দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ঘুরতে গেলে চলে যান কুমিল্লার রানী ময়নামতির প্রাসাদ। এখানে গেলে আপনি ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পারবেন।
কুমিল্লা জেলার বুড়িচং উপজেলায় (কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের পূর্ব পাশে) ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি হতে মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরে সৌন্দর্যমন্ডিত রানী ময়নামতির প্রাসাদটি অবস্থিত। দশম শতাব্দীতে চন্দ্র বংশীয় রাজা মানিক চন্দ্রের স্ত্রী ময়নামতির আরাম আয়েশের জন্যই এই প্রাসাদটি নির্মাণ করেন। ধারণা করা হয় যে, ময়নামতি ইউনিয়নের প্রত্নতাত্ত্বিক এই নিদর্শনটি ৮ম হতে ১২শ’ শতকের এক প্রাচীন কীর্তি হিসেবে দেখা হয়।
১০ একর (প্রায়) জায়গা জুড়ে লালমাই-ময়নামতি পাহাড়ের উত্তর প্রান্তে সমতল হতে ১৫.২৪ মিটার উচ্চতায় একটি বিচ্ছিন্ন পাহাড়ের চূড়ার উপর রানী ময়নামতির এই প্রাসাদের অবস্থান।
স্থানীয়দের মতে, এই স্থানটিতে একটি ক্রুশাকৃতির মন্দিরও ছিল, যা পরবর্তীতে সংস্কার করে ২য়, ৩য় ও ৪র্থ যুগে ক্রমান্বয়ে ছোট আকারের একটি পূর্বমুখী মন্দির বানানো হয়েছে। ১৯৮৮ সালে ভূমি সমতল হতে ৩ মিটার গভীরে প্রাপ্ত একটি সুড়ঙ্গ পথের সামনে খননের মাধ্যমে এই প্রাসাদটির সন্ধান পাওয়া যায়। এছাড়াও প্রাথমিকভাবে এখান থেকে নির্মাণ যুগের ৪টি স্থাপত্য, ৫১০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ৫০০ ফুট আয়তনের বেষ্টনী এক প্রাচীর, পোড়ামাটির ফলক, মূল্যবান প্রত্নবস্তু এবং অলংকৃত ইট আবিষ্কৃত হয়েছে। প্রতিবছর ৭ বৈশাখ এখানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাসব্যাপী বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। দূর দূরান্ত হতে অসংখ্য দর্শনার্থী এই মেলায় ভিড় করে থাকেন।
যাবেন কিভাবে
রানী ময়নামতির প্রাসাদে যেতে হলে প্রথমেই আপনাকে কুমিল্লা শহরে আসতে হবে। ঢাকা হতে ট্রেন কিংবা বাসে করে কুমিল্লা যেতে পারবেন। কমলাপুর রেলওয়ে ষ্টেশন হতে চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতী/গোধূলী, উপকূল এক্সপ্রেস, তূর্ণা ও পাহারিকা এক্সপ্রেস ট্রেনে কুমিল্লা যাওয়া যাবে।
রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল বা কমলাপুর বাস স্ট্যান্ড হতে রয়্যাল কোচ, এশিয়া এয়ারকন, এশিয়া লাইন, বিআরটিসি, প্রিন্স, তৃষার মতো নন এসি কিংবা এসি বাসে ঢাকা হতে কুমিল্লা যেতে পারবেন। চট্টগ্রাম কিংবা ফেনীগামী বিভিন্ন বাসেও কুমিল্লা যাওয়া যায়। বাসভেদে ভাড়া লাগবে ১৭০ হতে ৩০০ টাকা। বাস হতে কুমিল্লার কোটবাড়ি বিশ্বরোড কিংবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট গেইট নেমে অটোরিকশা দিয়ে ময়নামতি সাহেব বাজার এলাকার কাছে অবস্থিত রানী ময়নামতির প্রাসাদে আপনি যেতে পারবেন।
থাকবেন কোথায়
কুমিল্লার কান্দিরপাড়, শাসনগাছা এবং স্টেশন রোড এলাকায় বিভিন্ন মানের হোটেলও রয়েছে। এদের মধ্যে হোটেল সোনালী, আমানিয়া রেস্ট হাউজ, হোটেল ভিক্টোরিয়া আবাসিক, হোটেল ড্রিম ল্যান্ড, হোটেল মেলোডি, মাসুম রেস্ট হাউজ, হোটেল নূর অন্যতম আবাসিক হোটেল।
খাবেন কোথায়
রানী ময়নামতির প্রাসাদ যাওয়ার পথে আপনি জমজম হোটেল, মিয়ামি রিসোর্ট, হক ইন রেস্টুরেন্ট ও পিসি রেস্তোরার মতো বেশকিছু রেস্টুরেন্ট রয়েছে যেখানে আপনি খাবারের জন্য যেতে পারেন। তাছাড়াও কুমিল্লা শহরে ইরিশ হিল হাইওয়ে হোটেল, ঝাল বাংলা রেস্তোরা, সৌদিয়া হোটেল, হোটেল ময়নামতি, আনোয়ার হোটেল, উজান হাইওয়ে, সাকিব হোটেল ও লিজা হোটেল সহ বিভিন্ন মানের অসংখ্য রেস্তোরাঁ রয়েছে। তবে অবশ্যই কুমিল্লার মনোহরপুরের মাতৃভাণ্ডারের বিখ্যাত রসমালাই এবং রসগোল্লা, ভগবতীর পেড়া, মিঠাই এর মালাই চপ এবং মাতৃভূমির মালাইকারির স্বাদ নিতে আপনি ভুলবেন না।
কুমিল্লার অন্যান্য দর্শনীয় স্থানসমূহ
কুমিল্লার অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যেই শালবন বিহার, ময়নামতির ওয়ার সিমেট্রি, আনন্দ বিহার এবং বার্ড উল্লেখযোগ্য স্থান। ইচ্ছে করলে এগুলোও ঘুরে আসতে পারেন।
ছবি ও তথ্যসূত্র: https://vromonguide.com