দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ প্রযুক্তির নিত্য উত্কর্ষতার দাক্ষিণ্যে পৃথিবী বর্তমানে গ্লোবাল ভিলেজ। বিজ্ঞানীদের নিত্যনতুন আবিষ্কারের কারণে প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে আমাদের বিশ্ব জগত। বিশ্ব প্রযুক্তিতে বদলানোর সঙ্গে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও। ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছে।
প্রযুক্তির উন্নয়নে ক্রমেই বদলে যাচ্ছে দেশ, বদলে যাচ্ছে গতানুগতিকতা এবং বিবর্তন ঘটছে মানুষের জীবনধারাতে। মানুষের জীবন সহজ, আরামদায়ক এবং নিরাপদ করতে প্রযুক্তি অবদান রাখছে বিশেষ ভাবে। মানুষের জীবনের মুখ্য অনুষঙ্গ হয়ে উঠছে প্রযুক্তি। বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত আধুনিক প্রযুক্তির খোঁজ করেই চলেছেন।
বেশ কিছু প্রযুক্তির উত্কর্ষ মানুষের কল্পনাকেও যেনো ছাপিয়ে গেছে। প্রতি দশকেই মানুষের প্রাযুক্তিক উন্নয়ন আমাদের কাছে বিস্ময় সৃষ্টি করছে। ডিজিটাল হয়ে উঠছে প্রত্যন্ত অঞ্চল হতে মহাবিশ্বের প্রায় সবকিছুই। প্রতিনিয়ত প্রযুক্তির ইতিহাসে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন নানা সম্ভাবনা। বর্তমান বিশ্বের উন্নয়নের ধারণা যেনো বদলে গেছে, তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার যে দেশে যতো বেশি সেই দেশ ততোই বেশি উন্নত। মহাকাশজুড়ে হাজার হাজার স্যাটেলাইট পৃথিবীর দৃশ্যপট বদলে দেওয়ার যেনো এক মহানায়ক। কম্পিউটার, ল্যাপটপ, আইপড, ট্যাব, অ্যাপল, গুগল, অ্যামাজন, মাইক্রোসফট, ফেসবুকে মোবাইল অ্যাপ, রোবট, ড্রোন, মোবাইল ব্যাংকিং, অনলাইনে সহজে কেনাকাটা, রাইড, ফিসিং প্রযুক্তি, সর্বাধুনিক কৃষি প্রযুক্তিসহ বহু অভিনব প্রযুক্তি যেনো এক বিপ্লব সৃষ্টি করে চলেছে। এখন অনলাইন সংবাদমাধ্যমের জয়জয়কার চলছে। বিশ্বের অনেক বিখ্যাত পত্র-পত্রিকা বর্তমানে প্রিন্ট ভার্সন বন্ধ করে অনলাইনে প্রবেশ করেছে। আইফোন হ্যান্ডসেট হাতের মুঠোয় পুরে দিয়েছে যেনো আস্ত একটি কম্পিউটারকেই!
বাংলাদেশেও দিন দিন বাড়ছে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার। প্রযুক্তির জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে আজকের প্রজন্ম। গোটা দুনিয়াটাকে অনুমিত হচ্ছে হাতের মুঠোয় মার্বেলের চেয়েও ছোট একটি কিছু! হাতে হাতে দেখা মিলছে অপার প্রযুক্তির সৃষ্টির সম্ভার। প্রত্যন্ত অঞ্চল হতে রাজধানী শহর চলছে প্রযুক্তির হাত ধরেই। অর্থনৈতিক উন্নতি নিশ্চিত করার পাশাপাশি জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে প্রযুক্তির সমপ্রসারণ হচ্ছে ব্যাপক ভাবে। স্কুলশিক্ষার্থী থেকে শুরু করে গ্রামের সাধারণ কৃষক পর্যন্ত সবার জীবন বদলে যাচ্ছে এই আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায়। এতোদিন অজপাড়া গাঁ বলতে যা বুঝানো হতো তা এখন আর মোটেও দেখা যায় না গ্রামাঞ্চলে। গ্রামের ঘরে ঘরে আজ প্রযুক্তির ছোঁয়া। এখন দেখা যায় গ্রামের রাস্তাতেও সিসি টিভি ক্যামেরা! আগামী বছরগুলোতে এই গতি হয়তো আরও বাড়বে। তখন পৃথিবীর চেহারা আরও বদলে যাবে। আরও আধুনিকতম প্রযুক্তির ব্যবহার জীবনাচারে প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
