দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে সফটওয়্যার তৈরির ক্ষেত্র আবিষ্কার করতে চান, যা মানুষের স্পর্শ ছাড়াই চিন্তার প্রতিফলন ঘটাবে। এটিও কী সম্ভব? কানাডায় আলো ছড়ানো বাংলাদেশী কম্পিউটার বিজ্ঞানী চঞ্চল রায়ের চেহারায় রয়েছে সেই দৃঢ়তা।
বাংলাদেশী কম্পিউটার বিজ্ঞানী চঞ্চল রায় বলেছেন, জানি না কতোটুকু সফল হবো। তবে এই রকম একটি স্বপ্ন রয়েছে আমার।
বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত বিজ্ঞানী চঞ্চল রায় অধ্যাপনা করেন কানাডার ইউনিভার্সিটি অব সাসকাচোয়ানের কম্পিউটার বিজ্ঞান অনুষদে।
চঞ্চল রায়ের কাজ হলো কম্পিউটার সফটওয়্যারের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। তিনি তৈরি করেছেন সফটওয়্যারের বাগ (ত্রুটি) ও ক্লোন (অনুরূপ, তবে আসল নয়) ধরার প্রোগ্রাম নাইক্যাড। যা কম্পিউটার প্রোগ্রামার কিংবা সফটওয়্যার নির্মাতাদের কাছে বেশ জনপ্রিয়ও। ২০০৮ সালে তিনি এই প্রোগ্রাম বা টুল তৈরি করেছিলেন। নাইক্যাড এর উদ্ধৃতি দিয়েছে বিশ্বের ৫৫০টি গবেষণা প্রবন্ধ। নাইক্যাড ডাউনলোড হয়েছে ২ হাজার ৫০০ বারেরও বেশি।
এ ছাড়াও প্রোগ্রামিংয়ের সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি তৈরি করেন ক্রোকেজ নামে আরো একটি প্রোগ্রাম। প্রোগ্রামিং সমস্যা সমাধানের সবচেয়ে বড় ওয়েবসাইট হলো যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্টাক ওভারফ্লোর সাইটেও এটি প্রকাশিত হয়। এর মাধ্যমে প্রোগ্রামিং সমস্যার সহজেই সমাধান করা যায়। এগুলো নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রযুক্তি বিষয়ক জনপ্রিয় ওয়েবসাইট টেক রিপাবলিক, এসডি টাইমস, এসিএম টেক নিউজ এবং আইপ্রোগ্রাম ইনফো।
চঞ্চল রায় আরও বলেন, এক যুগের বেশি সময় ধরে মূলত সফটওয়্যার রক্ষণাবেক্ষণ এবং মূল্যায়নের ওপরেই কাজ করে যাচ্ছি। আমার মূল গবেষণার ক্ষেত্র সফটওয়্যার ক্লোন শনাক্ত এবং তা বিশ্লেষণ, বাগ প্রতিরোধ, পরীক্ষা-নীরিক্ষা, বড় পরিসরের তথ্য ব্যবস্থাপনা এবং বিশ্লেষণ ইত্যাদি। আমাদের প্রোগ্রাম প্রায় নির্ভুলভাবেই ক্লোন শনাক্ত করে সফটওয়্যার রক্ষণাবেক্ষণকে আরও গতিশীল এবং সহজ করেছে। সাম্প্রতিক সময় আমরা বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ভাষার সফটওয়্যার ক্লোন শনাক্ত করার কাজ আরও দ্রুততার সঙ্গেই বড় পরিসরে করতে সক্ষম হয়েছি, যা গবেষণায় একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে তাতে সন্দেহ নেই। এরই মধ্যে মাইক্রোসফট আমাদের টুল ব্যবহারও করছে।
তাঁর দীর্ঘ গবেষণার ওপর ভিত্তি করেই ২০১৮ সালে কম্পিউটার বিজ্ঞানে কানাডার সেরা তিন নবীন গবেষকের একজন নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। কম্পিউটার বিজ্ঞানে কানাডার সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান সিএস-ক্যান/ইনফো-ক্যান ২০১৯ সালের তাঁকে আউটস্ট্যান্ডিং ইয়ং কম্পিউটার সায়েন্স রিসার্চার পুরস্কারও দিয়েছে। ২০১৮ সালে তিনি ইউনিভার্সিটি অব সাসকাচোয়ান হতে পান নিউ রিসার্চার এবং নিউ সায়েন্টিস্ট বিজ্ঞানী পুরস্কার। ২০১৮ সালে চঞ্চল রায়ের কাজের স্বীকৃতি এসেছে ‘আইইইই’–এর দুটি সম্মেলন থেকে। সুইডেনের গোথেনবার্গে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে টেন ইয়ার মোস্ট ইনফ্লুয়েন্স পেপার (এমআইপি) পুরস্কারও। একজন গবেষকের ১০ বছরের কাজের ভিত্তিতে এই স্বীকৃতি তিনি পেয়েছেন। নাইক্যাডের জন্যই তিনি এটি পেয়েছেন। চঞ্চল রায়ের এমন অর্জনের খবর প্রকাশ পেয়েছে কানাডার গণমাধ্যমেও।
রংপুর সদরের যাদবপুর গ্রামে চঞ্চল রায়ের বেড়ে ওঠা। তাঁর বাবা ছিলেন থানা শিক্ষা কর্মকর্তা। চার ভাইয়ের মধ্যে তিনি তৃতীয়। তারপর শ্যামপুর উচ্চবিদ্যালয় হতে এসএসসি ও কারমাইকেল কলেজ হতে এইচএসসি পাস করেন। তাঁর উচ্চশিক্ষার পাঠ শুরু হয় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভর্তি হন কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং প্রকৌশল বিভাগে। স্নাতক হওয়ার পর বছর তিনেক শিক্ষকতাও করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারপর চলে যান জার্মানি। আখেন ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি হতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। তারপর তিনি পিএইচডি করেন কানাডার কুইনস বিশ্ববিদ্যালয়ে। পিএইচডি শেষ হওয়ার পূর্বেই যোগ দেন ইউনিভার্সিটি অব সাসকাচোয়ানে। তাঁর স্ত্রী বনানী রায়ও অধ্যাপনা করেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই দম্পতির দুটি মেয়ে রয়েছে।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর
অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।