দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ পৃথিবীর এক বৃহত্তম ও ভয়ংকর গুহা এই হ্যাংসন ডুং। সাহসী পর্যটকদের জন্য এটি উপযুক্তও বটে।
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে হাজারও পাহাড় পর্বতে ঢাকা নানা ধরনের গুহা। আদিম যুগে মানুষ এসব গুহায় বসবাস করত। এজন্য আমরা তাদের গুহাবাসী বলি। সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এ গুহাগুলো কোনোটা আকারে বড়। কোনোটা ছোট আবার কোনোটা বিরাট বড়। বিশ্বের সবচেয়ে বড় গুহাটির নাম হ্যাংসন ডুং। এটিকে আবার বিশ্বের সবচেয়ে বড় গুহা নেটওয়ার্ক বলা হয়ে থাকে।
হ্যাংসন ডুং কোথায়
ভিয়েতনামের কোং বিন প্রদেশের বো টাচ জেলায় এই গুহা নেটওয়ার্কের অবস্থান। ১৯৯১ সালে গুহাটি আবিষ্কৃত হয়। গুহাটি প্রথম আবিষ্কার করেন সেখানের স্থানীয় এক ব্যক্তি, যার নাম হো-খানহ। ব্রিটিশ গুহা গবেষণা সংগঠনের প্রধান হাওয়ার্ড ও ডেভ লেমবার্ট ১০-১৪ এপ্রিল ২০০৯ সালে বিশ্বের বৃহত্তম এই গুহা নেটওয়ার্কের আয়তন ও প্রশস্ততা পরিমাপ করতে সমীক্ষা শুরু করেন। কিন্তু তাদের পর্যবেক্ষণ একটি বড় ক্যালসাইট পাঁচিলের কারণে থেমে যায়। এ গুহার সবচেয়ে বড় কক্ষটির পরিমাপ ২০০ মিটার উচ্চ এবং ১৫০ মিটার চওড়া, যা মোট ৫.৬ কিলোমিটার।
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গুহা এটি
হ্যাংসন ডুং গুহাটি আবিষ্কারের ফলে পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ গুহা হিসেবে মালয়েশিয়ার ডির গুহার স্থান দখল করে নেয়। ভিয়েতনামের জাতীয় উদ্যান ফুং না কিং ব্যাংয়ের পাশেই হ্যাংসন ডুংয়ের অবস্থান। রহস্যময় গুহাটি প্রায় ১৫০টি গুহার সমন্বয়ে গঠিত। মজার ব্যাপার হল গবেষক দল গুহাটির আয়তন পরিমাপ করতে পারলেও এর শেষ খুঁজে বের করতে পারেননি। ২০০৯ সালে হাওয়ার্ড, রিমটি ফুং না কি ব্যাং ন্যাশনাল পার্ক থেকে এই গুহা আবিষ্কারের কাজ শুরু করেন।
কেনো গুহাটি বিপদজ্জনক
লিমবিট ও তার গবেষণা দল গুহা আবিষ্কারের সময় সম্মুখীন হন নানা বিপদ-আপদের। তারা গুহার মধ্যে পান বিষধর সাপ, বড় মাকড়সা, অদ্ভুত সব প্রাণী ও অজানা-অচেনা বৃক্ষরাজি। তারা গুহার মধ্যে দেখতে পান ছোট ছোট পানির ফোয়ারা। গুহার মধ্যে রয়েছে অনেক সুড়ঙ্গপথ, যেসব পথ দিয়ে অতি সহজেই ভিয়েতনামের এক প্রদেশ থেকে অন্য প্রদেশে যাতায়াত করা যায়। গুহার মধ্যে পানির ফোয়ারা ছাড়াও রয়েছে একাধিক জঙ্গল। দূর থেকে দেখতে হ্যাংসন ডুংকে দোতলা বাসের মতো মনে হয়। যে কারণে হ্যাংসন ডুং অতি আকর্ষণীয় গুহা হিসেবে বিবেচিত। প্রথম দিকে এ গুহা এলাকার দিকে স্থানীয় লোকজন আসতে ভয় পেত, কারণ তারা এই গুহার তলদেশের নদী থেকে উচ্চস্বরে শব্দ শুনতে পেত। গুহাটি আবিষ্কারের পর এখনও এটি সাধারণ জনগণের জন্য উন্মুক্ত নয়। কারণ এই গুহাটি অত্যন্ত ভয়ানক। এখানে পৃথিবীর অন্যতম মারাত্মক সব জীবজন্তু ও পোকামাকড়ের আবাস।
একটি ব্যতিক্রমি গুহা
হ্যাংসন ডুং গুহার ভেতরটা আলাদা একটি জগত। যে সব ফটোগ্রাফার এ গুহার অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছিলেন তারা জানিয়েছেন, গুহার ভেতরে থাকাকালে ভেবেছিলেন তারা পৃথিবী থেকে আলাদা কোনো স্থানে চলে এসেছেন। জার্মানির বিশিষ্ট ফটোগ্রাফার ক্যারিস্টেন ২০১০ সালে ছবি তোলার জন্য এ গুহার অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন। তিনি গুহা থেকে বাইরে এসে বলেন, তিনি সেখানে দুই সপ্তাহ অবস্থান করেন, এ সময়ে তিনি সেখানে ঘুমানোর সময় স্লিপিং ব্যাগে ঘুমাতেন, তিনি সর্বদা ছবি তোলায় ব্যস্ত থাকতেন এবং ভাবতেন তিনি পৃথিবী থেকে আলাদা কোনো স্থানে চলে এসেছেন।
এভাবে যারা ওই গুহার ভেতরে গেছেন তারা নানা ধরনের অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন। তবে সবার বক্তব্যেই দুটি বিষয় এক ছিল তা হলো, এই গুহাটি একটি বৃহত্তম এবং ভয়ংকর গুহা। হয়তো গবেষকরা আরও গবেষণা করলে এর প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারবেন। তখন সাধারণ পর্যটকরা সেখানে যেতে পারবেন। স্বচোক্ষে দেখতে পারবেন বিশ্বের সবচেয়ে বৃহত্তম ও ভয়ংকর এই গুহাটি। তথ্যসূত্র: অনলাইন।