দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বাতাস থেকে অল্প খরচে প্লান্ট তৈরি করে অক্সিজেন উৎপাদন করে সাড়া ফেলে দিয়েছে ঈশ্বরদী সরকারি এস এম হাই স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র তাহের মাহমুদ তারিক।
অক্সিজেন প্লান্ট সামনে, মাঝে তারিক ডানে ইউএনও এবং বামে স্কুল প্রধান
তারিকের আবিষ্কৃত প্লান্টের অক্সিজেন ল্যাবরেটরিতে টেস্টের পর বৃহৎ পরিসরে কম খরচে দেশে বিপুল পরিমাণ অক্সিজেন উৎপাদনের সম্ভাবনার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়। বিশেষ করে করোনার এই সময় অক্সিজেন যেনো সোনার হরিণ। এই সময় এমন একটি আবিষ্কার সকলকে আশান্বিত করেছে।
সম্প্রতি উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে তারিকের আবিষ্কৃত প্লান্টে কম খরচে অক্সিজেন উৎপাদনের বর্ণনা দেওয়া হয়। এই সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পি এম ইমরুল কায়েস, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সেলিম আক্তার এবং এস এমন স্কুলের অধ্যক্ষ আয়নুল ইসলামসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আবিষ্কার সম্পর্কে শিক্ষার্থী তারিক জানিয়েছে, প্রায় একবছর সময় আগে তার বাবা মৃত্যুর সময় অক্সিজেনের সমস্যায় পড়েন। তাছাড়াও করোনা ভাইরাস সংক্রমণে অক্সিজেনের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার বিষয়কে মাথায় নিয়ে কম খরচে অক্সিজেন উৎপাদনের জন্য গবেষণায় নেমে পড়েন। প্লান্ট তৈরিতে আর্থিকভাবে সহযোগিতাও দেওয়া হয়েছে।
একজন সুস্থ মানুষের শরীরে অক্সিজেন স্বাভাবিক মাত্রা হলো ৯৫-১০০%। এই মাত্রা ৯৩%-র কম হলেই সতর্ক হতে হয়। আর ৯২%-র কম হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অক্সিজেন দেওয়া হয়। যাদের অক্সিজেন লেভেল ৯০/৯১ এ নেমে এসেছিল, ইতিমধ্যেই এরকম কয়েকজনকে এই অক্সিজেন দিয়ে লেভেল ৯৮-৯৯ এ উঠাতে সমর্থ হয়েছে বলে জানিয়েছে তারিক। বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাব টেস্টেও সফলতা আসবে বলে তারিক আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সেলিম আক্তার জানিয়েছেন, তারিকের এই কাজে আমরা সকলেই উৎসাহ দিয়েছি। এখন শুধু ল্যাব টেস্ট বাকি। ল্যাব টেস্ট দেখতে হবে; প্লান্টে উৎপাদিত অক্সিজেনের মধ্যে বাতাসের অন্য কোন উপাদান রয়েছে কিনা।
তারিকের স্কুল এস এম স্কুলের অধ্যক্ষ আয়নুল ইসলাম জানিয়েছেন, তারিক অত্যন্ত মেধাবী। পিতৃহীন দরিদ্র এই শিক্ষার্থীর মেধা দেখে আমরা ষষ্ঠ শ্রেণী থেকেই তার পাশে রয়েছি। কম খরচে আবিষ্কৃত তার এই প্লান্টে উৎপাদিত অক্সিজেন ল্যাব টেস্টে অবশ্যই অনুমোদন পাবে বলে আমি আশা করছি।
সংবাদ মাধ্যমকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার পি এম ইমরুল কায়েস বলেছেন, অক্সিজেন ঘাটতি এবং এর জরুরি প্রয়োজনীয়তাকে মাথায় নিয়ে অল্প খরচে প্ল্যান্ট তৈরি করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে শিক্ষার্থী তারিক। কম খরচে প্লান্ট তৈরিতে সহযোগিতা ও আমরা তাকে উৎসাহও দিয়েছি। তারিকের অক্সিজেন ল্যাব পরীক্ষার জন্য ইতিমধ্যেই ঢাকা, পাবনা বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন বিভাগে যোগাযোগ করা হয়েছে। ল্যাব টেস্টে এই অক্সিজেন উৎরে গেলে বৃহত্তর পরিসরে প্লান্ট তৈরি করে বিপুল পরিমাণ অক্সিজেন আমাদের দেশেই কম খরচে উৎপাদন করা সম্ভব হবে। যা দেশের জন্য খুবই উপকারে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।