হাসানুজ্জামান ॥ কাবুলের ঘরে ঘরে যাচ্ছে তালেবান যোদ্ধারা। আফগান সরকারের সময়ের সাংবাদিকদের খোঁজ খবর নিচ্ছে। তাদের না পেলে তাদের পরিবারের কাউকে না কাউকে হত্যা করছে।
এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সাংবাদিকরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু সাংবাদিক বিমানে চড়ে পালিয়ে গেছে অন্যদেশে। অনেকেই পালিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। বিদেশী সংবাদ মাধ্যমে যারা কাজ করতো তাদের প্রতি তালেবানদের ক্ষোভটা বেশি। দেশের সংবাদ মাধ্যমে যারা কাজ করতো তাদের মধ্যে পুরুষ সাংবাদিকদের কাজে যোগদানের সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু নারী সাংবাদিকদের সেই সূযোগ দেয়নি। ১৫ই আগষ্ঠ তালেবান যোদ্ধারা কাবুলে প্রবেশ করার পর সংবাদ মাধ্যম দুইদিন বন্ধ ছিল। এই সময় তারা উদ্বেগ,উৎকন্ঠায় দিন কাটিয়েছে। তালেবানদের শাসন কেমন হবে? তারা কি সেই ১৯৯৬-২০০১ সালের শাসনে ফিরে যাবে কিনা? সেই সময় বার বছরের বেশি মেয়েদের স্কুলে যাওয়া নিষিদ্ধ ছিল। চাকুরিতো অনেক পরের কথা। কোন পুরুষ অভিভাবক ছাড়া মেয়েদের বাইরে যাওয়ার অনুমতি ছিল না। কিন্তু কাবুল দখলের পর তালেবানরা সাংবাদিক সম্মেলন করে ঘোষণা দিয়েছিল তারা ১৯৯৬- ২০০১ সালের শাসনের দিকে ফিরে যাবে না। তারা প্রতিশ্রæতি দিয়েছিল মেয়েরা স্কুল.কলেজে পড়তে যেতে পারবে। নির্ভাবনায় চাকুরি করতে পারবে। বোরকা পরিধান না করলেও চলবে তবে মাথায় হিজাব পড়লেই হবে। আফগান সরকার আমলের রাজ-কর্মচারিদের সাধারণ ক্ষমা করে দিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হবে না। এমন বক্তব্যে কাবুলের টলো নিউজের নারী সাংবাদিকরা কর্মস্থলে ফিরে আসে। নারীরা কাবুল শহরের নিউজ লাউভ প্রচার করতে শুরু করে। দাবী জানাতে গিয়ে বেশ কয়েকজন নারী রাজধানী কাবুলের রাস্তায় প্লাকার্ড হাতে নিয়ে তালেবান যোদ্ধাদের সামনে সাহস করে দাঁড়িয়েছিল।
কিন্তু পরবর্তীতে তালেবানরা তাদের বক্তব্য থেকে পিছিয়ে আসে। তারা এখন বিদেশী সরকারের দোভাষীদের বাড়ী বাড়ী গিয়ে খোঁজছে। আফগান সরকারের একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে নির্মমভাবে হত্যার দৃশ্য ছড়িয়ে পড়ায় নাগরিকদের মাঝে ভীতি বেড়ে গেছে। বাড়ী বাড়ী গিয়ে তাদের আত্মীয় স্বজনদের ধরে নিয়ে হত্যা করছে। শহরের মেয়েদের দিয়ে রান্না করিয়ে নিচ্ছে তারা। কোন নারীর রান্না খারাপ হলে তাকে হত্যা করে প্রতিশোধ নিচ্ছে। আতংকিত ও উৎকন্ঠিত অনেক পরিবারে গিয়ে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাচ্ছে তালেবান যোদ্ধারা। পাত্রী হিসাবে দশ থেকে পনের বছরের মেয়েদেরই তাদের বেশি পছন্দের। কোন মেয়ের পরিবার আপত্তি জানালে জোরপূর্বক তাদের তুলে নিয়ে এসে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে বাধ্য করছে । কাবুল শহরে এমন ঘটনা এখন ছড়াছড়ি। জালালাবাদের একটি ব্যাংক থেকে সারাদিনের কাজ শেষে বাড়ী অভিমুখি দু’জন নারী কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে তালেবান যোদ্ধারা। শহরের একটি শিশু পার্কে কিছু ভাস্কর্য রয়েছে। তালেবান যোদ্ধারা সেখানে গিয়ে ভাস্কর্য দেখে রাগান্বিত হয়ে ওঠে। পরে মনের জানালা মেটাতে পার্কটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। একে একে সকল ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলে। এই অবস্থায় শহরের অনেক মানুষ আর নিজেদের নিরাপদ মনে করছে