দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ দুটি মানুষের চিন্তাভাবনা পৃথক, পৃথক নেশা, খাদ্যাভ্যাসও পৃথক। তবে তারা বেড়ে উঠেছে একই শরীরে। এক শরীরের দুই বোনের একজন অংক অন্যজন ইংরেজির শিক্ষিকা!
১৯৯০ সালের ৭ মার্চ জার্মানির মিনেসোটায় জন্ম নেয় জোড়া শিশু অ্যাবিগেইল এবং ব্রিটনি। বিশ্বখ্যাত সেই দুই বোনের ছোট থেকে বড় হওয়া অনেকটা গল্পের মতোই। ইতিমধ্যেই অ্যাবি-ব্রিটনি তাদের পৃথক পরিচয় গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন।
দুই বোন অ্যাবিগেইল লরেন হেনসেল এবং ব্রিটনি লি হেনসেলের বয়স বর্তমানে ২৯ বছর। সমাজের সঙ্গে সংগ্রাম করে, নিজেদের সঙ্গে সংগ্রাম করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন এই দুই বোন। দু’জনই স্নাতক ডিগ্রি নিয়েছেন। অ্যাবি অংক এবং ব্রিটনি ইংরাজিতে স্নাতক করেছেন। শুধু তাই নয়, দু’জনেরই পৃথক ড্রাইভিং লাইসেন্সও রয়েছে। এই মুহূর্তে দু’জনেই একটি স্কুলের শিক্ষক।
দু’জনের শরীর এক হলেও মস্তিষ্ক সম্পূর্ণভাবে পৃথক। তাই তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছা, চিন্তাভাবনাও পৃথক। এমনকি খাবারের প্রতি ভালোবাসাও পৃথক। এদের হৃৎপিণ্ড, পিত্তাশয় এবং পাকস্থলী পৃথক। তাই তাদের খিদেও পৃথক পৃথক সময় পায়। তবে বাকি সব কিছুই তাদের এক। যেমন একটাই লিভার, অন্ত্র একটাই, দুটো কিডনি-ডিম্বাশয়। তিনটে ফুসফুস রয়েছে তাদের। যে কারণে বেশিরভাগ জৈবিক ক্রিয়াগুলো তাদের একই সঙ্গে ঘটে থাকে।
একটা শরীর নিয়ে কীভাবে তারা দুটো পৃথক মানুষের পরিচয় বহন করলেন? দুটো পৃথক ব্রেন কীভাবে দুটো হাত ও পা-কে পৃথক পৃথক সিগন্যাল পাঠায়? আর কীভাবেই বা সেই পৃথক সিগন্যালে সাড়া দেয় এই দুই হাত-পা! তা আজও গবেষকদের কাছে বিস্ময়ের ব্যাপার হয়ে রয়েছে। আরও বিস্ময়ের বিষয় হলো, একজনের জ্বর হলেই যে অন্যজনের জ্বর হবে তাও কিন্তু নয়। দু’জনের শরীর এক হলেও অসুখ-বিসুখ বেশির ভাগ সময় একসঙ্গে হয় না!
তবে অ্যাবি ও ব্রিটনি বিষয়টি নিয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তিত নন। নিজেদের মধ্যে তাদের দারুণ বোঝাপড়া রয়েছে। তবে দিন-রাত তারা একে অপরের সঙ্গে খুনসুঁটি চালিয়ে যান। তবে সে সবের মধ্যে তাদের একটাই আফসোস আর তা হলো যে স্কুলে তারা পড়ান, সেখানে তাদের একজন হিসাবেই গণ্য করা হয়ে থাকে। তাই মাইনেও একজনকেই দেওয়া হয়। অথচ শিক্ষার্থীদের জন্য দ্বিগুণ পরিশ্রম করেন।
আনন্দবাজার পত্রিকার এক খবরে বলা হয়, সারা বিশ্ব তাদের একনামেই চেনেন। জন্মের সময় যখন তাদের মা প্যাটি হেনসেল হাসপাতালে ভর্তি হন, তিনি জানতেন তার শরীরে একটি ভ্রূণই বেড়ে উঠছে। তবে চিকিৎসকেরা তাকে জোড়া শিশু সন্তান উপহার দেন। বাইরে থেকে তাদের শুধু মাথা দুটো পৃথক। সাধারণত এই রকম সন্তান খুব বেশি দিন বাঁচতে পারে না বলে জানা যায়।
চিকিৎসকরা প্যাটিকে জানিয়েছিলেন যে, অস্ত্রোপচার করে তাদের পৃথক করে দেওয়া হবে। তবে সে ক্ষেত্রে যে কোনো একজনকে বাঁচাতে পারবেন। মায়ের মন তাতে মোটেও রাজি হয়নি। কোনো সন্তানকেই প্যাটি হারাতে চান না। স্বামীর সঙ্গে মিনেসোটার প্রত্যন্ত এক ফার্মে দুই সন্তানকে নিয়ে তারা বসবাস শুরু করেন। এখানেই অ্যাবি এবং ব্রিটনি এই দুই বোন বড় হয়েছেন।