দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বর্তমানে ডিজিটাল কনটেন্টের যুগ। বাংলাদেশও এখন এর থেকে পিছিয়ে নেই। স্ট্রিমিং খাতে দেশি প্রতিষ্ঠানগুলো সফলতার মুখ দেখতে শুরু করেছে ইতিমধ্যেই। আয় ও জনপ্রিয়তার নতুন মাধ্যম হলো অনলাইন কনটেন্ট স্ট্রিমিং।
বিগত কয়েক বছর ধরেই ডিজিটাল স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলির জনপ্রিয়তা এতো বেশি বেড়েছে যে বর্তমানে আমরা কীভাবে সব মানুষের কাছে এসব ডিজিটাল পরিষেবায় আরও বেশি মানুষকে যুক্ত করা যায় সেই বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিষয়টি আমাদের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে। সমাজে ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে ডিজিটাল কনটেন্টকে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তথ্যানুসারে দেখা যায় যে, এই জাতীয় প্ল্যাটফর্মগুলির জন্য ব্যবহৃত ব্যান্ডউইথ দেশে ব্যবহৃত মোট ব্যান্ডউইথেরও প্রায় ৪০ শতাংশ। আন্তর্জাতিক মিডিয়া রিসার্চ এজেন্সি কানটারের ধারণা মতে, ২০১৭ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এই পরিষেবাগুলির ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১১ শতাংশ বেড়ে গেছে। আমাদের দেশে জনপ্রিয় স্ট্রিমিং সেবাগুলোর দিকে তাকালে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে। ২০১০ সালের দিকে মাত্র ২ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা ডিজিটাল স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করতো।
মানুষ এখন টিভি সেটের সামনে না বসে হাতে থাকা মোবাইল ফোনেই তার পছন্দের শো, মুভি, নাটক, খেলা দেখে নিচ্ছেন খুব সহজেই। এখানে শুধু তরুণেরাই নয়, সব বয়সী মানুষকেই টানছে এই স্ট্রিমিং সেবা।
২০১০–এর দশকের শেষভাগ হতে অনলাইনের জন্য প্রযোজনা তৈরির বাজার ভালো কন্টেন্ট তৈরির প্রতিযোগিতা শুরু করে। বাংলাদেশে নেটফ্লিক্স স্ট্রিমিং শুরুর পর সচ্ছল দর্শকদের মধ্যে নতুন উত্তেজনা দেখা গেছে, টরেন্ট সাইট হতে অবৈধভাবে ডাউনলোড করে সিরিজ ও ফিল্ম দেখার ডামাডোলে বৈধ উপায়ে মৌলিক প্রযোজনা দেখার আগ্রহ বাড়তে শুরু করে তরুণদের মধ্যে।
পরবর্তী সময় অ্যামাজন প্রাইম এতে আরও বৈচিত্র্যময় মাত্রা যোগ করেছে। দেশের বাজারে বঙ্গ, বায়স্কোপ, আইফ্লিক্স, পরবর্তীতে হৈচৈ এবং এয়ারটেল টিভি প্লাস ওয়েব সিরিজ, মৌলিক ওয়েব প্রযোজনা নিয়ে এই দশকেই মাঠে নেমেছে। পরিসংখ্যান বলছে যে, বাংলাদেশে দেশীয় স্ট্রিমিং পোর্টালগুলোতে দর্শক সংখ্যা প্রায় ১০ লাখের কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েছে।
স্ট্রিমিংয়ের কথা বলতে গেলে শুরুতেই আসবে স্ট্রিমিং সেবা ‘বায়স্কোপ’। খেলা, চলচ্চিত্র, নাটক এবং টিভি শো দেখার সুবিধাও রয়েছে। এ ছাড়াও ৩৫টির মতো বাংলাদেশী ও ভারতীয় টিভি চ্যানেলও দেখা যায় বায়স্কোপে। এখান থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো অনুষ্ঠান শেয়ারের পাশাপাশি বন্ধুদের ইনবক্স করেও জানানো যাবে খুব সহজেই। পছন্দসই কোনো অনুষ্ঠান কিংবা সিনেমা দেখতে চাইলে প্রিয় বিভাগে রাখা যাবে, যা পরে বিভাগটি থেকে দেখে নেওয়া সম্ভব।
সেই সঙ্গে রয়েছে ‘আইফ্লিক্স’। এতে পুরস্কারপ্রাপ্ত টিভি সিরিজ, এক্সক্লুসিভ শো, ব্লকবাস্টার সিনেমা, জনপ্রিয় স্থানীয় এবং আঞ্চলিক কনটেন্ট ও শিশুতোষ অনুষ্ঠানসহ বিনোদনের এক বিশাল ভাণ্ডার বিদ্যমান।আইফ্লিক্সে অ্যাকশন, হরর, কমেডিসহ বিভিন্ন বিভাগ অনুযায়ী মুভি এবং সিরিজ সাজানো রয়েছে। যে কারণে ব্যবহারকারীরা পছন্দমতো কনটেন্ট খুব সহজে খুঁজে পাবেন।
বাচ্চাদের জন্যও রয়েছে বিশেষ সুযোগ সুবিধা। কিডস বিভাগে গেলে শুধু বাচ্চাদের উপযোগী অনুষ্ঠান দেখতে পাওয়া যাবে। এই সেবাটির মোবাইল অ্যাপের চমৎকার একটি ফিচারই হলো ডাউনলোড। চাইলেই ইন্টারনেট ছাড়া অফলাইনে দেখার জন্য যে কোনো ভিডিও ডাউনলোড করে রাখা যাবে খুব সহজেই!
