দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ চীন হতে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের মহামারীতে পুরো বিশ্ব যখন বিপর্যস্ত তখন চীনের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভিয়েতনামে এই ভাইরাসে কারও মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া যায়নি। তবে আক্রান্তের সংখ্যা ২৬৮ জন।
ভিয়েতনামে প্রায় সাড়ে ৯ কোটির বেশি জনসংখ্যার বাস। চীনের সঙ্গে এর রয়েছে দীর্ঘ স্থলসীমান্তও। দুই দেশের মধ্যে রয়েছে বিরাট ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা ধরনের যোগাযোগ।
ভিয়েতনাম কীভাবে নিজেকে এভাবে সুরক্ষিত রাখতে পারলো সেই প্রশ্ন সবার মধ্যেই উঁকি দেয়। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ভিয়েতনামের এই সাফল্যে সত্যিই বিস্মিত।
দু’জন গবেষক ভিয়েতনামের এই সাফল্যের কারণ বোঝার চেষ্টা করেছেন। এঁরা হলেন লন্ডনের কিংস কলেজের পলিটিক্যাল ইকনোমির সিনিয়র লেকচারার রবিন ক্লিংগার-ভিড্রা ও ইউনিভার্সিটি অব বাথের পিএইচডি গবেষক বা-লিন ট্রান। গ্লোবাল পলিসি জার্নালে সম্প্রতি তাদের এই অনুসন্ধানের বিষয়টি প্রকাশ করা হয়।
সেখানে তাঁরা উল্লেখ করছেন যে, গত ফেব্রুয়ারি মাস হতেই ভিয়েতনাম করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে বেশ কড়াকড়ি ব্যবস্থা নিয়েছিল। তাদের সব বিমানবন্দরে যাত্রীদের কঠোর স্বাস্থ্য পরীক্ষা ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল।
বিমানবন্দরে এসে নামা যাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রা মাপা হতো এবং তাদেরকে একটি স্বাস্থ্য-ফর্মও পূরণ করতে হতো। সেই ফর্মে যাত্রীদের উল্লেখ করতে হতো তারা কার কার সংস্পর্শে এসেছেন, কোথায় কোথায় গিয়েছেন ইত্যাদি। এই পদ্ধতি চালু রয়েছে ভিয়েতনামের যে কোনো বড় শহর ও সরকারি দফতর কিংবা হাসপাতালে।
স্বাস্থ্য ফর্মে কেও ভুল তথ্য দিলে এবং সেটা প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধেও ফৌজদারি ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এর পাশাপাশি কোনো এলাকায় মাত্র একটি সংক্রমণ ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই পুরো এলাকা লকডাউন করে দেওয়া হয়েছে।
ভিয়েতনামে দ্বিতীয় যে বিষয়টির ওপর আরও বেশি জোর দেওয়া হয়েছিল আর সেটি হচ্ছে টার্গেট করে করে কঠোর কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা চালু করা।
ভিয়েতনামের এই সাফল্যের জন্য গবেষকরা তৃতীয় যে বিষয়টির উল্লেখ করেছেন, সেটি হলো তাদের সফল কমিউনিকেশন। শুরু থেকেই সরকার এই ভাইরাসটি যে কতোটা মারাত্মক সেই বিষয়টি জনগণকে সচেতন করার চেষ্টা করেছেন।
দেশটির সরকার এ ক্ষেত্রে বেশকিছু সৃজনশীল কৌশলও অবলম্বন করেছিল জনগণের কাছে করোনা ভাইরাসের বার্তা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে।
প্রতিদিন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হতে শুরু করে তথ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী বা গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের কাছে সব মানুষের মোবাইল ফোনেই টেক্সট পাঠানো হতো করোনা ভাইরাসের ব্যাপারে তথ্য দিয়ে। এর পাশাপাশি সরকারি প্রচারণা তো ব্যাপক আকারে ছিলই।
ভিয়েতনামের সব শহরে পোস্টার লাগানো হয়েছে এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে জনগণকে তাদের দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য।
এই গবেষকদ্বয় বলেছেন, ভিয়েনাম যেভাবে করোনা ভাইরাসের মোকাবেলা করছে সেটি হয়তো উদারনৈতিক, রাজনৈতিক আদর্শের সঙ্গে একেবারেই যায় না, তবে এটি ঠিক যে ভিয়েতনাম সেই কাজটি সত্যিই করেছে বা করতে পেরেছে বলেই তারা আজও নিরাপদ রয়েছে।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।