ঢাকা টাইমস্ রিপোর্ট ॥ নিত্যপণ্যের ঋণপত্র (এলসি) খোলার হার কমে গেছে বলে সংবাদ পাওয়া গেছে। যে কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ কমে গিয়ে দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে যেতে পারে বলে অর্থনীতিবিদরা আশংকা ব্যক্ত করেছেন।
ব্যবসায়ীদের একটি সূত্র জানিয়েছে, সামপ্রতিক সময় নিত্যপণ্যের ঋণপত্র (এলসি) খোলার হার কমিয়ে দিয়েছে আমদানিকারকরা। এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে আসছে রমজান মাসে। ওই সময় স্থানীয় বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ কমে যেতে পারে। এর ফলে দাম বাড়তে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এজন্য ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, ডাল, পেঁয়াজ ও খেজুরসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে ব্যবসায়ীদের উৎসাহী করতে চায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পৃথক চিঠিতে ভোজ্যতেল এবং শিপব্রেকিং শিল্পের আমদানি পর্যায়ে বিদ্যমান ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) প্রত্যাহার, নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ব্যাংক ঋণের সুদের হার আগের মতো ১২ শতাংশে নামিয়ে আনার অনুরোধ রয়েছে। ভোজ্যতেল এবং শিপব্রেকিং শিল্পের ওপর ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর বা এআইটি প্রত্যাহারের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় ও শিল্প মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে সুপারিশ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্তে ৩০ এপ্রিল এ চিঠি দেয়া হয়।
দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদার প্রায় পুরোটাই আমদানির ওপর নির্ভরশীল। ভোজ্যতেলের আমদানি পর্যায়ে বর্তমানে ৫ শতাংশ অ্যাডভান্স ইনকাম ট্যাক্স বা এআইটি রয়েছে। এর ফলে আমদানি ব্যয় বেড়ে গিয়ে অভ্যন্তরীণ বাজারে এর মূল্য বৃদ্ধি ঘটছে। ২৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ৩২তম বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা এবং ভোজ্যতেলের আমদানি পর্যায়ে বিদ্যমান ৫ শতাংশ এআইটি প্রত্যাহারের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয়া হয়। সেই নির্দেশনা মোতাবেক ভোজ্যতেলের আমদানি ব্যয় কমিয়ে অভ্যন্তরীণ বাজারে এর সরবরাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ পণ্যের ওপর আমদানি পর্যায়ে কর প্রত্যাহারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে সুপারিশ প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়া শিপব্রেকিং একটি শ্রমঘন শিল্প এবং উদীয়মান ও দ্রুত সম্প্রসারণশীল সম্ভাবনাময় শিল্প হওয়ায় এ খাতে প্রচুর বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ৩২তম বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার পর এ শিল্পের ওপর থেকেও আমদানি পর্যায়ে বিদ্যামান ৫ শতাংশ এআইটি প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়। সংসদীয় কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে শিপব্রেকিং শিল্পের বিকাশের মাধ্যমে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে এ শিল্পের ওপর আমদানি পর্যায়ে বিদ্যামান অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহারের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে শিল্প মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে ২৬ এপ্রিল পাঠানো আরেক চিঠিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, টিসিবি অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাউন্টার গ্যারান্টির বিপরীতে এলটিআর নিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির এলসি খোলে। এসব এলটিআর-এর সর্বোচ্চ সুদহার ছিল ১২ শতাংশ এবং এলসি কমিশন ছিল দশমিক ০৪ শতাংশ। এখন ব্যাংকগুলো এলটিআর-এর ক্ষেত্রে ১৪ থেকে ১৬ শতাংশ সুদারোপ করছে। এতে টিসিবির আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। বাজারেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশংকা রয়েছে। তাই টিসিবির এলটিআর-এর সর্বোচ্চ সুদহার আগের মতো ১২ শতাংশ বহাল রাখার অনুরোধ জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এর আগে ১২ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে পাঠানো অপর এক চিঠিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির জন্য ব্যাংক ঋণের সুদের হার ১২ শতাংশে নামিয়ে আনার অনুরোধ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, সরকার ভোজ্যতেলের আমদানি পর্যায়ে শুল্ক কমানো, চিনি আমদানিতে সব ধরনের শুল্ক প্রত্যাহারসহ নানামুখী ব্যবস্থা নিয়েছে।
জুলাই এর ২১ তারিখ হতে পবিত্র রমজান শুরু হচ্ছে। রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিশেষ করে ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, ছোলা, পেঁয়াজ, খেঁজুর প্রভৃতির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামও বেড়ে যাওয়ার আশংকা থাকে। সে কারণে এসব পণ্যের আমদানি বাড়িয়ে দাম স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করা হয়। এযাবত এসব পণ্য আমদানিতে ব্যাংক ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ১২ শতাংশ বহাল ছিল। কিন্তু ৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমদানি পর্যায়ে ব্যাংক ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার প্রত্যাহার করার পর বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ১৫ থেকে ১৮ শতাংশ সুদারোপ করছে।