না। বাসায় বাসায় যোদ্ধারা হানা দিচ্ছে তাতে আতংকিত হয়ে পড়েছে সাধারণ শান্তিপ্রিয় মানুষ। এই অবস্থায় অনেক মানুষই রয়েছে যারা দেশ ছেড়ে অন্য দেশে চলে যাওয়াটা নিরাপদ মনে করছে। সেই উদ্দেশ্যে বিমান বন্দরে মানুষের ঢল নামে। প্রথমের দিকে তালেবানরা তাদের কোন বাঁধা সৃষ্টি করেনি। কিন্তু এখন তারা নতুন ভাবে বাঁধা সৃষ্ঠি করা শুরু করেছে। গেল ১৯ আগষ্ট বিমানবন্দরগামী বেশ কিছু জনতাকে গ্রেফতার করে অন্য জায়গায় নিয়ে যায়। এ ঘটনা নিমিষেই সাংবাদিকদের কানে পৌঁছে। তাদের মাধ্যমেই ঘটনাটি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।
বিশ্বের মোড়ল রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে আমেরিকা এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তারা তালেবানের রাজনৈতিক সদরদপ্তর কাতারের রাজধানী দোহা’র সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি আশু সুরাহার তাগিদ দেয়। তালেবানরা অতিদ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে গ্রেফতারকৃত সাধারণ মানুষকে মুক্তি দেয়। এদিকে ভারতীয় দূতাবাসে গিয়ে তালেবান যোদ্ধারা হামলা করেছে। সেখানে গিয়ে তারা দুতাবাসের কাগজ পত্র পুড়িয়ে দিয়েছে। তবে তালেবানরা সেখানে পৌঁছার আগেই দুতাবাসের কর্মচারিরা ভয়ে সটকে পড়ে।
তালেবানরা আবার কি ১৯৯৬-২০০১ সালের শাসনের দিকে ফিরে যাচ্ছে? এমন প্রশ্নই উঠে এসেছে বিশ্বনেতৃবৃন্দের মুখ থেকে।কাতারের রাজধানী দোহা’য় অনুষ্ঠিত বিশ্বের নেতৃবৃন্দের সাথে তালেবানদের যে শান্তি চুক্তি হয়েছিল সেই চুক্তি এখন অসাড় প্রমাণিত হয়েছে। ফলে বিশ্বের রাষ্ট্রগুলো তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়া থেকে পিছিয়ে এসেছে।
যুক্তরাজ্য ইতোমধ্যে তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। রাশিয়া,চীন, পাকিস্তান, তুরস্ক যে আগ্রহ দেখিয়েছিল সেই আগ্রহে ভাটা পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রতো তালেবানের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ ফেরত দিতে অস্বীকার করেছে।
এদিকে হাক্কানি নেটওয়ার্ককে রাজধানী কাবুলের নিরাপত্তার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। মোস্টওয়ান্টেড সিরাজউদ্দিন হাক্কানির নেতৃত্বে দুই দশক আগে পাকিস্তান সীমান্তবর্তী পাহাড়ী এলাকায় সুইসাইড গ্রুপের এই হাক্কানি নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠে। এই গ্রুপটি মোল্লা ওমরের নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল এবং তালেবানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। হাক্কানি নেটওয়ার্কের সাথে ওসামা বিন লাদেনের আল কায়দা’র গোপন সম্পর্ক আছে বলে জনশ্রুতি রয়েছে।
ফলে হাক্কানি নেটওয়ার্ককে মেনে নেওয়া যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাবিশে^র পক্ষে বেশ কষ্টের। তালেবান সরকারের অতিদ্রুত ক্ষমতায় আসার পিছনে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশের ভ’মিকা রয়েছে। কিন্তু তালেবান তাদের স্বার্থ বিবেচনায় নিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। এই অবস্থায় তারা কি বিশ্ব রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একলা পথে চলার নীতি অবলম্বন করতে যাচ্ছে?
# লেখক: গবেষক ও প্রাবন্ধিক।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের কাপড়ের মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।