অ্যাপের বাঁ পাশে থাকা ‘মাই ডাউনলোড’ অপশনে ডাউনলোড করা ভিডিওগুলোও খুঁজে পাওয়া যাবে। এতে করে ওয়াচ হিস্টোরি, সার্চ, অফার ইত্যাদি বিভাগও রয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছে ব্যবহারকারীদের পছন্দমতো প্লে লিস্ট তৈরির সুযোগ সুবিধা। আইফ্লিক্স অ্যাপে জিমেইল, ফেসবুক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে খুব সহজেই নিবন্ধন করা যাবে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ভিডিও স্ট্রিমিং সার্ভিস বঙ্গ ক্রমাগত তার সেবাকে সম্প্রসারিত করে আসছে। ভিডিও স্ট্রিমিং সেবা এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় অনলাইন সেবাগুলোর মধ্যে একটি। বিশ্বজুড়ে এই সেবার জনপ্রিয়তার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশী স্টার্টআপ বঙ্গ দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বর্তমানে বৈশ্বিক স্ট্রিমিং সেবাদাতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হয়েছে।
মাত্র ৬ মাস সময়ের মধ্যেই এই কাজটি করতে সক্ষম হয়েছে বঙ্গ। ২০১৪ সালে অনডিমান্ড ভিডিও সেবা হিসেবে একটি ইউটিউব চ্যানেল হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিলো এটি, এক বছর পরই স্ট্যান্ডঅ্যালোন অ্যাপ হিসেবে হাতেখড়ি হয় এর। এদেশের প্রায় ৯৬ মিলিয়ন মানুষ বর্তমানে অনলাইনের সঙ্গে সংযুক্ত। তাদের মধ্যে প্রায় ৭৫ মিলিয়ন হয়তো বঙ্গর ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করেন অথবা এর অ্যাপ ব্যবহার করে থাকেন। এই মুহূর্তে স্ট্রিমিং সার্ভিসের ভুবনে বঙ্গ রীতিমতো অদ্বিতীয় একটি নাম।
সেই সঙ্গে সোশ্যাল প্লাটফর্মে কনটেন্ট মেকিং ও পোস্ট করে অনেকেই পাচ্ছেন জনপ্রিয়তাও। সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে, সামাজিক আন্দোলনে বড় নিয়ামকের ভূমিকা পালন করতে দেখা যায় অনেক সোশ্যাল স্ট্রিমিং কনটেন্টকে। ফেসবুক লাইভ ভিডিও-র মাধ্যমে টনক নড়ছে, বাড়ছে সচেতনতাও। তবে কোন কনটেন্ট সত্য তথ্য দিচ্ছে, তা সচেতনতার সঙ্গে যাচাই-বাছাই করে সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করা জরুরি একটি বিষয়, নতুবা ভুল তথ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হওয়াটাই খুব স্বাভাবিক।
গণমাধ্যম থেকে শুরু করে ছোট-বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বা নতুন উদ্যোক্তা নিজেদের সুনির্দিষ্ট গ্রাহকের কাছে পৌঁছাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মার্কেটিং কৌশলে লাইভ ভিডিওকে বর্তমানে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। অধিকাংশ সময় এই লাইভ ভিডিও তারা করছেন মোবাইল ফোন হতে।
বর্তমানে ইউটিউব, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামসহ জনপ্রিয় সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হতে লাইভ ভিডিও সম্প্রচার করার সুযোগও রয়েছে। জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা সামাজিক যোগোযোগমাধ্যমগুলো কয়েক বছর ধরে লাইভ ভিডিও ফিচারকেই অন্যতম অগ্রাধিকারের তালিকাতে রেখেছে।
দেশে স্মার্টফোন ব্যবহারকারী সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকার কারণে হাতের কাছে থাকা মোবাইলে লাইভ ভিডিও প্রচারের আদর্শ ডিভাইস হিসেবে পরিণত হয়ে আসছে। এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন দেশের অনেক উদ্যোক্তাই। ইতিমধ্যেই ফেসবুক এবং ইউটিউব স্ট্রিমিং হতে আয় করতে শুরু করেছেন অনেকেই। লাইভ স্ট্রিমিংয়ের ক্ষেত্রে এমনই একটি নাম হলো ইজি টেকনোলজিসের ঢাকা লাইভ। দেশীয় স্ট্রিমিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিভিন্ন অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচারের ক্ষেত্রে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি।
ইউটিউব, ফেসবুক ভিডিও কনটেন্ট তৈরি কিংবা ফুড ব্লগিং করে অর্থ আয়ের সুযোগও এখন হাতের মুঠোয়। পণ্যের প্রমোশন হতে শুরু করে নানা বিষয় প্রচার করে অর্থ আয়ের সুযোওে পাওয়া যাচ্ছে। গুগল এবং ফেসবুক আয়ের সুযোগও রেখেছে। ইতিমধ্যেই দেশের বিভিন্ন উদ্যোক্তা এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তারকা ইউটিউবার ও ফেসবুক তারকা হয়ে গেছেন রাতারাতি। তথ্যসূত্র: দৈনিক যুগান্তর