দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শরীরের জন্য ফল যেমন ভালো আবার বাদামও তেমনি ভালো। তবে দিনের শুরুটা আসলে কোনটি দিয়ে হওয়া উচিত? এই বিষয়ে কী বলছেন পুষ্টিবিদরা?
দিনের শুরুটাই হওয়া দরকার পুষ্টিকর খাবার দিয়ে। তাতে যেনো প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, ফাইবার, ভিটামিন- সবই থাকে একেবারে নির্দিষ্ট মাত্রায়, বলেছেন পুষ্টিবিদরা। তাদের পরামর্শ হলো, সকালের খাবারটি বাদ না দেওয়ার। কারণ, রাতে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমোনোর পর সকালের খাবার শরীরকে আরও শক্তি জোগায়। তাই পানি তো বটেই, এই সময় ফল, বাদাম সবটাই মাপমতো রাখার পরামর্শও দেওয়া হয়ে থাকে।
তাহলে কোনটি দিনের শুরুতে খাবেন?
শরীরের জন্য ফলও ভালো আবার বাদামও ভালো। তবে দিনের শুরুটা আসলে কোনটি দিয়ে হওয়া উচিত? পুষ্টিবিদ শ্বেতা পাঞ্চাল বলেছেন, ফল ও বাদামে দু’টিই উপকারী হলেও, শরীরে তাদের প্রভাব পৃথক। এই বিষয়ে পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তী বলেছেন যে, ‘‘দুটিই খাওয়া যায়। আখরোট, কাঠবাদাম পানিতে ভিজিয়ে রেখে সুস্থ যে কোনও মানুষ খেতেই পারেন। তবে কিডনি কিংবা লিভারের সমস্যা থাকলে বাদাম খালি পেটে খাওয়া মোটেও ঠিক নয়। খেলেও খাবারের সঙ্গে খেতে হবে। ফলের ক্ষেত্রে লেবু অর্থাৎ সাইট্রাস জাতীয় ফল খালিপেটে না খাওয়াই উচিত। অনেকের গ্যাসের ধাত থাকলে খালি পেটে এগুলো সহ্য না-ও হতে পারে। অপরদিকে, আপেল, কলা খালি পেটেও খাওয়া যায়।
সাধারণ কাঠবাদাম, আখরোট, পেস্তা ইত্যাদি ড্রাই ফ্রুটসে থাকে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট। পুষ্টিবিদরা বলেছেন, ওজন কমাতে চাইলে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট খাবারের তালিকায় রাখাটা জরুরি। বাদামে ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টও থাকে। সকালের খাবারের তালিকায় কয়েকটি বাদাম রাখলে সেটি শরীরকে শক্তি জোগাবে। রক্ত শর্করার মাত্রাও তখন ঠিক থাকবে।
পুষ্টিবিদের পরামর্শ, খালি পেটে ফল না খেয়ে তার সঙ্গে কয়েকটি বাদাম খেলে শরীর যেমন দ্রুত শক্তি পাবে, তেমনি রক্তে শর্করার মাত্রাও ঠিক থাকবে।
স্বাস্থ্যকর ফ্যাট কোন কোন খাবারে পাবেন?
স্বাস্থ্যকর ফ্যাট জাতীয় প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় জোড়ার পরামর্শ দিয়েছেন পুষ্টিবিদরা। তবে কতোটা খেতে হবে? এই বিষয়ে পুষ্টিবিদ পূজা ভার্গব বলেছেন, একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মানুষের ডায়েটে সাধারণ মাঝারি পরিমাণ স্বাস্থ্যকর ফ্যাট রাখলেই পেট ভরা থাকবে। আর খিদে না থাকলে, উল্টোপাল্টা কিংবা অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রবণতাও কমবে। যা মূলত ওজন বৃদ্ধির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সেইসঙ্গে, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট বিপাকহার বাড়াতে সাহায্য করে।
ঘি
অনেকেই ওজন বেড়ে যাওয়ার ভয়ে ঘি ছুঁয়েও দেখেন না। তবে পুষ্টিবিদরা বলেছেন, এই ঘি’তে থাকে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, ওমেগা সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিডও। যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। তবে ঘি খাওয়ারও মাত্রা থাকতে হবে, অতিরিক্ত পরিমাণ খাওয়া যাবে না।
আখরোট
আখরোটে থাকে পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, আলফা-লিওলেনিক অ্যাসিড যেগুলো শরীরের জন্য খুবই উপকারী। মেদ ঝরাতেও এগুলোর ভূমিকা রয়েছে।
নারকেল
নারকেলেও থাকে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট। বিপাকহার বৃদ্ধিতে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতেও সাহায্য করে এতে থাকা উপকরণ। ভিটামিন, আয়রণ, কপার, ম্যাঙ্গানিজ়ে সমৃদ্ধ নারকেল পাতে এক থেকে দু’টুকরো রাখলেই যথেষ্ট। তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org