দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ গোটা ইউরোপ এবং চীনের কিছু অংশে এবারের গ্রীষ্মে তাপমাত্রার সর্বোচ্চ রেকর্ড করছে। খরার কারণে আফ্রিকায় লাখ লাখ মানুষ খাদ্য ঝুঁকিতে পড়েছে। তাহলে ২০২২ সাল কী ইতিহাসের সবচেয়ে শুষ্ক বছর হতে চলেছে?
আমেরিকার পশ্চিমাঞ্চলে বৃষ্টি হচ্ছেই না বললে চলে। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এবার উষ্ণ এবং শুষ্ক ঋতু রেকর্ডও করতে পারে। তবে গত কয়েক মাস কী রেকর্ড পরিমাণে শুষ্ক আবহাওয়া ছিল? বা পৃথিবী আসলে কতোটা শুষ্ক? এইসব বিষয় নিয়ে এক ধরনের উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। বিজ্ঞানীদের খরা পরিস্থিতির একটি পরিমাপ মাটির আর্দ্রতার স্তরের উপরেই ভিত্তি করে করা হয়। আবার স্যাটেলাইটের মাধ্যমেও খরার চিত্র ফুটে উঠে।
সম্প্রতি আবহাওয়ার ধরণ কতোটা চরম হয়েছে তার একটি চিত্র তৈরি করতে গত ৩ মাসের এই শুষ্ক অবস্থাকে এই শতাব্দীর শুরু থেকে গড় অবস্থার সঙ্গেও তুলনা করা হয়েছে। যেখানে মাটির অবস্থা এবং তাপমাত্রার তথ্য-উপাত্ত উভয়ের ওপর ভিত্তি করেই মাটির আর্দ্রতার অসঙ্গতি তথ্য তুলে ধরা হয়। সেখানে দেখা যাচ্ছে যে, বেশিরভাগ ইউরোপ এই গ্রীষ্মে ২০০১ সাল থেকে ২০১৬ সালের এই সময় গড় আবহাওয়ার তুলনায় অনেক বেশি শুষ্ক ছিল। অন্যদিকে, চীনের পশ্চিমে আবহাওয়া খুবই শুষ্ক হয়েছে, অনেক অঞ্চল আবার চরম খরার সম্মুখীনও হয়েছে। সাব-সাহারান আফ্রিকা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু অংশেও এমন শুষ্ক অবস্থা বিরাজমান ছিল। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিবেশবিষয়ক কর্মসূচির তথ্য অনুযায়ী দেখা যায়, ইউরোপে ৫০০ বছরে খরার সর্বোচ্চ রেকর্ড হয়েছে এ বছর। আগস্টের শেষের দিকে ইউরোপের প্রায় অর্ধেকেই চরম শুষ্কতা দেখা দেয়।
বিজ্ঞানীরা বলেছেন জলবায়ু পরিবর্তন অর্থই ইউরোপ আরও ঘন ঘন এবং ক্রমাগত খরার মুখে পড়তে থাকবে। এই বছরের শুষ্ক পরিস্থিতি ইতিমধ্যে কৃষি, পরিবহন এবং জ্বালানি উৎপাদনকে ব্যাহত করছে। রাইন, একটি প্রধান নদী এবং কার্গো রুট। এবারের গ্রীষ্মে নদীটির পানি একেবারে নিম্নস্তরে নেমে গেছে, যে কারণে শিপিং কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে। গত জুন থেকে আগস্টের মধ্যে সময়কাল ছিল রেকর্ডের দিক দিয়ে সর্বোচ্চ উষ্ণতম।
চীনেও খরা ও বন্যা দুই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি করে এবার। এই গ্রীষ্মে, চীনে উচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড হয়। এমন পরিস্থিতি দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে স্থায়ী হয়। ৬০-র দশকে রেকর্ড শুরু হওয়ার পর হতেও এটির স্থায়ীত্ব বেশি বলছে, চীনের আবহাওয়াবিষয়ক প্রশাসন। চরম তাপমাত্রা এবং বৃষ্টিপাতের অভাবে চীনের বৃহত্তম নদী ইয়াংজি সংকুচিত হয়েছে। চীনের সরকারি তথ্য অনুযায়ী দেখা যায়, আগস্ট মাসে নদী সংলগ্ন এলাকায় ৬০ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়। দক্ষিণ চীনের বিশাল এলাকা খরার সঙ্গে লড়াই করলেও, উত্তরাঞ্চলে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যা দেখা দিয়েছে। উত্তর চীনের লিয়াও নদী ১৯৬১ সাল হতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেকর্ড করেছে পানি নিচে নামার দিক থেকে।
ইউএস ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস-এর পানি বিশেষজ্ঞ পিটার গ্লিক বলেছেন,‘সাইবেরিয়া এবং পশ্চিম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো যখন খরার অঞ্চল বৃদ্ধি পায়, তখন সেই পানি একটি ছোট এলাকায় অন্যত্র পড়ে, বন্যার মতো অবস্থাও সৃষ্টি করে’। তাই আফ্রিকায় দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে। পূর্ব ইথিওপিয়া, উত্তর কেনিয়া এবং সোমালিয়ায় খরা পরিস্থিতির কারণে জাতিসংঘ সতর্ক করেছে, প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ খাদ্য ঝুঁকিতে পড়তে পারেন।
২০২১ সালে বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, সামগ্রিকভাবে ‘১৯৭০-৭৯ সালের তুলনায়, খরা এবং বন্যার সংখ্যা ২০১০-১৯ সালের মধ্যে যথাক্রমে প্রায় ৩ গুণ ও ১০ গুণ বেড়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে খরা পরিস্থিতিও প্রকট আকার ধারণ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমে খরা পরিস্থিতি যেনো স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অঞ্চলে বছরের পর বছর শুষ্ক এবং উত্তপ্ত আবহাওয়া বিরাজ করছে।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিজ্ঞানীরা বলেন আমেরিকার পশ্চিমে গত দুই দশকে ১২শ বছরের মধ্যে সবচেয়ে চরম খরা পরিস্থিতি দেখা যায়। এই গ্রীষ্মে, গরম ও শুষ্ক আবহাওয়র কারণে বেশ কয়েকটি রাজ্যে বনে আগুন লেগেছে ও পানি সঞ্চয়ের মাত্রাও কমে গেছে। নাসার তথ্য বলছে যে, লেক পাওয়েল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম জলাধার যা অ্যারিজোনা এবং উটাহকে ঘিরে রয়েছে। এটি ৬০ এর দশকের পর থেকে সর্বনিম্ন স্তরে গিয়ে ঠেকেছে। জলবায়ু মডেলগুলো আভাস দিয়েছে যে, আগামী দশকগুলোতেও এই অঞ্চলে গড় হিসাব থেকে অনেক কম বৃষ্টিপাত হতে পারে।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকার চেষ্টা করি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের কাপড়ের মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।