দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ নভেল করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) টিকা উদ্ভাবনে এগিয়ে রয়েছে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের নোভাভ্যাক্স।এই দুটির কোনো একটি সফল হলেই টিকার ডোজ পাবে বাংলাদেশও।
বিশ্বের নিম্ন ও নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে টিকার ক্ষেত্রে সহায়তা দেওয়া গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (গ্যাভি) বাংলাদেশসহ ৯২টি দেশের জন্য এই সুখবর দিয়েছে।
এই বিষয়ে গত শুক্রবার রাতে গ্যাভি এক বিবৃতিতে বলেছে যে, ২০২১ সালে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর জন্য সম্ভাব্য নিরাপদ এবং কার্যকর টিকার ১০ কোটি ডোজ উৎপাদন ও বিতরণ ত্বরান্বিত করতে সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া (এসআইআই), গ্যাভি এবং বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস একটি চুক্তিও করেছে।
এই চুক্তির আওতায় অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং নোভাভ্যাক্সের করোনা ভ্যাকসিন অনুমোদন পাওয়ার পর ১০ কোটি ডোজ তৈরি করে বিভিন্ন দেশে সরবরাহ করা হবে। আর এই সরবরাহের দায়িত্বে থাকবে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট। সেজন্য ওই প্রতিষ্ঠানকে ১৫ কোটি ডলার তহবিলও দেবে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন। ‘কোভ্যাক্স অ্যাডভান্স মার্কেট কমিটমেন্ট (এএমসি)’ কাঠামোর আওতায় এই উদ্যোগটি গ্রহণ করা হয়েছে। ওদের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি ডোজ ভ্যাকসিনের দাম পড়বে সর্বোচ্চ তিন ডলারের মতো (বাংলাদেশী টাকায় যা প্রায় ২৫৪ টাকা)।
উল্লেখ্য, করোনার টিকা উদ্ভাবনে যেসব প্রতিষ্ঠান এগিয়ে রয়েছে তাদের সঙ্গে আগাম ক্রয় চুক্তি করে সম্ভাব্য টিকা পাওয়া নিশ্চিত করার চেষ্টাও করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। টিকার কার্যকারিতা প্রমাণ হলে ওই দেশ দুটির শুরুতেই টিকা পাওয়া প্রায় নিশ্চিত বলা যায়। বিশেষ করে যুক্তরাজ্য টিকা উদ্ভাবনে এগিয়ে থাকা অন্তত ৪টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তারা চুক্তি করেছে। অপরদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সবার জন্য ন্যায্যভাবে টিকা পাওয়ার কথা বললেও তা কার্যকরে এতোদিন দৃশ্যমান কোনো তৎপরতা তাদের ছিল না। গত শুক্রবার টিকাবিষয়ক আন্তর্জাতিক জোট গ্যাভি, বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস এবং সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার উদ্যোগের কারণে বিশ্বের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছেও টিকা পৌঁছানোর সুযোগ সৃষ্টি হলো।
গ্যাভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. সেথ বার্কেল এই বিষয়ে বলেছেন, ‘অনেকবার আমরা দেখেছি যে, ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো নতুন চিকিৎসা, রোগ পরীক্ষা এবং নতুন টিকা পাওয়ার দৌড়ে সব সময় পেছনে পড়ে থাকে। করোনার টিকার ক্ষেত্রে কখনও আমরা এমনটি চাই না।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদি ধনী দেশগুলোই শুধু সুরক্ষিত হয় তাহলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, শিল্প ও সমাজ মহামারিতে ক্রমেই বিপর্যস্ত হতে থাকবে। এমনটি যাতে না ঘটে সে জন্যই আমাদের এই নতুন সহযোগিতা চুক্তি গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ। এটি শুধু কয়েকটি ধনী দেশই নয়, সব দেশের জন্য টিকা উৎপাদনের সামর্থ্য তৈরির উদ্যোগ। আমরা চাই সিরামের অন্যান্য ভ্যাকসিন উৎপাদকরাও ঠিক এভাবেই এগিয়ে আসবেন।’
উল্লেখ থাকে যে, গত সপ্তাহে গ্যাভির পরিচালনা বোর্ড এএমসির আওতায় সহযোগিতা দেওয়া হবে এমন অন্তত ৯২টি দেশের তালিকা চূড়ান্ত করেছে। ত্রিপক্ষীয় চুক্তি অনুসারে দেখা যায়, অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কার্যকরী প্রমাণ হলে গ্যাভির সহযোগিতা লাভের তালিকায় থাকা ৫৭টি দেশ সেটি পাবে। যদি নোভাভ্যাক্সের টিকা তৈরির উদ্যোগ সফল হয় তাহলে এএমসির আওতায় থাকা ৯২টি (গ্যাভির তালিকায় থাকা ৫৭ দেশসহ) দেশই সেটি পাবে। বাংলাদেশ গ্যাভির সহযোগিতা পাওয়ার যোগ্য ৫৭টি দেশের তালিকাতে রয়েছে।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর
অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।