ঢাকা টাইমস্ রিপোর্ট ॥ বাংলাদেশে সামপ্রতিক সময়ে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, সারাবিশ্বে গ্রামের মানুষের তুলনায় শহরের মানুষের মধ্যে এই রোগ বেশি দেখা যাচ্ছে। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, শুধুমাত্র হেঁটে হার্ট ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা অনেকাংশে সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়ম মেনে চললে ডায়াবেটিস ও হৃদরোগীর সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব।
বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মতে, এতে রিক্স ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করছে অনেক কিছু। যেমন, হাইব্লাড প্রেসার বা হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস, ধূমপান, টেনশন ও উচ্চমাত্রায় কোলেস্টোরেল। বংশগত কারণেও অনেকে হার্টের রোগীতে পরিণত হচ্ছে। আবার কায়িক পরিশ্রমের অভাব হার্টের অসুখ ডেকে আনতে পারে। অতিরিক্ত ওজন হার্টে বাড়তি চাপ ফেলে। অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ হৃদরোগের অন্যতম কারণ। বয়স বাড়ার সাথেও এ রোগের সম্ভাবনা বাড়তে থাকে।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশে যানবাহনের পরিমাণ আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। যে কারণে দিনকে দিন মানুষের হাঁটা অভ্যাস একেবারেই কমে যাচ্ছে। আধুনিক জীবনে নানা সুযোগ সুবিধার কারণে মানুষ কায়িক পরিশ্রম কম করছে। এছাড়া মানুষকে বাঁচার জন্য নানা প্রতিযোগিতায় নামতে হচ্ছে। এতে উদ্বেগ বাড়ছে। যার চাপ এসে পড়ছে হার্টে এবং মস্তিষ্কে। তাছাড়া এখন গ্রামের মানুষের জীবন যাপনের অনেক পরিবর্তন এসেছে। আগে কাঁচা রাস্তাঘাট থাকার কারণে তারা বেশিরভাগ সময় হেঁটে চলাচল করতেন। কিন্তু এখন রাস্তা-ঘাট পাকা হওয়ায় যানবহনে ভরে গেছে গ্রামাঞ্চল। গ্রামের মানুষ আগে পায়ে হেঁটেই চলাচল করতেন, চাষ করতে, নৌকা চালাতেন। এখন তাদের সেসব কাজ যন্ত্র করছে। সব মিলিয়ে মানুষ আধুনিক জীবনের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। আমাদের দেশে অনেক মা আছেন যারা লজ্জায় চিকিৎসককে বলতে পারেন না, তার গর্ভে বাচ্চা রয়েছে। কিছু ওষুধ আছে যা গর্ভবর্তী মায়ের গ্রহণ করা ঠিক নয়। এতে শিশু হার্টের ত্রুটি নিয়ে জন্মায়। আমাদের দেশের শতকরা ৭০ ভাগ মানুষ ধুমপান করেন। যা হৃদরোগের অন্যতম রিক্স ফ্যাক্টর। বিশেষ করে গ্রামের মানুষের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়। আমাদের দেশের গ্রামের চিকিৎসা ব্যবস্থা এখনও ততটা উন্নত নয়। যে কারণে হার্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে তেমন কাজ করে না। ফলে গ্রামের মানুষ মাইন্ড স্ট্রোকসহ এধরনের সমস্যাগুলি ঘটলেও বুঝতে পারছে না। হৃদরোগের ক্ষেত্রে ব্যয়বহুল চিকিৎসা এবং দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে না পারাই এর অন্যমত কারণ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণগুলো নানা ধরনের হয়ে থাকে। বয়ষ্করোগীদের ক্ষেত্রে অনেক সময় এসব লক্ষণ প্রকাশ পায় না। ডায়াবেটিস রোগের সাধারণ লক্ষণগুলো হলো- ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, খুব বেশি পিপাসা লাগা, বেশি ক্ষুধা পাওয়া, যথেষ্ট বেশি খাওয়া সত্বেও ওজন কমে যাওয়া, ক্লামিত্ম ও দূর্বলতা বোধ করা, ক্ষত শুকাতে দেরি হওয়া, খোশ-পাচড়া, ফোঁড়া প্রভৃতি চর্মরোগ দেখা দেওয়া, চোখে কম দেখা ইত্যাদি। যেকোন মানুষ যেকোন বয়সে বা যেকোন সময় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে তিন শ্রেণীর লোকের ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যেমন- যাদের বংশে বাবা-মা বা রক্ত সম্পর্কিত নিকট আত্মীয়ের ডায়াবেটিস আছে, যাদের ওজন অনেক বেশি, যারা ব্যায়াম বা শারিরীক পরিশ্রমের কোন কাজ করেন না তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে এর বাইরেও ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। যেমন অনেক কায়িক পরিশ্রম করা মানুষেরও ডায়াবেটিস রোগ হতে দেখা গেছে।
যাদের বয়স চল্লিশোর্ধ, ওজন অত্যাধিক বা মেদভূড়ি আছে, যাদের উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে কোলেষ্টরেলের মাত্রা বেশি তাদের ডায়াবেটিস হতে পারে। তাই ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ হতে রক্ষা পেতে হলে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। আয়েশি জীবন যাপন পরিহার করতে হবে। প্রতিদিন নিয়মিত হাঁটা চলা করার অভ্যাস রপ্ত করতে হবে। মোট কথা ডায়াবেটিস হতে রক্ষা পেতে হলে জীবন যাপনে নিয়ম মেনে চলা অত্যান্ত জরুরি বিষয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নিয়ম মেনে চললে কোন রোগ বালাই মানুষের কাছে ঘেষতে পারে না।