দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ করোনা মহামারি রোধে টিকার পাশাপাশি এবার আশা জাগিয়েছে মুখে খাওয়ার বড়ি। বাংলাদেশসহ ১০৫টি দেশ সস্তায় করোনার বড়ি পাবে।
জানা গেছে, জাতিসংঘের সংস্থা মেডিসিনস পেটেন্ট পুলের (এমপিপি) এক চুক্তির মাধ্যমে মার্কিন ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান মার্কের এই করোনা বড়ি ‘মলনুপিরাভির’সাশ্রয়ী মূল্যে সরবরাহ করা হবে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্তত ১০৫টি দেশে। যে কারণে উচ্চমূল্যের এই বড়ি পাওয়া নিয়ে শঙ্কা কেটেছে নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের এই দেশগুলোর।
গত বৃহস্পতিবার নতুন চুক্তির বিষয়টি সামনে নিয়ে আসে এমপিপি। চুক্তি অনুযায়ী আগামী মাসেই এই বড়ি সরবরাহ শুরু হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন এমপিপির জনৈক মুখপাত্র। ওষুধগুলো সরবরাহ করা হবে ভারত, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, নাইজেরিয়া, বাংলাদেশ, ইথিওপিয়া, ফিলিপাইন, মিসরসহ মোট ১০৫টি দেশে।
ইতিপূর্বে গত অক্টোবর মাসে এক চুক্তিতে এমপিপিকে এই বড়ি উৎপাদনের আনুষ্ঠানিক অনুমতি দেয় মার্ক। তারপর নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোর হাতে ওষুধটি তুলে দিতে ওই চুক্তির আওতায় বিশ্বের ২৭টি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নতুন চুক্তি করে এমপিপি।
এমপিপির চুক্তির তথ্যমতে, বিশ্বের ২৭টি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫টি মলনুপিরাভিরের কাঁচামাল উৎপাদনের বিষয়টি দেখভাল করবে। ১৩টি প্রতিষ্ঠান কাঁচামাল তৈরির পাশাপাশি মার্কের ওই করোনার বড়িটি উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। বাকি ৯টি প্রতিষ্ঠানের কাজই হবে ওষুধটি যথাযথভাবে উৎপাদন করা। এই বড়ি উৎপাদন করার জন্য বাংলাদেশ, চীন, মিসর, জর্ডান, ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, কেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ কোরিয়া এবঙ ভিয়েতনাম থেকে ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বেছে নেওয়া হয়েছে।
মার্কের তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, করোনায় আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় ৫ দিনে এক কোর্স মলনুপিরাভির বড়ি (৪০টি) গ্রহণ করতে হয়। মার্কের সঙ্গে করা এমপিপির চুক্তি অনুযায়ী দেখা যায়, কম দামে মলনুপিরাভির উৎপাদনে কোনো রয়্যালটি নেবে না মার্ক। যে কারণে দরিদ্র দেশগুলোর বাসিন্দারা কমবেশি ২০ মার্কিন ডলার খরচ করলে এক কোর্স বড়ি পাবেন বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির একজন কর্মকর্তা। সম্প্রতি করোনা চিকিৎসায় মলনুপিরাভিরের অনুমোদন দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যার মধ্যেই মার্কের কাছ থেকে ১৭ লাখ কোর্স বড়ি কিনতে রাজি হয় দেশটি। মার্কিন সরকারের কাছে মার্ক প্রতি কোর্স বড়ির দাম ধরবে ৭০০ মার্কিন ডলার।
অপরদিকে মার্কের মতোই করোনা চিকিৎসায় প্যাক্সলোভিড নামে মুখে খাওয়া আরও একটি বড়ি এনেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরেক বহুজাতিক ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ফাইজার। ফাইজারের করোনা টিকাও বর্তমানে বাজারে রয়েছে। গত ডিসেম্বরে মার্কের মলনুপিরাভিরের সঙ্গে প্যাক্সলোভিডের অনুমোদন দেয় মার্কিন নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ)।
গবেষণায় দেখা যায়, ফাইজারের প্যাক্সলোভিড এবং মার্কের মলনুপিরাভি বড়ি ভাইরাস পুনরুৎপাদনের সক্ষমতা কমিয়ে দেয় ও একপর্যায়ে ভাইরাসের শক্তিও ধীরে ধীরে হ্রাস পায়। মলনুপিরাভি বড়ি ঝুঁকিতে থাকা করোনা রোগীর মৃত্যুঝুঁকি ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে মার্কের চেয়ে ফাইজারের বড়ি কার্যকারিতার দিক দিয়ে এগিয়ে। করোনায় আক্রান্ত হওয়া উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা রোগীদের মৃত্যুঝুঁকি বা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার হার প্রায় ৯০ শতাংশ কমিয়ে দিতে পারে ফাইজারের এই প্যাক্সলোভিড।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকার চেষ্টা করি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের কাপড়ের মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।