ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আমরা সবাই জানি বরিশাল ইলিশের শহর। বরিশালের মাছ সারাদেশে সরবরাহ হয়ে থাকে। দেশের সবপ্রান্তের মানুষ বরিশালের ইলিশ মাছ খেয়ে অভ্যস্ত। কিন্তু এবার ১লা বৈশাখে মানুষ হাট-বাজারে ইলিশের অভাব এমনভাবে অনুভব করছেন যে, চারিদিকে যেনো হাহাকার পড়ে গেছে।
টিভির নিউজে দেখা যাচ্ছে, একজন এক হালি অর্থাৎ ৪টি ইলিশ মাছ কিনছেন ১৯ হাজার টাকা দিয়ে! আমাদের বাপ-দাদারা বেঁচে থাকলে হয়তো এমন খবর দেখে মুর্ছা যেতেন। এমনই সব বেসামাল খবর এবার শোনা যাচ্ছে রেডিও-টিভি ও পত্রিকার খবরে। শুনেছি কলকাতা শহরের মানুষ নাকি ইলিশের জন্য হায় হায় করে। এবার আমাদের দেশেও ঠিক এমনি অবস্থা বিরাজ করছে। বাংলা নববর্ষে বাঙালিরা ইলিশ পান্থা খাওয়ার জন্য পাগল হয়ে যান। কিন্তু এবার বাঙালিরা সেই ইলিশ কিনতে গিয়ে এবার দিশেহারা।
এবার ইলিশের বদলে চাপিলা!
আকৃতিতে খুব একটা বড় নয়, দৈর্ঘ্যেও ছোট। গায়ের রঙ রূপালি। স্বাদে-গন্ধে যেন ছোটখাটো ইলিশ। বিক্রির সময় ইলিশের বাচ্চা বলে দাম হাঁকে দোকানি। তবে এগুলো ইলিশ নয়। স্থানীয়ভাবে এর নাম চাপিলা। দক্ষিণের নদী আর সমুদ্র মোহনায় পাওয়া যায় প্রচুর। দামেও বেশ সস্তা। ইলিশের চরম সংকট আর আগুনছোঁয়া দামের মুখে এই চাপিলাই এখন ভরসা দোরগোড়ায় দাঁড়ানো বাংলা নববর্ষে। তাই মাছের রাজার দখল নিতে ব্যর্থ বহু মানুষ এখন কিনছে রূপালি চাপিলা। পান্তা-ইলিশের পরিবর্তে পান্তা-চাপিলার আয়োজনও চলছে অনেক জায়গায়। মাছে-ভাতে বাঙালির খেতাব ধরে রাখতে কষ্ট সহ্য করে যারা এখনও প্রতিদিন কিছু না কিছু মাছ কেনেন তাদের কাছে চাপিলা কোন অপরিচিত মাছ নয়। প্রথম দর্শনে হঠাৎ মনে হবে ছোট সাইজের জাটকা। দোভাজি কিংবা রান্না করে খেলেও মোটামুটি ইলিশের স্বাদ। বরিশালের বাজারে গত কয়েকদিন ধরে প্রতি কেজি চাপিলা মাছ বিক্রি হয়েছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। ক্রেতারাও কিনছেন প্রচুর।
নগরীর পোর্ট রোড বাজারের মৎস্য ব্যবসায়ী আলীম ব্যাপারী বলেন, ‘বাজারে ইলিশের সংকট চলছে। মোকামে মাছ নেই বললেই চলে। এ অবস্থায় বাধ্য হয়েই চাপিলার দিকে ঝুঁকছে মানুষ।’ বরিশাল মৎস্য আড়তদার মালিক সমিতির নেতা এবং হিলশা ফিশ এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি ইউসুফ সিকদার বলেন, ‘মোকামে ইলিশ নেই। অবশ্য এখন থাকারও কথা নয়। কারণ প্রকৃতিতে চলছে ইলিশের খরা মৌসুম। নদী-সাগরে ইলিশ না থাকার পাশাপাশি আজ পহেলা বৈশাখ। বাঙালির পান্তা-ইলিশের উৎসব। ফলে যৎসামান্য যা ইলিশ আসছে তারও এখন অগ্নিমূল্য। গত দুদিন মোকামে দেড় কেজির উপরের সাইজের ইলিশের দাম ছিল প্রতি মণ এক লাখ ৬৫ হাজার টাকা। এই হিসেবে এক কেজি ইলিশের দাম পড়ে চার হাজার টাকারও বেশি। একেবারে ছোট সাইজের একটি ইলিশও ৭০০-৮০০ টাকার কমে কেনা যাচ্ছে না। চরম সংকট আর এ রকম আকাশছোঁয়া দামের কারণেই হয়তো বৈশাখ সামলাতে চাপিলার দিকে ঝুঁকতে শুর্ব করেছে মানুষ।’ বরিশালের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন চয়নিকার সাধারণ সম্পাদক রাসেল চৌধুরী বলেন, ‘প্রতিবার বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে পান্তা-ইলিশের আয়োজন করতাম আমরা। এবারও চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছি। সংকট আর মাত্রাতিরিক্ত দামের কারণে ইলিশ কিনতে পারিনি। বর্তমান পরিস্থিতিতে চাপিলা দিয়ে পান্তা খাওয়ার প্রস্তুতি চলছে। ইতিমধ্যে চাপিলা কেনাও হয়েছে। কারণ যে হারে চাপিলা চলছে তাতে হঠাৎ দাম বেড়ে যাওয়া অসম্ভব কিছু নয়।’ কেবল চয়নিকাই নয়, আরও অনেক সংগঠন প্রতিষ্ঠানে চলছে পান্তা-চাপিলার আয়োজন। বাংলা বাজারের মাছ বিক্রেতা কালাম মোলৱা বলেন, ‘বড় সাইজের এক কেজি চাপিলাতে পাওয়া যায় প্রায় ১৮-২০ পিস মাছ। ২-৩ পিসে খাওয়া হয়ে যায় একজন মানুষের। সেই হিসাবে ৬-৭ জনের একটি সংসারে এক কেজি মাছে হয়ে যায় এক বেলা। সাশ্রয়ী এসব দিক আর ইলিশের চরম সংকটের কারণেই বিক্রি বেড়েছে চাপিলার। এই দিয়ে বাংলা নববর্ষও সামাল দিচ্ছেন অনেকে।’ তবে শেষ পর্যন্ত যে চাপিলা থাকবে তাও এখন অনিশ্চিত। একদিকে হঠাৎ চাহিদা বাড়ায় দেখা দিতে শুর্ব করেছে চাপিলার সংকট, অন্যদিকে বাড়তে শুর্ব করেছে এই মাছের দাম। মাত্র ক’দিন আগেও ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে চাপিলা। চাহিদার কারণে এখন তাও দাম প্রতি কেজি ১২০ টাকা। যে হারে দাম বাড়ছে তাতে আজ-কালের মধ্যে দাম গিয়ে দাঁড়াতে পারে ২০০ টাকা কেজি। সেক্ষেত্রে হয়তো দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো থেকেও বঞ্চিত হবে ইলিশের শহর বরিশালের মানুষদের।