দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বিশ্বজুড়ে ঘরে অবস্থান বা লকডাউনের আওতায় চলে এসেছে ১০০ কোটিরও বেশি মানুষ! প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস আজ এমন এক পরিস্থিতি সৃ্ষ্টি করেছে।.
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণজনিত বৈশ্বিক মহামারী কভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে আঞ্চলিক এবং সার্বিক লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে ৫০টিরও বেশি দেশ। যার মধ্যে কিছু দেশের সরকার এই লকডাউনকে করেছে বাধ্যতামূলক। অন্যরা শুধু নাগরিকদের ঘরে অবস্থানের পরামর্শ দিয়েছেন।
প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, এ পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী নভেল করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছে প্রায় ৪ লাখ মানুষ। এর মধ্যে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৬ হাজার। সব মিলিয়ে বিশ্বের মোট ১৬৭টি দেশ এবং অঞ্চলে ছড়িয়েছে এই প্রাণঘাতি নভেল করোনা ভাইরাস।
বিশ্বব্যাপী বর্তমানে অন্তত ৩৪টি দেশ এবং অঞ্চল স্থানীয় বাসিন্দাদের বাধ্যতামূলক লকডাউনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর আওতায় বাধ্যতামূলক ভাবে ঘরবন্দি হয়ে রয়েছে প্রায় ৭৬ কোটি মানুষ।
আমাদের প্রতিবেশী ভারতে ৮০টিরও বেশি শহর ও জেলায় কঠোর লকডাউনের ঘোষণা দেওয়া হয়। বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল দেশটিতে এই লকডাউনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে পুরো দেশকে। নাগরিক বা আঞ্চলিক বাসিন্দাদের জন্য বাধ্যতামূলক ঘরবন্দি হয়ে থাকার ঘোষণা দেওয়া অন্য দেশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো ফ্রান্স, ইতালি, ইরাক, আর্জেন্টিনা এবং রুয়ান্ডা।
যার মধ্যে বর্তমানে করোনা ভাইরাসের আক্রমণে সবচেয়ে বড় বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী দেশ ইতালি। মৃতের সংখ্যার দিক থেকে ইতিমধ্যে চীনকেও ছাড়িয়ে গেছে এই দেশটি। এখন পর্যন্ত কভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে দেশটির প্রায় হাজারেরও বেশি নাগরিক। ইতালিতে বর্তমানে নাগরিকদের সব ধরনের ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপিত করা হয়েছে।
অপরদিকে ইউরোপের অন্য দেশগুলোর মধ্যে তারপরই রয়েছে স্পেন। সেখানে বর্তমানে জরুরি অবস্থার সময় বাড়ানোর কথাও ভাবছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন যে, শেষ হতে যাওয়া জরুরি অবস্থার মেয়াদ আরও ১৫ দিন বাড়ানোর জন্য দেশটির পার্লামেন্টের অনুমতি চাইবেন। সেক্ষেত্রে দেশটিতে জরুরি অবস্থা জারি থাকতে পারে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত। এ পর্যন্ত শেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়েছে ভয়াবহ ভাবে। বর্তমানে স্পেনে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় আড়াই হাজার। মৃতের সংখ্যার দিক থেকে ইতালি এবং চীনের পর তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে স্পেন।
অপরদিকে ফ্রান্সের অবস্থাও খুব একটা ভালো নয়। দেশটিতে বর্তমানে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০০ শত এর উপরে। দেশটির বিভিন্ন স্থানে লকডাউন ছাড়াও বর্তমানে কারফিউ জারি করা হয়েছে। রাজধানী প্যারিসের মেয়র আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য দেশটির সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন।
এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াসহ ৩টি অঙ্গরাজ্য বর্তমানে সম্পূর্ণ লকডাউনে বিরাজ করছে। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সর্বশেষ বাধ্যতামূলক ঘরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে গ্রিসে। স্থানীয় সময় অনুযায়ী গতপরশু সকাল থেকেই দেশটির সরকারের এই নির্দেশনা কার্যকর রয়েছে। এছাড়াও বাধ্যতামূলক লকডাউন কার্যকর করতে চলেছে কলম্বিয়া।
একই পদক্ষেপ নিতে চলেছে নিউজিল্যান্ড। আজ শুরু হয়ে পরবর্তী চার সপ্তাহ এই লকডাউন কার্যকর থাকবে। তবে বাধ্যতামূলক লকডাউনের ঘোষণা থাকলেও জরুরি পণ্য বা ওষুধ কেনার জন্য স্থানীয়দের ঘর থেকে বের হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে অধিকাংশ দেশ।
এদিকে ইরান, জার্মানি, যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশ নিজ নিজ নাগরিকদের ঘরে অবস্থানের অনুরোধ জানিয়েছে। একই সঙ্গে নাগরিকদের অন্যের সংস্পর্শ যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলারও অনুরোধ জানিয়েছে দেশগুলো। এ ধরনের অনুরোধমূলক লকডাউনের অধীনে রয়েছে মোট ২২ কোটি ৮০ লাখেরও বেশি মানুষ। এর মধ্যে জার্মানিতে কোথাও দুজনের বেশি মানুষ একত্রে জড়ো হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
এর মধ্যে যুক্তরাজ্যে জনসমাগমের বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছে দেশটির সরকার। গত সপ্তাহ শেষেও দেশটির পার্ক এবং সৈকতে ব্যাপক জনসমাগম দেখা গেছে। সে কারণে নাগরিকদের জন্য বিশেষ সতর্কবার্তা জারি করেছে দেশটির সরকার। এছাড়াও দেশটি শীঘ্রই বাধ্যতামূলক লকডাউনের ঘোষণা দিতে পারে বলে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়।
বাংলাদেশের বাস, ট্রেন, বিমান, নৌপথ বন্ধের মাধ্যমে মূলক লকডাউন করা হয়েছে পুরো দেশকে।