দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ স্কুল থেকে ফেরার পথে বাবার সঙ্গে কুলির কাজ করতেন ছোট্ট মুস্তাফা। স্কুলব্যাগ নামিয়ে পিঠে তুলে নিতেন ভারি কাঠের বাক্স। সেই ছেলে এখন ৩৪০ কোটি টাকার প্রতিষ্ঠানের মালিক!
সন্ধ্যাবেলায় পড়তে বসলেই চোখে আসতো ঘুম। ক্লাস সিক্সে ফেলও করেছিলেন আজকের এই ‘ব্রেকফাস্ট কিং’। এখন মুস্তাফার সংস্থাটি বছরে আয় করে প্রায় ৩০০ কোটি রুপি, যা বাংলাদেশী মুদ্রায় ৩৪০ কোটি টাকা
মুস্তাফা এখন একটি খাবারের সংস্থার মালিক। তার সংস্থা ভারতীয়দের প্রাতঃরাশ এবং জলখাবার— ইডলি-দোসার উপকরণ প্রস্তুত করে থাকে। শুরুর দিকে এলাকায় দিনে মাত্র ৫০ প্যাকেট উপকরণ বিক্রি করতেন তারা। এখন প্রতিদিন গোটা ভারতে কয়েক হাজার প্যাকেট সরবরাহ করে মুস্তাফার এই সংস্থাটি।
তবে কুলির ছেলে মুস্তাফার এই সাফল্য খুব সহজে আসেনি। কঠোর পরিশ্রমও ছিল। তার সঙ্গে সঠিক সুযোগ ও তাৎপর্যপূর্ণ কিছু করার ইচ্ছাও তাকে এগিয়ে যেতে এবং এই জায়গায় পৌঁছে দিতে সাহায্য করেছে বলে মনে করেন তিনি।
দেশটির বহু মানুষ তার সংস্থার তৈরি প্রাতঃরাশ দিয়ে দিন শুরু করে থাকেন। তবে একটা সময় ছিল যখন প্রাতঃরাশ তো দূরের কথা, দিনের এক বেলাও খাবার জুটতো না মুস্তাফার। এমনও হয়েছে যে, অভুক্ত অবস্থাতেই রাতে ঘুমিয়েছেন পরিবারের প্রত্যেকেই!
মুস্তাফার বাবা কফির বাগানে কুলির কাজ করতেন। তার মা ছিলেন নিরক্ষর। তাই পড়াশোনার পাশাপাশি পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্য বাবাকে সাহায্য করতে হতো মুস্তাফাকে। কফির বাগানে বাবার সঙ্গে কুলির কাজও করতেন তিনি। যদি তাতে কিছু টাকা হাতে আসে এই উদ্দেশ্যেই কাজ করতেন।
মুস্তাফা জানিয়েছেন, কোনও বাবা-মাই চাইবেন না তাদের সন্তান পড়াশোনা ছেড়ে কুলির কাজ করুক। তবে তার পরিবারের অন্য কোনও বিকল্পও ছিল না। টিকে থাকার জন্য অন্য কোনও উপায় ছিল না তাদের সামনে।
ক্লাস সিক্সে ফেল করার পর মুস্তাফার মনে হলো এভাবে পড়াশোনার আর ক্ষতি করা যাবে না। প্রয়োজনে তাকে আরও পরিশ্রম করতে হবে। কঠোর পরিশ্রমেই আসবে সাফল্য। পাঁচ বছর পর ক্লাস টেনের বোর্ডের পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করলেন মুস্তাফা।
পড়াশোনার পাশাপাশি তখনও চলছে বেঁচে থাকার সেই লড়াই। তবে ক্লাস টেনের সাফল্যই অনেকটা আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছিল মুস্তাফাকে। যে কারণে আরও ভালো পড়াশোনার চেষ্টা চলতে থাকে তার। এভাবেই দ্বাদশের গণ্ডি পেরিয়ে এনআইটিতে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগও পান মুস্তাফা। চাকরি পান বহুজাতিক একটি সংস্থাতে।
উত্তরণের এই পথ এই পর্যন্তই সমান্তরাল হতে পারতো। তবে ইচ্ছে করলেই বহুজাতিক সংস্থার চাকরি, বড় অংকের বেতন নিয়ে স্থায়ী, স্বচ্ছন্দ ও নিশ্চিন্ত জীবন কাটাতে পারতেন মুস্তাফা। সত্যি বলতে কী ইউরোপ ও মধ্য প্রাচ্যের একাধিক সংস্থায় কাজ করে কিছুটা স্বচ্ছন্দ হতে শুরুও করেন তিনি। তবে কেনো যেনো কিছুতেই সন্তুষ্ট হতে পারছিলেন না মুস্তাফা।
দেশের মানুষের জন্য কিছু একটা করতে চাইছিলেন তিনি। সেই লক্ষ্য হতেই দেশে ফিরে আসেন। ২০০৫ সালে সাড়ে ৫শ’ বর্গফুট একটি অফিসে শুরু হয় তার ব্যবসার প্রথম কাজ।
শুরুতে ৫ হাজার কেজি চাল থেকে ১৫ হাজার কেজি ইডলির উপকরণ তৈরি করে মুস্তাফার সংস্থা। এখন তারা দেশের সমস্ত বড় শহরে নিয়মিত এর চার গুণ বেশি উপকরণ সরবরাহ করে থাকেন।
তারপর ১০ বছরের মধ্যে বছরে ১০০ কোটির আয় করতে শুরু করে মুস্তাফার ‘আইডি ফ্রেশ ফুড’। যা পরবর্তী বছরই বেড়ে দাঁড়ায় ১৮২ কোটিতে। এ পর্যন্ত বার্ষিক আয় কখনও নিম্নমুখী হয়নি এই সংস্থাটির। শেষ আর্থিক বছরে ২৯৪ কোটি টাকা আয় করেছে মুস্তাফার এই সংস্থা, যা আগের বছরের ২৩৮ কোটির থেকেও ২৩.৫ শতাংশ বেশি।
মুস্তাফার উত্তরণের এই কাহিনী জানতে বর্তমানে আগ্রহী অনেকেই। জাতিসংঘে বক্তব্য রাখতে আমন্ত্রণ জানানো হয় মুস্তাফাকে। বছর খানেক আগে জাতীয় স্তরের একটি সংবাদ সংস্থা দেশের প্রথম ১০ ‘সেল্ফ মেড ম্যান’-এর একটি তালিকা তৈরি করে। ‘সেল্ফ মেড’ অর্থাৎ সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় সমাজের কাছে নিজেকে উদাহরণ হিসেবে তৈরি করা একজন মানুষ হিসেবে। সেই তালিকায় জায়গা করে নেন মুস্তাফা।
তবে মুস্তাফা সবাইকে নিয়ে উন্নতির পথে যাওয়ার বিশ্বাসী। চেয়েছিলেন দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে। কর্মসংস্থান করতেও চেয়েছিলেন। মুস্তাফার সংস্থায় বর্তমানে কাজ করেন গ্রামীণ ভারতের হাজারেরও বেশি তরুণ।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।