দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বাজারে চট করে ব্লুবেরি, র্যাশবেরি, স্ট্রবেরির মতো ফল পাওয়া যায় না। তবে দেশীয় বেরি জাম থাকতে আর চিন্তা কীসের! গরমকালে আম খাওয়ার চেয়েও জাম খাওয়া অনেক বেশি উপকারী।
ডায়েটেশিয়ান অনুশ্রী মিত্রর বক্তব্য হলো, ‘দাম দিয়ে ব্লুবেরি খাওয়ার চেয়ে জাম খাওয়া অনেক বেশি ভালো। ব্লুবেরির মতোই উপকারিতা পাওয়া যায় জামে।’ প্রথমত: এটি দেশীয় ফল, তাই ঘরে বসে ব্লুবেরি খাওয়ার চেয়ে জাম খেলে অনেক বেশি উপকার পাওয়া যাবে। কারণ এই ফল পুষ্টিতে ঠাসা।
জামের পরিবর্তে সারা বছর কী খাবেন?
ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে জামের জুড়ি নেই। তাই এই ঋতুতে প্রত্যেকেরই জাম খাওয়া দরকার। তবে সারা বছর এই ফলটি পাওয়া যায় না। তাহলে আপনি সুগারকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখবেন? ডায়েটেশিয়ান অনুশ্রী বলেছেন, ‘জামের পরিবর্তে সারা বছর জামের বীজ খাওয়া যায়। জামের বীজ শুকিয়ে গুঁড়ো করে নিলেই হবে।’
জামের বীজের পাউডার ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য কতোটা উপযোগী?
জামের বীজে জাম্বোলিন ও জাম্বোসিন নামক দু’টি যৌগ বিদ্যমান। অনুশ্রী বলেন, ‘এই দুই যৌগ রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে ও ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতেও সাহায্য করে।’ এ ছাড়াও জামের বীজে প্রোফাইল্যাকটিক ক্ষমতা রয়েছে। এটি হাইপারগ্লাইসেমিয়া প্রতিরোধেও সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, জামের বীজের পাউডারে ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এইসব উপাদান ডায়াবেটিসের রোগীদের সুস্থ থাকতেও সাহায্য করে।
কোন কোন রোগের ঝুঁকি কমায় জামের বীজের পাউডার?
ডায়রিয়ার চিকিৎসায় দুর্দান্ত কাজ করে এই জামের বীজের পাউডার। তবে এর গুণাগুণ এখানেই কিন্তু শেষ নয়। অনুশ্রীর ভাষায়, ‘জামের মধ্যে ভরপুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও রয়েছে। তাই এই ফলটি হার্ট, স্কিন এবং পেটের জন্য ভীষণভাবে উপকারী।’ জাম খেলে রক্তে কোলেস্টেরল মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে ও হার্টের অসুখের ঝুঁকিও কমায়।
ত্বকের সমস্যা কমিয়ে দেয় এই জাম। দাগছোপ, ব্রণ দূর করতেও সহায়ক এই ফলটি। সেইসঙ্গে বার্ধক্যকে দূরে রাখে এই জাম। অনুশ্রী আরও বলেন, ‘পেট খারাপ হলে এক চামচ জামের বীজের পাউডার পানিতে গুলে খেতে পারেন। এটি পেটের সমস্যা থেকে নিমেষেই আপনাকে মুক্তি দেবে।’
জামের বীজের পাউডার মূত্রনালি সংক্রমণ প্রতিরোধেও বিশেষভাবে সাহায্য করে। অনুশ্রীর ভাষায়, ‘যারা প্রায়শই ইউটিআই-এর সমস্যায় ভুগে থাকেন, তারা প্রত্যাহ জামের বীজের পাউডার খান।’ এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি সংক্রমণ প্রতিরোধে দুর্দান্তভাবে সাহায্য করবে।
প্রতিদিন কতোটা পরিমাণে জামের বীজের পাউডার খাওয়া দরকার?
যে কোনও খাবার বেশি খেলে বিপদ সেটি আমরা জানি। যারমধ্যে জামের বীজের পাউডার রয়েছে। তাই অনুশ্রী জানিয়েছেন যে, বেশি জামের বীজের পাউডার খাওয়া মোটেও চলবে না। ১/২ চা চামচ কিংবা ২ গ্রাম জামের বীজের পাউডার খান।
তাহলে কীভাবে জামের বীজের পাউডার খাবেন?
জামের বীজের পাউডার সব সময় খালি পেটে খেতে হবে। এতে সবচেয়ে ভালো উপকার পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন পুষ্টিবিদ। ঈষদুষ্ণ পানি, দুধ কিংবা স্যুপের সঙ্গে মিশিয়ে জামের বীজের পাউডার খেতে পারেন।
কীভাবে বাড়িতে জামের বীজের পাউডার তৈরি করবেন?
জাম খাওয়ার পর বীজগুলো ভালো করে ধুয়ে রোদে ৩/৪ দিন শুকিয়ে নিন। তারপর বীজের খোসা ছাড়িয়ে সবুজ অংশ বের করে নিন। তারপর আবার বীজগুলো রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। ২/৩ দিন পর ওই শুকনো বীজ মিক্সিতে ভালো মতো গুঁড়ো করে নিন। তৈরি হয়ে যাবে জামের বীজের পাউডার। এ ছাড়াও বাজারচলতি জামের বীজের পাউডারও ইচ্ছে করতে খেতে পারেন। তথ্যসূত্র: এই সময়।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org