চিঠি-ঘড়ি-টর্চলাইট যুগের যবনিকা ঘটিয়েছে মোবাইল ফোন। টেরিস্টরিয়াল কিংবা ডিস লাইনে টিভির পতন ঘটাচ্ছে তারহীন ডিটিএইচ স্যাটেলাইন টিভি। অললাইন ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, ই-কমার্স, অনলাইন শপিংয়ের দ্রুত প্রসার ঘটছে প্রতিটি বাড়িতে বাড়িতে এবং এক কথায় বলা যায় মানুষের জীবন ধারা বদলে দিয়েছে প্রযুক্তি।
ফেসবুক, টুইটার, ইন্সটাগ্রাম, ইউটিউব বিনোদনের দুনিয়া যেনো একেবারে বদলে দিয়েছে। সময়ের পরিবর্তন এবং চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বদলে যাচ্ছে মানুষের পছন্দ ও খাদ্যাভ্যাসও। যেমন বদলে গেছে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় মানুষের পুরো জীবন ব্যবস্থা। অনেকের ঘরের খাবারের চেয়ে বেশি পছন্দ হোটেল-রেস্তোরাঁর খাবার ও ফাস্টফুড। তাদের জন্য ফুডপান্ডা জাতীয় সরবরাহ প্রতিষ্ঠান যেনো অনিবার্য হয়ে উঠেছে। অ্যামাজান ও গুগলের পর ভার্চুয়াল সহকারীকে ডিভাইসের মাধ্যমে এনেছে আলিবাবা। আছে দারাজের মতো বহু অনলাইন শপিং অ্যাপসও। কোনো কিছু চাহিবা মাত্র পাওয়া যায়। এই অনলাইন মার্কেটিংয়ের প্রভাব এতোটাই যে বিশ্বের সব খুচরা শপগুলোর শাটার টেনে ধরছে।
মোবাইল অ্যাপ বিশ্লেষণী সংস্থা ‘অ্যাপ অ্যানি’র তথ্য মতে, ২০১৯ সালে মানুষ অ্যাপের মাধ্যমে ১২ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি খরচ করে ফেলেছেন। স্মার্টফোনে কথা বলার চেয়েও জিফ, ইমোজি, ভিডিও কলকেই এখন বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে মানুষ। মানি ব্যাগে এখন মানি রাখার বদলে থাকছে ক্রেডিট কার্ড, ট্রাভেল কার্ড!
আধুনিক যান্ত্রিক প্রযুক্তি কৃষিকে বদলে দিয়েছে। জমি কর্ষণ থেকে ফসল লাগানো, ফসল ফলানো, কাটা, বাজারে আনা পর্যন্ত সব কিছুই করছে যন্ত্র। ড্রোন এনেছে বিপ্লব। দুর্গম এলাকায় চিকিত্সা সেবা দিচ্ছে। জেলেরা সাগরে মাছ ধরছে আধুনিক প্রযুক্তিতে। অনলাইনেই রয়েছে গোটা পৃথিবীর আদ্যপান্ত। ইন্টারনেটে গুগলে সন্ধান করলেই চাহিবা মাত্র সব তথ্যই পাওয়া যায়। কাগজের বইয়ের জায়গা নিচ্ছে ইলেক্ট্রনিক বুক অর্থাৎ ই-বুক। কোন কিছুর সন্ধানের পরিবর্তে এখন হাতের মুঠোয় গুগল বা মজিলার মতো অসংখ্য সার্চিং সাইট। যেখানে একটি শব্দ লিখে সার্চ করলেই মিনিটে উঠে আসে তথ্যভান্ডার।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ ফ্রিল্যান্স মার্কেট প্লেস ওডেস্কের তথ্য মতে, বর্তমানে ঢাকা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম আউটসোর্সিং নগরী। প্রজন্মের চোখ এখন কেবল অনলাইনে। ক্যানালিস রিসার্চের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে ৫শ’ কোটি স্মার্টফোন ব্যবহৃত হচ্ছে। ২০১০ সালে বিশ্বে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল মাত্র ১৩০ কোটি। ২০১৯ সালে এসে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২০ কোটিতে। সবমিলিয়ে এমন একটি অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে বিশ্বে বর্তমানে মোট মানুষের চেয়ে মোবাইল সংযোগের সংখ্যাই বেশি। স্বাভাবিকভাবেই স্মার্টফোনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ব্যবসা এবং সেবা। তথ্যসূত্র: ইত্তেফাক অনলাইন।