্রকল্পকে গুরুত্ব দিয়ে বাছাই করা কেন্দ্রীয় সরকারের জন্য একটি বেমানান হবে। এই ব্রিজটি আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থল হিসেবে কাজ করবে সে প্রসঙ্গে তিনি ওয়াকিবহাল রয়েছেন এবং এর দিকে বাড়তি মনোযোগ দেওয়া হবে।
সাংবাদিককে চাকরি হারাতে হলো কেনো?
এখনও ঠিক পরিষ্কার নয়। এমন একটি প্রশ্নটি তোলার পর কেনো ওই সাংবাদিককে চাকরি হারাতে হয়েছে। তবে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে যে, তার এই প্রশ্নে নাকি নাখোশ হয়েছেন ইয়ামাল অঞ্চলের কর্তৃপক্ষ।
অপরদিকে তার টেলিভিশন চ্যানেল তার উপর ক্ষুব্ধ হয়েছে। তার কারণ হলো, যে সাংবাদিককে প্রশ্নটি করার জন্য বাছাই করা হয়েছিল তাকে তিনি মাইক্রোফোনটি না দিয়ে নিজেই প্রশ্ন করেছেন সেজন্যই। তাছাড়া যে চ্যানেলে তিনি কাজ করেন সেটি স্থানীয় প্রশাসনের মালিকানাধীন একটি চ্যানেল।
অন্যপরদিকে আরেক রিপোর্টে বলা হয়েছে, সংবাদ সম্মেলনে তোলা পুতিনের একটি ছবি নাকি তিনি ফেসবুকে পোষ্ট করেছিলেন। তাতে তিনি প্রেসিডেন্টকে কেমন দেখাচ্ছিল তা নিয়ে নাকি মন্তব্যও করেছেন।
মিজ ইয়ারাভস্কিয়া লিখেছেন যে, ‘আমি কোনো বোটক্সের চিহ্ন দেখছি না। তাকে (পুতিন) দেখে তার বয়সের মতোই মনে হয়েছে।’ চেহারায় বয়সের ছাপ লুকানোর জন্য সেখানে ‘বোটক্স’ খুব জনপ্রিয় একটি পদ্ধতি। তবে ওই পোষ্টটি অবশ্য এরপর ডিলিট করে ফেলা হয়।
উল্লেখ্য, রাশিয়াতে সাংবাদিকরা মত প্রকাশের স্বাধীনতা সব সময় ঠিক মতো পান না বা অনেক সময় তারা ব্যক্তিগত নিরাপত্তার ঝুঁকিতে থাকেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তবে অ্যালিসা ইয়ারাভস্কিয়া ঠিক কী কারণে কারণে চাকরি হারালেন সেটি এখনও পুরোপুরিভাবে পরিষ্কার নয়।
বিবিসির এক খবরে বলা হয়েছে যে, তবে তিনি নিজে অবশ্য বলেছেন যে, তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়নি বরং তিনি পদত্যাগ করেছেন।