দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ইকুয়েডরে ভয়ানক রূপ নিয়েছে প্রাণঘাতি করোনা মহামারী। দুরন্ত গতিতে ছড়াচ্ছে ভাইরাসটি। রাস্ত-ঘাটে যেখানে সেখানে পড়ে থাকছে মানুষের লাশ!
ওইসব লাশ ছোঁয়া তো দূরে থাক, কেও তা ফিরেও দেখছে না। লাশ কুড়াতে মোতায়েন করা হয়েছে সেনাবাহিনী এবং পুলিশ। তারাই রাস্তায় রাস্তায় পড়ে থাকা মৃতদেহ জড়ো করছেন।
দেশটির বন্দরনগরী গুয়ায়াকুইলের রাস্তা হতে এ পর্যন্ত অন্তত পক্ষে ৪০০ জনের পচা-গলা লাশ উদ্ধার করেছে সেনা-পুলিশের যৌথ বাহিনীর সদস্যরা। শহরের হাসপাতাল এবং ক্লিনিকগুলোতেও অসংখ্য বেওয়ারিশ লাশ পড়ে রয়েছে। মর্গগুলোতেও কোনো জায়গা নেই।
সরকার সতর্ক করে দিয়ে বলেছে যে, চলতি মাসের মধ্যেই গুয়ায়াকুইল নগরী এবং আশপাশের এলাকায় ৩,৫০০-এর বেশি লোক মারা যেতে পারে। সরকারের এক মুখপাত্রের বরাত দিয়েছে শুক্রবার এই খবর দিয়েছে এএফপি এবং নিউইয়র্ক পোস্ট।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা-মেক্সিকোর পর ভাইরাসটি বর্তমানে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে ল্যাটিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে। এই অঞ্চলে প্রথম করোনা ধরা পড়ে গত মাসের শেষের দিকে (অর্থাৎ ২৬ ফেব্রুয়ারি) ব্রাজিলের সাও পাওলোতে। তারপর অন্যান্য দেশেও প্রকোপ দেখা দিয়েছে। শুক্রবার পর্যন্ত ল্যাটিন আমেরিকাজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। মৃত্যু ঘটেছে ৫৩৭ জনের।
মাত্র ৫ দিনে এই সংখ্যা আরও দ্বিগুণ হয়েছে। দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা হলো ব্রাজিল ও ইকুয়েডর। তবে প্রেসিডেন্ট লেনিন মোরেনোর সরকার করোনা আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে দেখানোর চেষ্টা করছেন। গত বুধবারই এক বিবৃতিতে দাবি করা হয় যে, এ পর্যন্ত ২ হাজার ৭০০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে মাত্র ৯৩ জনের। তবে তারপর রাস্তা-ঘাটে পরিত্যক্তভাবে লাশ পড়ে থাকার বেশ কিছু ছবি এবং ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস জানিয়েছে, ইকুয়েডরের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী গুয়ায়াকুইলের বাসিন্দারাই সামাজিক মাধ্যমে রাস্তায় পড়ে থাকা মৃতদেহের ভিডিও প্রকাশ করেছে। অনেকেই তাদের বাড়ি থেকে মৃতদেহ সরিয়ে নেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে বার্তাও পাঠায়। কর্তৃপক্ষ মৃতদেহ হতে দূরে থাকার নির্দেশনা দেওয়ায় বাড়িতে মারা যাওয়া মৃতদেহ পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে।
সরকারের মুখপাত্র রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে মৃতদেহ হতে দূরে থাকার বার্তা সম্প্রচারের জন্য ক্ষমা চাওয়া হয়েছে। ওয়ার্ল্ডোমিটার্সের সর্বশেষ তথ্য মতে জানা যায়, দেশটিতে মোট ৩,১৬০ জন আক্রান্ত ও বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত ১২০ জনের মৃত্যু ঘটেছে। তবে সংক্রমণ এবং মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা আসলে জানা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ হলো কনট্যাক্ট ট্রেসিং বা ট্রেসার স্টাডি এবং টেস্টিং একেবারেই কম এবং তা চলছে খুব ধীরগতিতে।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।