দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মহামারি করোনা ভাইরাসে বিপর্যস্ত পুরো বিশ্ব। এই ভাইরাসের বিষাক্ত ছোবলে বিশ্বব্যাপী আক্রান্ত হয়েছে ৯০ লাখেরও বেশি মানুষ। মৃত্যু ঘটেছে ৪ লাখ ৭০ হাজার ৭শ’র বেশি মানুষের। করোনা নিয়ে সুখবর দিলো রাশিয়ার দাবি তাদের একটি ভ্যাকসিন ২ বছর সুরক্ষা দেবে!
এ পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের কার্যকরী কোনও প্রতিষেধক বের না হওয়ায় বিশ্বব্যাপী তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে করোনা। তবে ইতিমধ্যে এর ভ্যাকসিন আবিষ্কারের দাবি করেছে কয়েকটি দেশ। দিন দিন এই ভ্যাকসিনের ট্রায়ালে সফলতা পাওয়া দেশের সংখ্যাও যেনো বাড়ছে।
চীন, আমেরিকা, ইসরায়েল এবং নাইজেরিয়ার পর এবার রাশিয়া জানিয়েছে যে, তাদের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় তৈরি হতে থাকা ভ্যাকসিনটি দুই বছরের বেশি সময় মানুষকে করোনা হতে সুরক্ষা দেবে বলে প্রমাণ পেয়েছেন তারা।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অফিশিয়াল পত্রিকা Krasnaya Zvezda জানিয়েছে, মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় এই ভ্যাকসিনটি যৌথভাবে তৈরি করছে দেশটির গামেলেয়া রিসার্চ ইন্সটিটিউট।
রাশিয়ার জাতীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রধান আলেকজান্ডার গিন্সবুর্গ এই বিষয়ে বলেছেন, ‘আমাদের ভ্যাকসিনটি শুধুমাত্র অ্যান্টিবডিই তৈরি করছে না, সেইসঙ্গে দীর্ঘ সময়ের জন্য মানুষকে সুরক্ষিত রাখবে বলেও আমরা প্রমাণ পেয়েছি।’
ভ্যাকসিন বা টিকা মূলত কোনো রোগকে প্রতিরোধ করার জন্য শরীরে দেওয়া হয়। অধিকাংশ ভ্যাকসিন সংশ্লিষ্ট ভাইরাসের দুর্বল ভার্সনে তৈরি করে প্রয়োগ করা হয়ে থাকে।
কোনো ব্যক্তি সংক্রমিত হলেও অসুস্থ হওয়ার পূর্বেই শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে। সেইসঙ্গে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর হতে রোগটি আর ছড়ায় না।
আলেকজান্ডার গিন্সবুর্গ আরও বলেছেন, ‘আমাদের ভ্যাকসিন নেওয়ার পর কমপক্ষে ২ বছর নভেল করোনা ভাইরাস হতে মানুষ সুরক্ষিত থাকবে। তবে এই সময়সীমা বেশিও হতে পারে।’
তিনি আরও জানিয়েছেন, রাশিয়ায় টিকাদান কর্মসূচির জন্য প্রাথমিকভাবে ৭০ মিলিয়ন ডোজ এই ভ্যাসসিনটি তৈরি করা হবে।
তবে রাশিয়া এই ভ্যাকসিনটির নাম এখনও জানায়নি। দেশটি আশা করছে যে, আগামী জুলাইয়ের ভেতর হিউম্যান ট্রায়াল শেষ হবে।
কোনো প্রতিষেধক না থাকা কোভিড-১৯ রোগের টিকা বা ওষুধ বের করতে চীন, আমেরিকা এবং ব্রিটেনের মতো দেশগুলো উঠেপড়ে লেগেছে।
ওই তিনটি দেশই বলছে যে, আগামী সেপ্টেম্বর মাসের ভেতরে অন্তত যে কোনো কোম্পানির একটি ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে। সেই ভ্যাকসিন পাওয়া গেলেও সাধারণ মানুষের হাতে আসতে হয়তো এক বছরের বেশি সময় লেগে যেতে পারে।
এর দুদিন আগে নাইজেরিয়া দাবি করে যে, তাদের দেশের গবেষকরা শতভাগ কার্যকরী একটি ভ্যাকসিন পেয়ে গেছেন। অপরদিকে ইসরায়েল জানিয়েছে, তাদের আবিষ্কৃত ভ্যাকসিন প্রাণীর শরীরে ইতিমধ্যেই কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।
উল্লেখ্য, সারা বিশ্বে প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের দাপটে মানুষ আজ দিশেহারা। কবে এর ভ্যাকসিন আসবে সেই আশায় বসে আছে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ। কারণ এই চরমতম ছোঁয়াছে রোগ করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে টিকার বিকল্প নেই। একমাত্র টিকার মাধ্যমে এই রোগ নির্মূল করা সম্ভব। তাই সবাই আশায় আছেন টিকার জন্য।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।