দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আমির মোহাম্মদ খান আফ্রিদি নামে পাকিস্তানের এক ব্যবসায়ী তার গোঁফ বাঁচানোর জন্য পরিবার এমনকি দেশ ছাড়তেও রাজি আছেন এমন কথা বলেছেন!
পাকিস্তানের ৪৮ বছর বয়সী এক ব্যবসায়ীকে অপহরণ করা হয়েছে। জঙ্গিদের কাছ থেকে বেশ কয়েকবার হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে এবং নিজ পরিবার থেকে দূরে একরকম নির্বাসনেও থাকতে হচ্ছে। আর এ সবগুলো ঘটনার কারণ কিন্তু একটাই। ৭৬ সেন্টিমিটার বা ৩০ ইঞ্চি দীর্ঘ গোঁফের কারণে তাকে এতোকিছু মুখ বুজে সহ্য করতে হয়েছে। ৭৬ সেন্টিমিটারের পুরোটাই একেবারে নিখুঁতভাবে ছাঁটা। প্রিয় গোঁফের পরিচর্যায় আফ্রিদি প্রতিদিন ৩০ মিনিট সময় ব্যয় করেন।
পেশোয়ারের বাসিন্দা আফ্রিদি বলেন, মানুষ আমাকে অনেক সম্মান করে। এটা আমার পরিচয়। গোঁফের কারণে তিনি কেন সব ছাড়তে প্রস্তুত ছিলেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, নিজেকে আমি বেশ তৃপ্ত ও সুখী মনে করি। যখন গোঁফটি একটু ফিকে হয়ে যায়, তখন কেও আমার দিকে ফিরেও চায় না। আফ্রিদি বলেন, আমি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম। আর সেটা আমি ভীষণ উপভোগ করি। ৩০ ইঞ্চি দীর্ঘ গোঁফটি এর আগে জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-ইসলামের সদস্যদের ক্রোধের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তালেবানের সহযোগী এ সংগঠনটির সদস্যরা ইসলামী রীতির বিরুদ্ধে হওয়ায় তাকে গোঁফটি ছেঁটে ফেলতে বলেছিল। শেভ না করলেও তাকে অবশ্যই মুড়িয়ে ফেলতে হবে গোঁফটি। প্রথমে রক্ষাপণ হিসেবে তার কাছ থেকে প্রতি মাসে ৫০০ ডলার দাবি করেছিল সংগঠনটি। আফ্রিদি সেটা দিতে অস্বীকার করায় ২০০৯ সালে তার বাড়িতে ৪ বন্দুকধারী হানা দেয়। এরপর তাকে অপহরণ করে ১ মাস আটকে রেখেছিল জঙ্গি সংগঠনটি। গোঁফটি কেটে ফেলার পরই তাকে ছেড়ে দিয়েছিল তারা।
আফ্রিদি বলছিলেন, তারা আমাকে মেরে ফেলতে পারে বলে শঙ্কিত ছিলাম। আর তাই গোঁফটিকে বলি দিতে বাধ্য হলাম আমি। এ ঘটনার পর পালিয়ে পেশোয়ারে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেন আফ্রিদি। ২০১২ সালে যখন আবার তার গোঁফ বড় হলো, নতুন করে হুমকি আসতে শুরু করলো। তাই তিনি উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ছেড়ে ফয়সালাবাদে গেলেন। পরিবার থেকে দূরে অনেকটা নির্বাসন জীবনযাপনই বেছে নিলেন। মাসে এক বা দুই বার পরিবারকে দেখতে যান।
আফ্রিদি বলেন, আমি এখনও শঙ্কিত। পেশোয়ারে পরিবারের সঙ্গে রমজান মাসটা কাটাতে এসেছি আমি। কিন্তু বেশির ভাগ সময় আমি বাসায় থাকি। অবশ্য, তার স্ত্রী ও ১০ সন্তান গোঁফ নিয়ে খুব একটা আপত্তি করে না। কিন্তু, মাঝে মধ্যে তারা গোঁফ কাটার অনুরোধ করেন। আফ্রিদি বলেন, মাঝে মধ্যে আমার পরিবারের সদস্যরা গোঁফ কাটতে বলে। একসঙ্গে থাকার জন্য তাদের এ মিনতি শুনতে গিয়ে প্রিয় গোঁফ কাটতে নারাজ আফ্রিদি। আফ্রিদির কথায়, আমি পরিবার ছাড়তে পারি, পাকিস্তান ছাড়তে পারি কিন্তু আমার গোঁফ কাটতে পারবো না। তার স্বপ্ন গোঁফের জন্য কোন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় খোঁজা। কিংবা যদি কোনভাবে ভিসা পাওয়া যায়, বিদেশী কোন টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করা।
আফ্রিদি আরও জানান, আমি আমার পরিবারকে বিদেশে পাঠানোর চেষ্টা করছি। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, বৃটেন বা এমনকি দুবাইয়ে। কিন্তু আমার রাজনৈতিক আশ্রয় প্রয়োজন। তথ্যসূত্র: অনলাইন