দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বৃদ্ধ-বৃদ্ধার মুখে শোনা গল্প নিয়েই বিখ্যাত ‘গ্রিম্স ফেয়ারি টেল্স’, যা আজও শিশুদের মনকে রঙিন করে তোলে-এমনই রূপকথার দেশের গল্প আজকের এই কাহিনীতে।
গল্পের কাহিনীটা ঠিক এমন, উইলহেল্ম ও জেকব দুই গ্রিম ভাই। জার্মানির এমন সব বাড়িতে ওরা ঘুরে বেড়াতেন, যেখানে সত্তর-আশি বছরের বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা থাকেন। সে বহুকাল আগের কথা। এসব বৃদ্ধ-বৃদ্ধার মুখে শোনা গল্প নিয়েই বিখ্যাত ‘গ্রিম্স ফেয়ারি টেল্স’, যা আজও শিশুদের মনকে রঙিন করে তোলে।
শুধু শিশুরাই নয়, বড়রাও সেই আনন্দে ভাগ বসান। গ্রিম ভাইরা তুলির ছোঁয়ায় বইয়ের পাতায় সাজিয়েছিলেন পরীর রাজ্যকে। আর সেই রাজ্যকে জীবন্ত রূপে পাওয়া যায় মারশেন ওয়াল্ডে। জার্মানির কোলন শহরের পাশে, পাহাড়ে ঘেরা সে এক স্বপ্নময় রাজ্য! জার্মান ভাষায় ‘মারশেন’ নামে ‘ফেয়ারি’ বা ‘পরী’। আর ‘ওয়াল্ড’-এর মানে ‘উড্স’ বা ‘বন্য আবরণ’। এককথায় মারশেন ওয়াল্ড মানে ‘বনের আড়ালে পরীর রাজ্য’। নামটার মধ্যেই কেমন যেন একটা রোমাঞ্চ লুকিয়ে আছে। আর থাকবে না-ই বা কেন! পৃথিবীবিখ্যাত জার্মান রূপকথাগুলোর অধিকাংশই তো জঙ্গলকে ভিত্তি করে।
পাহাড় আর জঙ্গলে ঘেরা সে এক রহস্যময় রাজ্য। তার মধ্যে আড়াল করা পুরনো দুর্গের ছোট্ট ঘুলঘুলির জানলার ধারে দাঁড়িয়ে রয়েছে সুন্দরী। রাজকন্যা। উদাস দৃষ্টি, চোখের কোণে জল। বন্দিনী সে রয়েছে সেই অদেখা রাজপুত্রের প্রতীক্ষায়, যে তাকে সেই পিশাচী ডাইনির হাত থেকে মুক্ত করে নিয়ে যাবে। কোলন থেকে বাসে-ট্রামে চড়ে প্রায় ঘণ্টাখানেকের যাত্রায় পৌঁছে যাওয়া যায় মারশেন ওয়াল্ডে। প্রথমেই পড়বে একটি চার্চ এবং তাকে ঘিরে বড় বড় রেস্তোরাঁ, এক জমজমাট পরিবেশ। সেটা পেরিয়ে পায়ে পায়ে এগোলেই খোলা প্রান্তর, চারণভূমি। সেখান থেকেই উঠে গিয়েছে মারশেন ওয়াল্ডের পাহাড়। সে পাহাড় এমনই সবুজ দিয়ে ঢাকা যে, বাইরে থেকে পরীর রাজ্যের আভাসটুকুও মেলে না। নিচু ঢালের কাটা পথ ধরে উঠতে হয়। পাইড পাইপারের বাঁশি শুনতে শুনতে টিকিট কেটে পর্যটকরা ঢুকে যান এক অকল্পনীয় স্বপ্নরাজ্যে।
মারশেন ওয়াল্ডের ব্যবস্থাও ভীষণ সুন্দর। গাছের ছায়া ঢাকা চওড়া পিচরাস্তার পাশে হ্যানসেল অ্যান্ড গ্রেটেল, হোয়াইট, স্লিপিং বিউটি, সিন্ডারেলাদের এক-একটা করে কটেজ সাজানো রয়েছে। প্রমাণ সাইজের কটেজ। দরজা-জানালাগুলো কাচের শার্সি দিয়ে ঢাকা। ছুটির দিনগুলোতে ছোটদের দল ও তাদের অভিভাবকরা হুমড়ি খেয়ে পড়েন এক-একটা কটেজের ওপর। কটেজের ভেতরটা প্রমাণ মাপের রাজপুত্র, রাজকন্যা, ডাইনি, জীবজন্তু ও পুরনো দিনের আসবাব দিয়ে সাজানো। প্রতিটি কটেজে রূপকথার গল্প চলছে শ্রুতিনাটকের কায়দায়, আর তার সঙ্গে হাত-পা নাড়ছে নিখুঁত, সুন্দর পুতুলগুলো। কাহিনী কিন্তু এখানেই শেষ নয়- আরও আছে।
রূপকথার প্রতিটি ঘর এমন সুন্দর করে সাজানো যে, চোখ সরানো যায় না। তবু এগোতে হয়। অনেক দেখা বাকি যে! পুরো পরিবেশটাই রোমাঞ্চকর। জঙ্গলের চারপাশ থেকে নানারকম আওয়াজ, দূরে পুকুরের ধারে হাঁস, মানুষ। কোনটা যে সত্যি আর কোনটা কল্পনা, ঠাহর করা কঠিন।
হঠাৎ থমকে দাঁড়ান পর্যটকরা। পিঠের কাছে কী যেন একটা সুড়সুড় করছে। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখেন, পাশের লম্বা কটেজ থেকে রাপুঞ্জেল তার সোনালি চুলের বিনুনি নামিয়ে দিচ্ছে নিচে।
কিন্তু রাজপুত্রকে না পেয়ে কথা বলতে বলতে আবার বিনুনিটা তুলে নিচ্ছে। ‘মিউজিশিয়ানস অফ ব্রেমেন’-এর দরজায় গেলে দেখা যাবে, সেখানে ভয়ংকর চেঁচামেচি চলছে। গাধার পিঠে কুকুর, তার পিঠে বিড়াল, তার পিঠে মোরগ দাঁড়িয়ে যৌথকণ্ঠে তারস্বরে চেঁচিয়ে গান শোনাচ্ছে! আর সেই ঘরের টেবিলে তিনটে ডাকাত বসে সামনে রাখা প্রচুর খাবার ফেলে রেখে আতংকিত চোখে চেয়ে আছে তাদের দিকে। ও দেশের মানুষ বেজায় রসিক। রূপকথা আজ আর শুধু কল্পনা নয়। মারশেন ওয়াল্ডকে ঘিরে এক অপরূপ রূপকথার বাস্তব জগৎ বানিয়ে রেখেছে জার্মানি। যা দেখে যে কেও অবিভূত হবে। তথ্যসূত্র: দৈনিক যুগান্তর