দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ গবেষকরা করোনা নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে নতুন নতুন তথ্য পাচ্ছেন।করোনা ভাইরাসের বিস্তারে শিশুদের ভূমিকাকে অবাক করেছে বিজ্ঞানীদের।
নতুন এক গবেষণায় দেখা যায়, তিন সপ্তাহ পর্যন্ত শিশুরা নাকের ভেতর এই ভাইরাসটি বহন করে বেড়াতে পারে! সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ার ২২টি হাসপাতাল থেকে ৯১ শিশুর মেডিকেল উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
সম্প্রতি মেডিকেল সাময়িকী জামা’য় প্রকাশিত গবেষণাটি করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনস্থ চিলড্রেন’স ন্যাশনাল হসপিটালের চিকিৎসকরা। ইতিপূর্বেও বহু গবেষণায় একইরকম তথ্য দেখা যায়। এসব গবেষণা থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, শিশুরা গুরুতরভাবে আক্রান্ত না হয়েও ভাইরাসটির বিস্তারে ভূমিকা রাখতে পারে। অন্যদের সংক্রমিতও করতে পারে। এমতাবস্থায় বিশ্বজুড়ে স্কুল খোলা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা নিয়ে নতুন এক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
ব্রিটেনের রয়াল কলেজ অব পেডিয়াট্রিকস অ্যান্ড চাইল্ড হেলথের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক রাসেল ভাইনার এই বিষয়ে ব্যাখ্যা করে বলেন, শিশু ও কোভিড-১৯ নিয়ে ৩টি পৃথক তবে সংযুক্ত প্রশ্ন রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা যতোদূর নিশ্চিতভাবে জানি তা হচ্ছে যে, শিশুরা এই ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়। এন্টিবডি পরীক্ষা হতে দেখা গেছে যে, বয়স্কদের তুলনায় তাদের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা অনেক কম, বিশেষ করে ১২ বছরের কম বয়সীদের ক্ষেত্রে এটি বেশি প্রয়োগযোগ্য।
বিজ্ঞানীরা এই বিষয়েও বেশ আত্মবিশ্বাসী হয়েছেন যে, বয়স্কদের তুলনায় শিশুদের সংক্রমণ মৃদু হয়ে থাকে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক ব্রিটিশ গবেষণায় দেখা যায়, এই ভাইরাসটি শিশুদের গুরুতরভাবে অসুস্থ করে তুলতে পারে না। অনেকের মধ্যে কোনো উপসর্গও দেখা যায় না। অন্য কোনো জটিল রোগে আক্রান্ত না থাকলে ভাইরাসটিতে তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি ও নিবির পরিচর্যার প্রয়োজন খুবই সামান্য। তবে স্থূল, কৃষ্ণাঙ্গ এবং জটিল রোগে আক্রান্ত শিশুদের ক্ষেত্রে হালকা ঝুঁকি রয়েছে।
ভাইনার আরও বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ার গবেষণাটি শিশু এবং কোভিড-১৯ নিয়ে তৃতীয় প্রশ্নটি উঠে এসেছে। এ প্রশ্নের উত্তর আমাদের কমই জানা।
গবেষণাটি অনুসারে দেখা যায়, ২২ হাসপাতালের ওই ৯১ শিশুদের অনেকের মধ্যেই খুব মৃদু এবং অল্প উপসর্গ দেখা গেছে বা কোনো রকম উপসর্গই দেখা যায়নি। তবে শনাক্তের তিন সপ্তাহ পরও তাদের নাকের ভেতর ভাইরাসটির উপস্থিতি পাওয়া যায়। এটা বেশ উদ্বেগের একটি বিষয়।
এই গবেষণার গবেষকরা বলেছেন, তিন সপ্তাহ পরও তাদের নাকের ভেতর ভাইরাস ধরা পড়ার মানেই হচ্ছে, তাদের মাধ্যমে অন্যরা সংক্রমিতও হতে পারে।
গবেষণাটির এক গবেষক ড. রবার্তা দে বিয়াসি জানিয়েছেন, এমনটি ভাবা অযৌক্তিক যে, ভাইরাসটির বিস্তারে শিশুদের কোনো ভূমিকা নেই।
উল্লেখ্য, দক্ষিণ কোরীয় কর্তৃপক্ষ, ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে উপসর্গ নেই এমন ব্যক্তিদেরও পরীক্ষা করেছে। তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের খুঁজে বেরও করেছে। শিশুদের ওপর গবেষণাটির জন্য যথাযথ জায়গাও সেটি। এদিকে, শিশুদের মাধ্যমে অন্যরা সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলেও এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য জানা যায়নি।
এই বিষয়ে ইউনিভার্সিটি অব লিভারপুলের শিশু স্বাস্থ্য বিষয়ক অধ্যাপক ক্যালাম সেম্পলে বলেছেন, শিশুদের শ্বাসযন্ত্রে ভাইরাসটির জেনেটিক উপকরণ পাওয়া অর্থই এই নয় যে, তারা এই ভাইরাসটি সমানভাবে ছড়িয়ে বেড়ায়। বিশেষ করে কাশি বা হাঁচির মতো উপসর্গ না থাকা ব্যক্তিদের ভাইরাসটি ছড়ানোর হার অনেক কম।
বিজ্ঞানীদের ধারণা মতে, উপসর্গহীন কিংবা মৃদু উপসর্গ নিয়ে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিরা ভাইরাসটি কম ছড়িয়ে থাকেন। বিশেষ করে কাশি নেই এমন আক্রান্তদের কাছ থেকে ভাইরাসটি খুবই কম ছড়ায়। শিশুরা সাধারণত উপসর্গহীন কিংবা মৃদু উপসর্গ নিয়েই আক্রান্ত হয়ে থাকে।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।