দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ইংল্যান্ডের বিখ্যাত মেডিক্যাল জার্নাল দ্য ল্যানসেট-এ প্রকাশিত এক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, কুকুরের (বা কুকুর জাতীয় প্রাণী, যেমন- শেয়াল, নেকড়ে ইত্যাদি) আঁচড় কিংবা কামড়ে যদি গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়, তাহলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই প্রতিষেধক নিতে হবে।

কুকুর কিংবা শেয়াল জাতীয় প্রাণীর আঁচড়ানো বা কামড়ানোর পর অনেকেই কিন্তু ভ্যাকসিন নেন না। এই বদাভ্যাসের কারণে প্রাণঘাতী ব়্যাবিসের কবলে ওপড়েন তারা। তাই চিকিৎসকদের পরামর্শ হলো, কুকুর, বেড়াল, ছুঁচো কিংবা শেয়াল জাতীয় প্রাণীর আঁচড় কিংবা কামড় খেলে অবিলম্বে অ্যান্টি ব়্যাবিস ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে হবে। সেই ক্ষেত্রে একটিমাত্র প্রতিষেধক নিয়ে বসে থাকলেই চলবে না। ভ্যাকসিনের গোটা কোর্সই সম্পূর্ণ করতে হবে। ইংল্যান্ডের বিখ্যাত মেডিক্যাল জার্নাল দ্য ল্যানসেট-এ প্রকাশিত গবেষণার তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, কুকুরের (বা কুকুর জাতীয় প্রাণী, যেমন শেয়াল, নেকড়ে ইত্যাদি) আঁচড় কিংবা কামড়ে যদি গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়, তাহলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই প্রতিষেধক নিতে হবে। তবেই ব়্যাবিসের ভাইরাসের হতে রেহাই পাওয়া যাবে।
জলাতঙ্কের আতঙ্ক
গবেষণাপত্র অনুযায়ী জানা যায়, প্রতি বছর ৫ হাজারেরও বেশি মানুষ জলাতঙ্ক রোগে মারা যান। তাদের মধ্যে অনেকের আবার জলাতঙ্কের টিকা নেওয়া সত্ত্বেও শরীরে জীবাণু সংক্রমণ ঘটে থাকে। বিশেষ করে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অত্যন্ত কম। শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা আরও বেশি দেখা দেয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ব়্যাবিস ভাইরাস খুব দ্রুত দেহকোষের মধ্যে বিভাজিত হয়ে বংশবিস্তারও করতে পারে। অথচ টিকা নেওয়ার পর অ্যান্টিবডি তৈরি অত্যন্ত ধীর গতিতে হয়ে থাকে। ৭-১০ দিন পর অ্যান্টিবডি তৈরি হতে শুরু করার পূর্বেই ভাইরাস অনেক সময় সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।
আরও প্রতিষেধক
গবেষকদের দাবি, জলাতঙ্ককে প্রতিরোধ করতে জলাতঙ্কের টিকার পাশাপাশি ব়্যাবিস ইমিউনোগ্লোবিউলিন (আরআইজি) নামে আরেকটি প্রতিষেধকও নিতে হবে। এই প্রতিষেধকটিও তৈরি হয়েছে কৃত্রিম অ্যান্টিবডি দিয়েই। এই ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অ্যান্টিবডি রক্তে মিশে যায় ও ভাইরাসগুলোকে ধ্বংস করতে শুরু করে। জলাতঙ্কের টিকার সঙ্গে ব়্যাবিস ইমিউনোগ্লোবিউলিন প্রতিষেধক নেওয়ার কারণে শরীরে দ্বিস্তরীয় সুরক্ষাবলয় তৈরি হয়। যে কারণে প্রাণ সংশয়ের ঝুঁকিও তখন থাকে না।
ভ্যাকসিনের সম্পূর্ণ কোর্স
বিশ্বের বৃহত্তম ভ্যাকসিন পরিষেবা ইমিউনাইজ় ইন্ডিয়ার পরামর্শ হলো, কুকুর, বিড়াল বা যে কোনও স্তন্যপায়ী প্রাণী কামড়ানোর দিন প্রথম টিকা নিতে হবে। এই টিকাকেই বলা হয় জ়িরো ডে ভ্যাকসিনেশন। তারপর যথাক্রমে ৩, ৭, ১৪ ও ৩০ দিনের মাথায় ভ্যাকসিন নেওয়াটা জরুরি। এটিই হলো ব়্যাবিসের টিকার সূচি। এই নিয়ম মেনে টিকা নিলে প্রায় ১০০ ভাগ ক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধ করে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা সম্ভব হবে। তথ্যসূত্র: এই সময়।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org