দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আধাসিদ্ধ কিংবা কম আঁচে রান্না করা মাংস, মাছ এবং সবজি থেকে ছড়াতে পারে এই জাতীয় সংক্রমণ এবং সেইসঙ্গে জোর দিতে হবে পরিচ্ছন্নতায়।
ফিতাকৃমির সংক্রমণ বিরল নয়। চিকিৎসক অরিজিৎ রায়চৌধুরীর ভাষায়, “বহু মানুষের দেহেই দেখা যায় এই ধরনের পরজীবী সংক্রমণটি। অনেকের ক্ষেত্রে কোনও সমস্যারই সৃষ্টি হয় না। অনেকেরই আবার গুরুতর সমস্যা দেখা দেয়, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে এমনটি দেখা যায়।”
কীভাবে হয় ফিতাকৃমি সংক্রমণ?
আধাসিদ্ধ কিংবা কম আঁচে রান্না করা মাংস, মাছ এবং সবজিতে যদি ফিতাকৃমির ডিম থাকে, তাহলে তা মানুষের দেহে প্রবেশও করতে পারে। সেইসঙ্গে অপরিশোধিত পানি থেকেও হতে পারে এই সংক্রমণটি। মাঠে বা ঘাসজমিতে পড়ে থাকা মলে কৃমির ডিম থাকে। সেই ঘাস খায় গবাদিপশু, যে কারণে ওই ডিম তাদের শরীরেও প্রবেশ করে। লার্ভা হয়ে ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন মাংসপেশিতেও। সেই মাংস ভালো করে ধুয়ে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রান্না করে না খেলে সমস্যা! একইভাবে কৃমির ডিম স্বাদু পানির মাছের শরীরেও ছড়িয়ে পড়ে। পূর্ণবয়স্ক ফিতাকৃমি হোস্ট কিংবা ধারক ছাড়া বাঁচতে পারে না, তবে ডিম কিংবা লার্ভাও বেঁচে থাকতে পারে।
ডা. রায়চৌধুরী জানালেন, “পূর্ণবয়স্ক কৃমি যদি কোনওভাবে মানুষের দেহে প্রবেশ করে তাহলে বিশেষ সমস্যাও সৃষ্টি হয় না। মানুষের ক্ষুদ্রান্ত্রে এমনিতেই অনেক সময় কৃমি পাওয়া যায়। তবে সমস্যা হয় যখন কৃমির ডিম কিংবা লার্ভা মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। তখন সেটি শুধু ক্ষুদ্রান্ত্রে সীমাবদ্ধ থাকে না। টিসু স্প্রেডের মাধ্যমে পেশি, চোখ এবং মস্তিষ্কেও পৌঁছে যায়।”
ক্ষুদ্রান্ত্রে ফিতাকৃমির সংক্রমণ বা টিনিয়াসিস
মানুষের ক্ষুদ্রান্ত্রের দেওয়ালে পরিণত ফিতাকৃমি মূলত চোষকের সাহায্যে আটকে থাকে। খাবার হজম হওয়ার সময় সেখান থেকে সেটি পুষ্টি গ্রহণ করে। অনেক সময়ই এই ক্ষেত্রে ধারক মানুষ কিছু অনুভব করেন না। তবে কখনও কখনও অপুষ্টি, হঠাৎ করে ওজন কমে যাওয়ার মতো সমস্যা, অসম্ভব ক্লান্তি, বমি এবং ডায়রিয়াও হতে পারে এই ধরনের সংক্রমণ থেকে। কোনও কোনও ফিতাকৃমি ৩০ বছর পর্যন্ত থেকে যেতে পারে এবং ৩০ ফুট পর্যন্ত হতে পারে তাদের দৈর্ঘ্য!
সিস্টিসার্কোসিস
ফিতাকৃমির ডিম কিংবা লার্ভা যদি শরীরের অন্য অংশে পৌঁছে যায় তখন তাকে বলা হয় সিস্টিসার্কোসিস। এই সংক্রমণের কারণে দেহের যে যে অংশে লার্ভা পৌঁছায় সেখানে সিস্ট হয়। ফুসফুস, যকৃতে সিস্ট হলে সেগুলো ক্রমশ বড় হয়ে অঙ্গগুলোর কার্যক্ষমতা হ্রাস করতে শুরু করে। আবার পেশিতেও হতে পারে এই সিস্ট।
চিকিৎসা
মূলত অ্যান্টি প্যারাসাইটিক এবং অ্যান্টি কনভালশন ড্রাগ দিয়ে এর চিকিৎসা করা হয়। তবে আক্রান্ত হওয়ার বহু পরে উপসর্গ দেখা দিলে তখন মূলত অ্যান্টি কনভালশন ড্রাগ দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন চলতে পারে এই চিকিৎসাটি, নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org