দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বর্তমানে কোভিড না হলেও তেমনই সব লক্ষণ দেখা দিচ্ছে অনেকের মধ্যে। শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাদের কম থাকে কিংবা অন্যান্য অসুখবিসুখ রয়েছে, তারা আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শিশু এবং বয়স্কেরাই রয়েছেন সেই তালিকাতে।

সাধারণত শীত এলেই দূষণের মাত্রা আরও বাড়ে। সেইসঙ্গে বিভিন্ন ভাইরাস-ব্যাক্টেরিয়াও সক্রিয় হয়ে ওঠে এই সময়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সংক্রমণের কারণে সাধারণ সর্দিকাশি, শ্বাসের সমস্যাও দেখা দিচ্ছে অনেকের মধ্যে। হাঁপানি এবং সিওপিডির সমস্যাও আগের থেকে বেড়েছে। কোভিড না হলেও তেমনই সব লক্ষণ দেখা দিচ্ছে অনেকের মধ্যে। শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাদের কম কিংবা অন্যান্য অসুখবিসুখ রয়েছে, তারা আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি। আর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শিশু এবং বয়স্কেরাই রয়েছেন সেই তালিকাতে। তাই এই সময়টিতে বাড়ির প্রবীণ সদস্যদের বিশেষ খেয়াল রাখাটাও জরুরি।
জনস্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসক অনির্বাণ দলুইয়ের কথায়, “বয়সকালে এমনিতেই উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হন অনেকেই। ওই সমস্ত কো মর্বিডিটির কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কম থাকে। তাই জীবাণুঘটিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশিই থাকে। অনেক সময় সিওপিডিতে আক্রান্ত বয়স্করা নিউমোনিয়া নিয়ে ভর্তি হচ্ছেন। আবার ইনফ্লুয়েঞ্জার উপসর্গও দেখা দিচ্ছে অনেকের মধ্যে। এতে শারীরিক অবস্থা মারাত্মক জায়গায় গিয়ে পৌঁছাচ্ছে।”
কোভিডের পর হতে শ্বাসজনিত নানা রোগের প্রকোপ বাড়ছে। চিকিৎসক জানিয়েছেন, করোনায় আক্রান্ত হয়ে কিংবা প্রতিষেধক নিয়ে শরীরে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, তার কার্যকারিতা বর্তমানে প্রায় চলেই গিয়েছে। তবে কমবয়সিরা সংক্রমিত হলেও তাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রতিহত করতে পারে, যেটি বয়স্কদের পক্ষে কিন্তু একেবারেই সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়াও জ্বর, সর্দিকাশি হলে কেওই তেমন বিধি মানছেনই না। কোভিডের সময় মাস্ক পরার যে অভ্যাস হয়েছিল, তা এখন নেই। যে কারণে বাতাসের দূষিত কণা যেমন নাসারন্ধ্র কিংবা মুখ দিয়ে ঢুকে শ্বাসনালিতে প্রদাহ তৈরি করছে- ঠিক তেমনই নানা ভাইরাস এবং ব্যাক্টেরিয়াও সহজেই শরীরে ঢুকে সংখ্যায় বাডাচ্ছে।
তাহলে কী কী নিয়ম মানতে হবে?
# বয়স্করা ওষুধপত্র সময়মতো খাচ্ছেন কি-না দেখুন। প্রয়োজনে তাদের ওষুধের ডোজ় বাড়া-কমা নিয়ে চিকিৎসকের সঙ্গেও কথা বলতে হবে।
# হার্টের রোগ, ডায়াবেটিস, কিডনির অসুখ কিংবা অন্যান্য রোগ থাকলে সময়ান্তরে তার চেকআপও করাতে হবে। সাবধানে থাকতে হলে নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রতিষেধক নিয়ে রাখাই ভালো।
# রাস্তায় বের হলে মাস্ক পরতে হবে। হাত ভালো করে ধোয়া এবং স্যানিটাইজ় করাটা জরুরি।
# হাঁপানি কিংবা শ্বাসকষ্ট থাকলে হাতের কাছে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র এবং ইনহেলার রাখুন। কোনও ক্রনিক অসুখ থাকলে তার চিকিৎসা কিন্তু বন্ধ করা যাবে না।
# গরম পানিতে গোসল করতে হবে বয়স্কদের। তাদের খাবারে আদা-দারচিনি কিংবা হলুদের মতো মশলা- যার মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রয়েছে- সেই সব ব্যবহার করুন। আদা, গোলমরিচ, লবঙ্গ, দারচিনি, কাঁচা হলুদ ফুটিয়ে পানীয় তৈরি করে লেবু মিশিয়ে চায়ের মতো করে খাওয়াতে পারেন।
# বাড়ির বয়স্ক সদস্যের নিয়মিতভাবে শারীরিক পরীক্ষা করানো উচিত, প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হতে পারে। রক্তচাপ, রক্তে শর্করার পরিমাণ, ট্রাইগ্লিসারাইড প্রভৃতি যেনো সঠিক মাত্রায় থাকে, সেদিকে নজর দিতে হবে। তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org